থেমে গেছে স্কুল ছাত্রী রিমার বাঁচার আকুতি

কোটচাঁদপুরে বখাটের দেয়া বিষে আক্রান্তের মৃত্যুতে ক্ষোভ : মাঠে নেমেছে পুলিশ

 

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি: সপ্তম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী রিমার বাঁচার আকুতি থেমে গেছে। প্রেমে সাড়া না পেয়ে বখাটে নাজমুল পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশে রিমাকে ধরে জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। বিষে আক্রান্ত রিমা হাসপাতাল বেডে দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা জীবন-মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে চলে গেলো না ফেরার দেশে। হাসপাতাল বেডে শুয়ে রিমা স্বজন ও ডাক্তারদের কাছে বাঁচার আকুতি করেছিলো। রিমাকে দ্রুত যশোর আড়াইশ বেড হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ ছিলো কোটচাঁদপুর হাসপাতালের ডাক্তারদের। কিন্তু অর্থাভাবে সময়মত রিমার দরিদ্র পিতা মেয়েকে যশোর হাসপাতালে নিতে পারেনি। রিমাকে যখন গত শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোর হাসপাতালে নেয়া হলো তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। শুক্রবার মধ্যরাতে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

কোটচাঁদপুর উপজেলার ফাদিলপুর গ্রামের রিপন আলীর সপ্তম শ্রেণিতে পড়–য়া কন্যা রিমা খাতুনকে প্রতিবেশী আলমগীর বিশ্বাসের ভবঘুরে ছেলে নাজমুল স্কুলে যাওযার পথে ও বিভিন্ন স্থানে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। রিমা তার পরিবারকে বিষয়টি জানানোর পর রিমার দরিদ্র পিতা সমাজের কাছে প্রতিকারের অনুরোধ করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রিমাকে বাড়িতে একা পেয়ে বখাটে নাজমুল ও তার ৫-৬ জন সঙ্গী মিলে তাকে জাপটে ধরে জোর করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। মুমূর্ষু অবস্থায় রিমাকে প্রথমে কোটচাঁদপুর হাসপাতালে ও পরে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যশোর হাসপাতালে শুক্রবার মধ্যরাতে সে মারা যায়। এ ঘটনায় রিমার পিতা রিপন আলী বাদী হয়ে নাজমুলসহ ৫ জনকে অভিযুক্ত করে কোটচাঁদপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি নাজমুলের দুই খালা রেশমা ও সুমিকে পুলিশ আটক করেছে। মূল আসামি নাজমুল পলাতক রয়েছে।

অপরদিকে জানা গেছে, এ ঘটনায় কোটচাঁদপুর থানায় ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনা তদন্তে এলাকা পরিদর্শন করেছেন ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ ও কোটচাঁদপুর সার্কেলের এডিশনাল এসপি রেজাউল করিম রোজা।

রিমার দাদা শুকুর আলী অভিযোগ করেন, কোটচাঁদপুর উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের মৃত সিরাজ বিশ্বাসের নাতি  ছেলে ভবঘুরে বখাটে নাজমুল হোসেন (১৮) তার ছেলের মেয়ে রিমাকে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে উত্ত্যক্ত করতো। এ ঘটনায় তিনি এবং রিমার বাবা আসাননগর-কুল্লাগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছেও ২ বার অভিযোগ দিয়েছেন।

শুকুর আলীর ভাষ্যমতে বুধবার রাতেও রিমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নাজমুল প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং উত্ত্যক্ত করে। এ নিয়ে নাজমুলের পরিবারের সাথে রিমার পরিবারের বিবাদ হয়। আসাননগর-কুল্লাগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে রিমার অভিভাবকরা আমাদের জানিয়েছিলো। কিন্তু নাজমুলকে আমরা স্কুল এলাকায় কখনো দেখিনি।

কোটচাঁদপুর থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা জানান, এ বিষয়ে রিমার বাবা থানায় মৌখিক অভিযোগ দিলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা নাজমুলের খালা রেশমা ও সুমীকে আটক করেছি। আমরা নাজমুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।