পাবলিক পরীক্ষা আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত : ছালামের ১৫ হাজার টাকা জরিমানা

ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে কোচিংশিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অপরাধে দামুড়হুদা গুলশানপাড়ার রংধনু ইংরেজি কোচিং সেন্টারের পরিচালক হাসিবুল হাসান ছালামকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার বেলা ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযুক্ত কোচিংবাজ শিক্ষক ছালাম ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে তার অপরাধ স্বীকার করে দু হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মানবিক দিক বিবেচনা করে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন ১৯৮০ এর ৪ ধারা মোতাবেক ওই ধূর্ত কোচিং শিক্ষক হাসিবুল হাসান ছালামকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় দামুড়হুদার কোচিংবাজ ইংরেজি শিক্ষক হাসিবুল হাসান ছালামের প্রতারণা ও ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে একটি সংবাদ প্রাকাশিত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে এলাকার সচেতন অভিভাবকমহল ও ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা ওই ধূর্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

দৈনিক মাথাভাঙ্গায় ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার খবর প্রকাশের সাথে সাথে সকাল থেকেই দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন তটস্থ হয়ে পড়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। কৌশলে মোবাইলফোনে ডেকে পুলিশ আটক করে তাকে। পরে দামুড়হুদায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার বিচার হয়। এ সময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও আটক করা হয়।

চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় গত মঙ্গলবার ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তার আগের দিন অভিযুক্ত কোচিং শিক্ষক ছালাম বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীর কাছে মোবাইলফোনে জানায়, ইংরেজি প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্র পাওয়া যাবে ৫ শ টাকা করে লাগবে। মঙ্গলবার সকালে কোচিং শিক্ষক ছালাম দামুড়হুদা ও চুয়াডাঙ্গার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর কাছে ৫শ টাকা করে প্রশ্নপত্র বিক্রি করেন। কারো কারো কাছে ফটোকপি দিলেও অনেককে ব্লাকবোর্ডে লিখে দেন। কেনা প্রশ্নপত্র  কমন না আসায় ছাত্র-ছাত্রীরা ফুঁসে ওঠে। গতকাল সকালে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকের কাছে টাকা ফেরত নেন। এর আগেও পরীক্ষার হলে ছাত্র-ছাত্রীদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে তিনি উত্তর লিখে দেন বলে অভিযোগ আছে।

গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিক্ষক তার প্রতারণার কথা অকপটে স্বীকার করে দু হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে বলেন স্যার এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করুন। আমি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স ফাইনালের ছাত্র। আমাকে জেলহাজতে দেবেন না। জেলহাজতে দিলে আমার লাইফটা শেষ হয়ে যাবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন ১৯৮০ এর ৪ ধারা মোতাবেক ওই ধূর্ত কোচিং শিক্ষককে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এদিকে কোচিংবাজ ধূর্ত শিক্ষককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার সচেতন অভিভাবক মহল ও ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ধন্যবাদ জানান। দণ্ডপ্রাপ্ত শিক্ষক ছালাম (৩০) দামুড়হুদা গুলশানপাড়ার ইমরান হোসেনের ছেলে। দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই রবিউল ইসলাম ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিএ ফয়জুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কাজে সহায়তা করেন।

অন্যদিকে শিক্ষক ছালামের জরিমানার খবর যাতে মাথাভাঙ্গায় না ছাপা হয়, সে জন্য মাথাভাঙ্গাকে ম্যানেজ করার জন্য এক ব্যক্তি ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে ছালামের কাছ থেকে গতকাল ১০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয় বলে ছালামের পারিবারিকসূত্র জানায়।