দীর্ঘকাল ঢাকায় থাকা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার: বছরের পর বছর ধরে চর দখলের মতো ঢাকায় অবস্থানকারী চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ১০৬ চিকিত্সককে ঢাকার বাইরে বদলি করেছে সরকার। বদলিকৃত চিকিত্সকদের মধ্যে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জুনিয়র কনসালটেন্ট রয়েছেন। সরকারি এ আদেশে ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের সঙ্কট প্রকট। সরকারি ৩১টি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ঢাকায় আছে মাত্র তিনটি। বাকি ২৮টি মেডিক্যাল কলেজ ঢাকার বাইরে। ঢাকার বাইরের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে গড়ে ৪০ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য। এরমধ্যে মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনি বিভাগের ৩০ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য। এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, ফরেনসিক মেডিসিনসহ বেসিক সাইন্সের ৪০ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য। উপজেলা পর্যায়ের ৫০ ভাগ সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞের অভাবে অপারেশন বন্ধ রয়েছে। জেলা পর্যায়ের অনেক হাসপাতালে মাঝে মধ্যে অপারেশন বন্ধ থাকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৯ বছরে একাধিক অনুষ্ঠানে চিকিত্সকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গতকাল রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে সরকারি চিকিত্সকদের কর্মক্ষেত্রে থেকে যথাযথভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ঢাকা ছাড়ুন, কর্মস্থলে থাকুন, নয়তো চাকরি ছেড়ে দিন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও কর্মস্থলে চিকিত্সকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ইত্তেফাককে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিত্সকদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে অনেক চিকিত্সক ৫ থেকে ১৬ বছর ধরে অবস্থান করছেন। অনেকে এমবিবিএস থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত হয়েছেন ঢাকায় থাকাকালে। আবার কিছু চিকিত্সকের প্রকৃত কর্মস্থল ঢাকার বাইরে হলেও তারা দীর্ঘদিন যাবত ওএসডি (স্বাস্থ্য অধিদফতর) ও রাজধানীর বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্তি (অ্যাটাচমেন্ট) নিয়ে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। তবে সবচেয়ে মজার বিষয়- এরা ঢাকার বাইরে থাকতে না চাইলেও বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সপ্তাহের এই তিনদিন তারা প্রাইভেট প্রাকটিস করতে ঢাকার বাইরে যান। নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা চলে যান। কেউ কেউ নামমাত্র হাজিরা দিয়ে চলে যান। এতে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার ঢাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক সংকট থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নরসিংদী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, গাজীপুর— এসব এলাকার বেসরকারি ক্লিনিকগুলো চলে ঢাকার ডাক্তারদের দিয়ে। উল্লিখিত এলাকায় ঢাকার চিকিত্সকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। তবে বদলি করতে গেলে তারা আবার ওই এলাকায় যেতে চান না। অনেক ক্ষেত্রে কতিপয় বিএমএ ও স্বাচিপের নেতাদের ম্যানেজ করে তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অবস্থানকারী চিকিত্সকদের অধিকাংশ যখন যে দল আসে সেই দল বনে যান। অনেক ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেন তারা। জানা গেছে, রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ৮টি শিক্ষকদের পদ শূন্য। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ১৬ জন শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে ২১ জন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে (কুমেক) অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের ১১১টি পদের মধ্যে অর্ধেক অর্থাত্ ৫৫টি পদ শূন্য রয়েছে। অধ্যাপকের ২৪টি পদের মধ্যে ১৩টি, সহযোগী অধ্যাপকের ৩৫টির মধ্যে ১২টি ও সহকারী অধ্যাপকের ৫২টি পদের মধ্যে ৩০টি শূন্য।