দর্শনার শ্যামপুরে শোক : বিএসএফ’র বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ উগলে দিচ্ছে ক্ষোভ : আজ দাফন
দর্শনা অফিস: দামুড়হুদার বারাদী ভারত সীমান্তে নির্মম নির্যাতনের শিকার দর্শনা শ্যামপুরের মজিদুল ইসলাম ওরফে মজিদ অবশেষে মারা গেছে। ভারত সীমান্ত সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উদ্ধারের ৬ দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। মজিদ চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার দর্শনা শ্যামপুর দক্ষিণপাড়ার আবুল হোসেনের ছেলে। তার পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা বলেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় গরু পাচার করে আনার জন্য বাড়াদী সীমান্তে যায়। পশ্চিমবঙ্গের বিজয়পুর বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ে। বিএসএফ সদস্যরা তাকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যাযে মৃত ভেবে মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাজিদুল ইসলাম ওরফে মজিদ মারা গেছে। তবে হাসপাতালরে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলে তাকে বাড়ি ফিরে নেয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে সম্ভবত তাকে পুনরায় হাসপাতালের উদ্দেশে নেয়া হয়। পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ। তবে মৃতদেহ তখনই ফিরিয়ে নেয়া তার বাড়ি দর্শনা শ্যামপুরে। এ সময় নিকটজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। আজ বুধবার দাফন করা হতে পারে। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলা হয়নি।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবির পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গত এক সপ্তাহে সীমান্তে বিএসএফ’র হাতে বাংলাদেশি ধরা পড়েছে, এমন কোনো তথ্য বিজিবির কাছে নেই। তিনি আরও জানান, কোনো বাংলাদেশি অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়লে সে খবর বিজিবিকে দেয় বিএসএফ। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। শ্যামপুরের মজিদের মৃত্যু তাহলে ঠিক কী কারণে হয়েছে? জানতে চাওয়া হলে ৬ বিজিবি পরিচালক জানান, এ খবর শোনার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে বিএসএফ’র কমান্ডেন্টের সাথে কথা বলেছি। তারা বর্ণিত ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে উত্তর দিয়েছে।
বিএসএফ’র হাতে নির্মম নির্যাতনে বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দর্শনা শ্যামপুরের সাধারণ মানুষ বিরূপ মন্তব্য করে বলেন, মাঝে মাঝেই দু দেশের সীমান্তরক্ষীদের পদস্থ কর্মকর্তাদের পতাকা বৈঠক হচ্ছে। যৌথ টহলের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অথচ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ’র পর এক নির্মম আচরণ করেই চলেছে। গুলি করে হত্যা তো আছেই, পাশাপাশি পিটিয়ে হত্যা করছে।
মজিদ সম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে স্থানীয়দের কেউ কেউ বলেছে, মজিদ মাদক পাচারের সাথে জড়িত বলে শোনা যেতো। তবে পরিবারের সদস্যরা মাদকপাচারের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি সঠিক নয় বলে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছে, মজিদ সীমান্ত থেকে গরু আনার জন্যই বাড়ি থেকে বের হয়ে বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ে। তাকে ক্যাম্পে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে মৃতভেবে মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো গেলো না।