মা হারানো অবুঝ দু সন্তান তাদের পিতার ফাঁসির দাবিতে রাজপথে

স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ কনস্টেবল সুমনের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। সেই সাথে সীমার মাসুম দু সন্তানও তাদের মায়ের নির্যাতনকারী পিতার ফাঁসি দাবি জানিয়েছে। সীমা হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি নিয়ে রাজপথে নামা অসংখ্য নারী ও পুরষসহ শিশু কিশোরদের হাতে ছিলো বিভিন্ন স্লোগান লেখা পোস্টার, ফেস্টুন। স্লোগান নিয়ে আন্দোলনকারীদের সরব উপস্থিতিতে সড়কও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও সিভিল সার্জানের সাথে সাক্ষাত করে মৌখিকভাবে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
ফাঁসি চাই, ৪ খুনির বিচার চাই, নারী নির্যাতন বন্ধ করুন, ফাতেমা নাসরিন সীমা হত্যার দ্রুত বিচার চাই, নারী নির্যাতন বন্ধ চাই, নির্মম হত্যার বিচার চাই ও জেলাবাসীর একদফা এক দাবি, সুমনের ফাঁসি লেখা সংবলিত প্লেকার্ড নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ কনস্টেবল সুমনের স্ত্রী সীমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে সীমার পিতৃ নিবাস জালশুকা গ্রামবাসী। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জেলা শহরে নারী-পুরুষ ও শিশুরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা শহর প্রদক্ষিণ করেন। শহীদ হাসান চত্বরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন জেলা নারী উন্নয়ন ফরমের সভানেত্রী কোহিনুর বেগম, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী জহির রায়হান, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ব্রেভ প্রকল্পের সমন্বয়নকারী নুঝাত পারভিন, জেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড এমএম শাহজাহান মুকুল, পাসের নির্বাহী পরিচালক ফুলবাড়ী পুলিশিং কমিটির সদস্য ইলিয়াস হোসেন, কাতব আলী, জালসুকার পুলিশিং কমিটির সদস্য তাহাজদ্দিন, মাতব্বর মোমিন মণ্ডল, হিরা, আশাদুল হক, ডালিয়া সুলতানা বিউটি, ফেরদৌসী বেগম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, মাদকাসক্ত সুমন ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে পরিকল্পিতভাবে সীমাকে হত্যা করে। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই তারা সীমাকে টাকার দাবিতে মারধর করতো। গত শুক্রবার রাতে সীমাকে ১ লাখ টাকার জন্য সুমন ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে বেধড়ক মারধরের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং বাঁশের আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজায়। কিন্তু সীমার শরীরের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন তার উপর হয়ে যাওয়া নির্মম অত্যাচারের প্রমাণ। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান বলে সুমনকে বিভিন্ন মহল বাঁচানোর চেষ্টা করছে। সীমা হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে বিচার ও ফাঁসি কর্যকর করা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন জালশুকা গ্রামবাসী। এছাড়া সীমার দু শিশু সন্তান মিদুল (৯) ও রাব্বি (৫) তাদের মায়ের হত্যাকারীদের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ শহীদ হাসান চত্বর ঘিরে রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে পুরো শহরজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। মানববন্ধন চলাকালে শহিদ হাসান চত্বরে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায় এবং চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়।
পরে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ করতে থাকেন। সেখানেও মানববন্ধন করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস বিক্ষোভকারীদের কাছে এসে আশস্থ করে বলেন, আমরা নারী নির্যাতন বন্ধে কাজ করে যাচ্ছি। যদি পরিকল্পিতভাবে সীমাকে হত্যা করা হয়ে থাকে তাহলে তার বিচার হবে। তিনি আরও বলেন, সীমা হত্যার সাথে পুলিশ সদস্য সুমনসহ যদি আর কেউ জড়িত থাকে তাহলে বিধি সম্মতভাবেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় শিশু দুটির আর্তনাদের কথা শুনে জেলা প্রশাসক চত্বরের সকলের চোখে পানি নেমে আসে। এরপর বিক্ষোভকারীরা সীমা হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত করে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে হত্যাকারীর বিচারের দাবি জানান।
এ সময় জেলা প্রশাসক বিষয়টি জেলা পুলিশকে অবহিত করার পরামর্শ দেন। বিক্ষোভ করতে করতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বিক্ষোভকারীদের সামনে এসে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, সুমন পুলিশ সদস্য হলেও পার পাবে না। যদি সে বা তার পরিবারের অন্য কেউ সীমাকে হত্যা করে তবে পুলিশি তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। ময়নাতদন্তে আত্মহত্যা রিপোর্ট এলে কী হবে? এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, সুরোতহাল রিপোর্টে যেহেতু সীমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাই আসামিদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণা ও আত্মহত্যায় বাধ্যকরা অভিযোগ আসতে পারে। সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে পরবর্তীতে। ময়নাতদন্তে কী রিপোর্ট আসতে পারে? ডাক্তারও ভুল রিপোর্ট দিতে পারে কি না, এ বিষয়টি কয়েকজন বলতেই বিক্ষোভকারীরা এবার বিক্ষোভ করতে করতে সিভিল সার্জন অফিসের দিকে এগোয়। বেলা দেড়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বরের সিভিল সার্জনের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এ সময় সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, ডাক্তাররা যে আলামত পেয়েছেন, সেই রিপোর্টই দেয়া হবে। এখানে পক্ষপাতের কোনো সুযোগ নেই। প্রায় আধাঘণ্টা অবস্থানের পর বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের বাসটার্মিনালপাড়ার ফজলুল হকের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল মাজেদুল হক সুমন ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে সুমনের স্ত্রী সীমাকে নির্যাতন করে। গত ১২ ডিসেম্বর রাতে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। এমন অভিযোগ এনে সীমার পিতা শহিদুল ইসলাম ঠাণ্ডু বাদী হয়ে পরদিন থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় স্বামী সুমন, শ্বশুর ফজলুল হক, ননদ সীমা খাতুন ও নোন্দাই আব্দুর রহিমকে। ওই দিনই সীমার স্বামী সুমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিহত সীমার মা হালিমা খাতুন বিক্ষোভকালে সাংবাদিকদের জানান, সীমা ৩ মাসের অন্তঃসত্বা ছিলো। সে কখনও আত্মহত্যা করতে পারে না। সীমাকে নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা শেষে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। সুমনের পরিবারের লোকজন বলেন যা হওয়ার হয়ে গেছে। যে চলে গেছে সে আর ফিরবে না। তাছাড়া আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। আমাদের কিছুই হবে না। তাছাড়া ঘটনাটি ধামা চাপা দেয়ার জন্য সুমনের পরিবারের লোকজন পুলিশকে ১ লাখ টাকা দিয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। আমরা সীমার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।