দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দর লুটেরাদের দখলে : আমদানিকারকদের মালামাল আনতে অনীহা : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দরে আমদানি করা মালামাল লুটেরাচক্রের হাত থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। আর এ নিয়ে বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের সাথে লুটেরাদের প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বন্দরের কমপক্ষে ১২ নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম (২৭) ও মোহাম্মদ আলী (৩০) নামে ২ জন নিরাপত্তাকর্মী পঙ্গু হওয়ার পথে। ফলে এ রেলবন্দর দিয়ে আমদানিকারকরা মালামাল আমদানি করার অনীহা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বন্দরে বিজিবি মোতায়েন করেছে।

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দর ও রেলওয়েসূত্রে জানা যায়, দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলবন্দর অরক্ষিত থাকায় প্রায় প্রতিনিয়ত লুটেরাচক্র মালগাড়ির ওয়াগন ভেঙে আমদানি করা মালামাল লুট করে থাকে। নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহীনির সাথে লুটেরাচক্রের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে প্রতিনিয়ত। বন্দরে মালামাল লুট করাকে কেন্দ্র করে ও একক গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র কেরে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিবদমান দু গ্রপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও বন্দর এলাকার ৯টি বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

গত এক বছরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহীনি দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে ৯টি নিয়মিত মামলায় অর্ধশতাধিক আসামি করেছে। এ সময় দুষ্কৃতিদের হামলায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহীনি এসআই ও হাবিলদারসহ ১২ জন আহত হয়। এর মধ্যে সাইফুল ইসলাম (২৭) ও মোহাম্মদ আলী (৩০) আহত অবস্থায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কর্তব্য অবহেলার কারণে ৮ নিরাপত্তা কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একের পর এক এ ধরনের লুট ও সহিংস ঘটনার কারণে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার মেসার্স আমান পল্ট্রি ফিডের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম লিখিতভাবে দর্শনা স্টেশন মাস্টারকে জানিয়েছেন দুষ্কৃতিদের প্রতিরোধ করা না হলে এ বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি করা সম্ভব হবে না।

দর্শনা বন্দর সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান হাবু জানান, আমদানিকারকরা রেল ভাড়া ও কাস্টমস’র রাজস্ব দিয়ে ব্যবসা করে থাকে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে এবং অব্যহতভাবে লুটপাটের ঘটনায় আমদানি কারকরা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

দর্শনা রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইন্সপেক্টর আরিফুল ইসলাম জানান, বন্দর এলাকায় দেড় কিলোমিটার বাউন্ডারি পাঁচিল না থাকায় এবং তুলনামূলক লোকবল কম থাকায় সশস্ত্র লুটেরাচক্রের সামনে মোকাবেলা করা সম্ভব হয় না। এজন্য বন্দর এলাকায় বিজিবি মোতায়ন করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার মীর লিয়াকত আলী জানান, সংশ্লিষ্ট দফতরে উদ্বেগের কথা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিসিও (পাকশী) শ্রী সুজিত কুমারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের জুলাই থেকে মার্চ ৩১ পর্যন্ত রেল ভাড়া বাবদ ১৫ কোটি ও কাস্টমস রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১১২ কোটি টাকা। স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন বন্দরে পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও শান্ত থাকলে সরকার দর্শনা রেলবন্দর থেকে কয়েক’শ কোটি টাকা রাজস্ব বাবদ আদায় হতে পারে।