ছাত্রলীগকর্মী হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি ছাত্রদলের নাজমুল হাসান খুন

চুয়াডাঙ্গার আলোচিত চন্দ্রবাতী ইঁদারার অদূরবতী আমবাগান থেকে লাশ উদ্ধার : খুনিদের গ্রেফতার দাবি

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা কলেজ ছাত্রদল নেতা নাজমুল হাসানকে (২১) খুন করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের চন্দ্রাবতী ইঁদারার অদূরবর্তী আমবাগান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। গতপরশু বিকেলে মোবাইলফোনে তাকে পরিচিত এক ব্যক্তি ডেকে নেয়। এরপর সে আর বাড়ি ফেরেনি। তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ। ছাত্রদল এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা হত্যাকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীবাহিনীকে দোষারোপ করে অবিলম্বে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

পুলিশ বলেছে, নাজমুল হাসান চুয়াডাঙ্গা পোস্ট অফিসপাড়ার ছাত্রলীগ কর্মী টুটুল হত্যা মামলার এজাহার নামীয় আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মসজিদের ঈমামের সাইকেল চুরির সময় হাতেনাতে ধরাপড়ার পর বেশ কিছুদিন হাজতখাটে। সপ্তা দু আগে সে জামিনে মুক্ত হয়। এরপর কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল এ হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক হত্যা বলে দাবি করেছে। তারা বলেছে, ছাত্রলীগ পরিকল্পিতভাবে তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। নাজমুল হাসানের মা অভিযোগ করে বলেছেন, খুনিরা প্রকাশ্যেই ঘুরছে। ওদেরকে লাশের পাশে ঘুরতে দেখলেও ধরতে পারছি না। পুলিশ কি ওদের ধরবে?

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কেদারগঞ্জ সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার নূর আজম ওরফে প্যাঙ্গা কাঠমিস্ত্রির ছেলে নাজমুল হাসান ঢাকা শ্যামলীস্থ একটি কলেজের ছাত্র ছিলো। পিতা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা হারান। এরপরই নাজমুল হাসান চুয়াডাঙ্গায় ফিরে কলেজে ভর্তি হয়। ছাত্রদলের একাংশের কলেজ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পায়। একের পর এক মামলায় জড়ায় সে। চুয়াডাঙ্গা পোস্টঅফিসপাড়ার টুটুল চুয়াডাঙ্গা আদর্শ মহিলা কলেজের অদূরে খুন হয়। এ মামলায় তাকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। মাদকাসক্ত হিসেবেও এলাকায় চিহ্নিত হয়ে পড়ে। সাইকেল চুরির অভিযোগে তাকে ধরে পুলিশে দেয়া হয়। হাজতবাস শেষে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও নেশার অন্ধকার জগতে পা বাড়ায় সে। স্থানীয়রা এ তথ্য দিয়ে বলেছে, সম্প্রতি নাজমুল বহিরাগতদের সাথেই বেশি মেশামিশি করতো। আচরণও বদলে গিয়েছিলো ওর।

নাজমুলের অসুস্থ পিতা শয্যাগত। একমাত্র বোন ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। বোন ও মা আনোয়ারা খাতুন বলেছেন, গতপরশু রোববার দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে। বিকেল ৩টার দিকে মোবাইলফোনে তাকে ডাকে। রাশেদ নামের একজন তাকে ডাকছে বলে জানায়। এরপর সে আর বাড়ি ফেরেনি। রাতে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুজি শুরু করি। সকালে দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার রাশেদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করি। রাশেদ কিছু জানে না বলে জানালে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরি। দুপুরে খবর পায় একজনের লাশ পাওয়া গেছে। ছুটে গিয়ে দেখি আমাদেরই নাজমুল নিথর দেহে পড়ে আছে।

পুলিশ বলেছে, সকালে কয়েকজন প্রাতভ্রমণে গেলে ঘোড়ামারা ব্রিজের অদূরবর্তী হাজরাহাটি মোড়ের নিকটস্থ একটি আমবাগানে লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়। প্রথমে লাশ দেখে কেউ শনাক্ত না করলে অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ হিসেবেই উদ্ধার প্রক্রিয়া করা হয়। তাকে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নাজমুলের গায়ে থাকা শাটের পকেট থেকে ২৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তারই পরনের বেল্ট দিয়ে হাত বাধা ছিলো। মোবাইলফোনটির হদিস মেলেনি। দুপুরে লাশ হাসানের নিকটজনেরা শনাক্ত করে। দুপুরেই হাসানের মা আনোয়ারা খাতুনকে থানায় মামলা করতে অনুরোধ জানানো হয়। বিকেলে লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ বাড়িতে নেয়া হলে নিকটজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বুজরুকগড়গড়ি কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। রাতে নাজমুল হাসানের মা বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি হত্যামামলা রুজু করেছেন। রাতই পুলিশ আসামি ধরার কাজ শুরু করে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহেদ মো. রাজীব খান স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় মসনদ দখল করে সারাদেশে যে হত্যাযজ্ঞের উৎসব পালন করছে তা স্বৈরাচারের সকল মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সরকার বাকশালী কায়দায় দমন করার ভিন্ন নীতি অবলম্ব করে যাচ্ছে। সরকারের রক্ত পিপাসু বাসনার ঝরে গেলো জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আরো এক সূর্য সৈনিকের তাজা প্রাণ। এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তার খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে। এই ভায়াবহ হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হলে ছাত্রদল সরকারের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে দাবি আদায়ের চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। বিবৃতি দাতা তার বিবৃতিকে যৌথ বিবৃতি বলে দাবি করে বলেছেন, বিবৃতি দাতারা হলেন- জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর জামান সিজার, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ তালহা, ফিরোজ সরোয়ার রোমান, যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম হাসান টুটুল. মঞ্জুরুল জাহিদ, জাহেদ মো. রাজীব খান, খ.ম ইউসুফ, জেডএম তৌফিক খান, শাহজাডহান খান, সোহেল আহমেদ মালিক সুজন, মোমিনুর রহমান মমিন ও তানভীর হোসেন রাজীব। পৃথক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজছাত্র নেতা নাজমুল হাসানের হত্যার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা, পৌর ও সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি কলেজ ছাত্রদল সভাপতি আশিকুর হক শিপলু স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্তৃক কলেজ ছাত্রদলের অন্যতম সদস্য মেধাবী ছাত্র নেতা নজামুল হাসানকে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বিকেল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শহীদ হাসান চত্বরে সমাবেশে বক্তারা বলেন, ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ছাত্রদলের নাজমুলকে অপহরণের পর নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।