বাবার পরকীয়া ফাঁস করায় মাসহ খুন হলো সাবিত

স্টাফ রিপোর্টার: সাবিত সাত বছরের শিশু। অপরাধ শব্দের অর্থ তার জানা নেই। বাবা-মায়ের চোখেই তার পৃথিবী দেখা। বাবার কোলে চড়েই গত শুক্রবার বাসা থেকে ঘুরতে বেড়িয়েছিলো সে। কিন্তু জানতো না এই ঘোরাই তার এবং তার মায়ের জীবনের জন্য কাল হবে। পরকীয়ায় আসক্ত বাবা নামাজের কথা বলে তাকে প্রেমিকা সুবর্ণার বাসায় নিয়ে যায়। আর এ কথা বাসায় এসে মাকে বলে দেয়ায় খুন হতে হলো, মা আইরিন আক্তার (৩১) ও সাবিতকে। গত বুধবার সন্ধ্যায় মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়ায় নিজ বাসায় আইরিন আক্তার এবং তার ছেলে খুন হয়। খুনের পেছনে সাবিতের বাবা আমান উল্লাহ আমানের পরকীয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশ এবং নিহত আইরিনের পরিবার সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে সুবর্ণাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার দিনই সাবিতের বাবা আমান উল্লাহ আমানকে আটক করা হয়। তাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণা নামের এক তরুণীর সাথে ব্যাংক কর্মকর্তা আমান উল্লাহ আমানের অনেক বছরের পুরনো সম্পর্ক। স্ত্রী আইরিন আক্তার এবং সুবর্ণা রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে পড়তেন। আইরিনের চেয়ে সুবর্ণা দু বছরের জুনিয়র ছিলেন। এভাবেই আমানের সাথে সুবর্ণার পরিচয়। সুবর্ণা আমানকে পরিচয়ের প্রথম থেকেই পছন্দ করতেন। তাদের ভেতর এক ধরনের সম্পর্কও ছিলো। কিন্তু আইরিনের সাথে বিয়ের পর তাদের মধ্যে আর কোনো যোগাযোগ ছিলো না। গত দু বছর আগে এক বন্ধুর মাধ্যমে আমানের সাথে ফের সুবর্ণার যোগাযোগ হয়। এরপর নিয়মিত তাদের মধ্যে ফোন, ফেসবুকে এবং ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে কথা হতো। দেখাও করতেন তারা। দুজনে আবার অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকেই স্ত্রী আইরিনের সঙ্গে আমানের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।

গত শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ার কথা বলে বড় ছেলে সাবিতকে (৭) নিয়ে বাসা থেকে বের হন আমান উল্লাহ আমান। নামাজ না পড়ে ছেলেকে নিয়ে শাহ আলীতে সুবর্ণার বাসায় যান তিনি। এরপর সুবর্ণার বাসায় মাছ এবং মাংস দিয়ে দুপুরের খাবার খান। এসময় বাসার খাটের উপর রাখা সুবর্ণার ল্যাপটপে গেমস আছে কিনা জানতে চায় সাবিত। কিন্তু গেমস নাই বলে ল্যাপটপটি ওয়্যাড্রপের ভেতরে নিয়ে রাখে সুবর্ণা। এরপর তাকে অন্য কিছু নিয়ে খেলতে বলে। এরপর আমানসহ ভেতরের কক্ষে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে একান্তে সময় কাটায়। তিনটার দিকে ছেলেকে নিয়ে সুবর্ণার বাসা থেকে বাসায় ফেরেন আমান। বাসায় ফেরার পর স্ত্রী আইরিন স্বামী সন্তানকে দুপুরের খাবার খেতে বলেন। কিন্তু ক্ষুধা নাই বলে আমান না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আমান ঘুম থেকে উঠে বাইরে চলে গেলে বড় ছেলে সাবিতের সঙ্গে আইরিন কথা বলেন। নামাজ পড়ে বাবার সঙ্গে সে কোথায় ঘুরতে গিয়েছিল তা জানতে চান। সাবিত প্রথমে বলতে চায়নি। কিন্তু মায়ের স্নেহমাখা জিজ্ঞাসায় মাকে সে সব বলে দেয়। তবে কোনো আন্টির বাসায় তারা গিয়েছিলো তার নাম বলতে পারেনি।

এরপর আইরিন তাদের বাসায় আসা বিভিন্ন নারী ও তরুণী আত্মীয় স্বজনদের চেহারার বর্ণনা দেন। এরপর সাবিত মাকে জানায় টিপ পরা এক আন্টি এর আগেও তাদের বাসায় ব্যাংক লোন নেয়ার জন্য দুই বার এসছিল। তার বাবার সহযোগিতা চেয়েছিল। ওই আন্টির বাসায় তারা গিয়েছিল। এরপর আইরিন বুঝে ফেলেন তারা সুবর্ণার বাসায় গিয়েছিল। এনিয়ে শুক্রবার রাতে আইরিন এবং আমানের মধ্যে ঝগড়া হয়।

পরদিন শনিবার সকালে আইরিন তার ছোটভাই অপু রহমানকে ফোনে আমানের পরকীয়ার কথা জানায়। ঢাকায় তার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই বলেও ভাইয়ের কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেন। অপুকে ঢাকায় এসে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন আইরিন। অপু মঙ্গলবার ঢাকায় আসবে বলে ঠিক করেন। কিন্তু হরতালের কারণে তিনি আর আসতে পারেননি। বোনকেও আর নেয়া হয়নি। এরই মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় বড় ছেলে সাবিতসহ খুন হয় আইরিন আক্তার। তার আর বাবা মা এবং ভাই বোনের কাছে ফেরা হয়নি।