বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে টিআর কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দের ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ

চুয়াডাঙ্গার পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার পদ্মবিলা ইউনিয়নের টিআর, কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দের টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ওই কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়েছে। কোনো কাজ না করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন প্রকল্পের নামে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যে সব রাস্তার নামে প্রকল্প করা হয়েছে সে সব রাস্তায় কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগকারীরা জানান। টিআর ও কাবিটার ৫ লাখ ৮০ হাজার ও বিশেষ বরাদ্দের প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার এলাকার লোকজন এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন। তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। পদ্মবিলা ইউনিয়ন এলাকার বিভিন্ন গ্রামবাসী অভিযোগপত্রে সই করেছেন।
তারা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৭ নং পদ্মবিলা ইউনিয়নের সদর উপজেলা পরিষদ থেকে সাধারণ বরাদ্দ টিআর, কাবিটা ও বিশেষ বরাদ্দ পদ্মবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিভিন্ন রাস্তার নাম দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যে সমস্ত রাস্তায় এসব টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, সেখানে কোনো মাটি পড়েনি। এমনও প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যেখানে কোনো রাস্তাই নেই। সাধারণ টিআর বাবদ চ-িপুর কমপ্লেক্স থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত রাস্তা সংস্করণের জন্য এক লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৭০ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া ওই রাস্তায় কোনো মাটি না দিয়ে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। নিমতলা গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিকে ক্যানেলের ব্রিজ পর্যন্ত কাঁচা রাস্তায় মাটি ভরাট বরাদ্দ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই প্রকল্পে কর্মসৃজন ইজিপিপির লেবার দিয়ে মাটি ভরাট করিয়ে প্রকল্পের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন প্রকল্প সভাপতি। কাবিটা সাধারণ বরাদ্দে গোপালনগর গ্রামের পাকা রাস্তা থেকে হাবিবুরের জমি পর্যন্ত পুুনর্নিমাণ বাবদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ৪০ দিনের কর্মসূচির লেবার দিয়ে প্রকল্পের কাজ করিয়ে ওই টাকাও পকেটস্থ করেন প্রকল্প সভাপতি আলম। বুড়োপাড়া আনছারের জমি থেকে সহিদুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণের জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পের কাজও করানো হয় ৪০ দিনের কর্মসূজন কর্মসূচির ইজিপিপি লেবার দিয়ে।
অন্যদিকে বিশেষ বরাদ্দের টাকাও নয়ছয় করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পদ্মবিলা ইউপির বিভিন্ন রাস্তা দেখিয়ে প্রত্যেক প্রকল্পের নামের বিপরীতে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৮৯ টাকা ৬৪ পয়সা (২ মে. টন গমের মূল্য)। এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা ৩০টি। তাতে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৩৯ হাজারেরও বেশি। এসব প্রকল্পে কোনো কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টরা। এসব প্রকল্প কমিটির অনেক সদস্যই জানেন না কাজ বা বরাদ্দ সম্পর্কে। তাদের সই স্বাক্ষর জাল করে মাস্টাররোল সম্পন্ন করা হয়েছে। অনেক ভুয়া প্রকল্প দেখিয়েও টাকা উত্তোলন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
যেসব প্রকল্পের প্রত্যেকটির বিপরীতে ৫৭ হাজার ৯৮৯ টাকা ৬৪ পয়সা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে সেই প্রকল্পগুলো হলো- সুবদিয়া পাকা রাস্তা থেকে আলিমর জমি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা মাটি দ্বারা মেরামত, সুবিদিয়া গাজাড়ী বাড়ি থেকে শাহাদাতের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তার দুই ধারে মাটি ভরাট, সুবদিয়া রাজ্জাকের বাড়ি থেকে শাহাদাতের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তার দু ধারে মাটি ভরাট, সুবদিয়া মজিদের বাড়ি থেকে নিয়ামতের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, সুবদিয়া নুরুর বাড়ি থেকে ভারজেলের বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তার দুই ধারে মাটি ভরাট, চ-িপুর আজাদের জমি থেকে মিন্টুর জমি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তায় মাটি ভরাট, চ-িপুর আফিজ উদ্দিনের বাড়ি থেকে রাজ্জাকের জমি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা মাটি ভরাট, চ-িপুর ওয়াপদা ক্যানেল থেকে গোরস্তান পর্যন্ত কাঁচা রাস্তায় মাটি ভরাট, চ-িপুর মফিজের বাড়ি থেকে খালেকের জমি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তায় মাটি ভরাট, চ-িপুর আব্দুল লতিফের জমি থেকে ছাত্তারের দোকান পর্যন্ত কাঁচা রাস্তায় মাটি ভরাট, চ-িপুর মাহাবুবের জমি থেকে রবিউলের জমি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তায় মাটি ভরাট, গোপিনাথপুর মিলু মাস্টারের বাড়ি থেকে আমজানের জমি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, গোপিনাথপুর ওম্বাদের জমি হতে আফনের জমি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, গোপালনগর ওহিদুলের জমি থেকে রশিদুলের জমি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, বুড়াপাড়া নয়নের জমি থেকে জালালের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, বালিয়াকান্দি পিচ রাস্তা থেকে কুড়োনের জমি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, বালিয়াকান্দি ফজুলের জমি হতে বাবুলের জমি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, বালিয়াকান্দি হিমুর জমি থেকে আলাউদ্দিনের জমি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, বালিয়াকান্দি রব্বানীর জমি থেকে আলাউদ্দিনের জমি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, চ-িপুর নতুন মসজিদ থেকে আব্দুল হকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, হায়দারপুর আলমের বাড়ি থেকে মিনু জোয়ার্দ্দারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, হায়দারপুর পচা ম-লের বাড়ি থেকে ওহাবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, হায়দারপুর আজিজুরের বাড়ি থেকে কুরমানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, কুশাডাঙ্গা শহিদের বাড়ি থেকে আলফার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, নিমতলা বাচ্চুর বাড়ি থেকে আকুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, পিরোজখালী শারজেদের বাড়ি থেকে রবিউলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট, পিরোজখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাকা রাস্তা পর্যন্ত মাটি ভরাট, পিরোজখালী বিশারতের বাড়ি থেকে ক্যানেল পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট ও বুড়োপাড়ার খালেক ম-লের বাড়ি থেকে মিনারুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এলাকার লোকজন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আকারে অভিযোগ দিতে আসেন। ওই অভিযোগপত্রে বুড়োপাড়ার আবু তালেবসহ ইউনিয়ন এলাকার বিভিন্ন গামের ৪৩ জন অভিযোগকারী স্বাক্ষর করেছেন। পরে অভিযোগপত্রটি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৃনাল কান্তি দে’র হাতে জমা দেন অভিযোগকারীরা। তারা প্রকল্পগুলো তদন্তপূর্বক টাকা আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ ব্যাপারে পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের বিশ্বাস বলেন, অভিযোগকারীদের অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৃনাল কান্তি দে বলেন, বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।