আড়াইশ শয্যা প্রকল্পভুক্ত করে উন্নয়ন অবকাঠমো নির্মাণ কাজ অব্যাহত : সম্পন্ন হবে আগামী বছরের জুনে
ইএমও পদ বিলুপ্তির পর অসংখ্য আবেদনেও মেলেনি সাড়া : বাড়তি রোগীর চাপে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের নাভিশ্বাস
কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গা সদর আধুনিক হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যা প্রকল্পভুক্ত করে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজ সম্পন্ন হবে আগামী বছরের জুনে। অবাক হলেও সত্য, হাসপাতালটি আড়াইশ শয্যা প্রকল্পভুক্ত করে কাজ অব্যাহত থাকলেও দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ে ১শ শয্যায় উন্নীত হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণতা পায়নি। শুধু কি তাই? দীর্ঘদিনে অসংখ্য আবেদনের পরও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার পদই সৃষ্টির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাড়া মেলেনি। কবে মিলবে? কী করলে মিলবে? জবাব নেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসার পদ না থাকায় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারদের দিয়ে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে চালু রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এক সময় ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার তথা ইএমও পদ ছিলো। একনেকের এক বৈঠকে তা বিলুপ্ত করা হয়। সেই থেকেই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারদেরই জরুরি বিভাগের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। মেডিকেল অফিসারদের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর মাত্রারিক্ত চাপ কনসালটেন্ট চিকিৎসকদের ওপর। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে তথা রাউন্ড শেষে বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেয়ার সময় বাড়তি চাপে হিমসিম খেতে হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকেরই অভিন্ন অভিমত- সময় স্বল্পতার কারণে অনেক সময় রোগীর সাথে ঠিকমতো কথা বলে রোগের উপসর্গও জানা সম্ভবপর হয় না। এতে মানসম্পন্ন চিকিৎসা থেকে রোগীদেরকেই বঞ্চিত হতে হচ্ছে। যদি মেডিকেল অফিসারদের জরুরি বিভাগে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে না হতো, তাহলে বহির্বিভাগে রোগীর বাড়তি চাপ মেডিকেল অফিসাদের অনেকেই সামলাতে পারতেন। ফলে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার পদ সৃষ্টি করে এ পদে নিয়োগ দ্রুত নিশ্চিত করা দরকার। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শুধু কি ইমার্জেন্সি মেডিকল অফিসার পদ নিয়ে সমস্যা? চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটি ২০০৩ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১শ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ১শ শয্যায় উন্নীত করা হলেও লোকবল দেয়া হয়নি। বর্তমানে লোকবল ৫০ শয্যারও কম। দীর্ঘ সময় ধরে শুধু একশ শয্যার খাবার ও ওষুধপথ্য সরবরাহ করা হয়। আমরা দফায় দফায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট বিষয়টি জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ১শ শয্যার লোকবল দেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েও তেমন সাড়া পাচ্ছি না। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার খুলনায় বিভাগীয় সিভিল সার্জনদের নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। উত্থাপন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএমএ সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরী। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটি ৫০ শয্যা থেকে ১শ শয্যায় উন্নীত করা হলেও দীর্ঘদিনেও পূর্ণতা দেয়া হয়নি। সেই ৫০ শয্যার লোকবল দিয়েই হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছে। মাঝে মাঝে ৫০ শয্যারও লোকবল থাকে না। অথচ এ হাসপাতালে বর্তমানে প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যাই থাকছে তিনশর অধিক। বহির্বিভাগে রোগীর তো উপচে পড়া চাপ লেগেই থাকে। এদিকে বিশেষ দৃষ্টিদানের অনুরোধ জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সিনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট, সিনিয়র কার্ডিওলজি, সিনিয়র চর্ম-যৌন ও সিনিয়র রেডিওলজি কনসালটেন্ট পদগুলো সেই শুরু থেকেই প্রায় শূন্য। কবে এ পদ পূরণ হবে তারও কোনো জবাব নেই। সহকারী সার্জন পদ ১১টি। একজনও নেই। মেডিকেল অফিসার হোমিও থাকার কথা থাকলেও পদটি শূন্য। সেবা তত্ত্বাবধায়ক পদ থাকলেও তা শূন্য। প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদটিও শূন্য। আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে একজন ভারপ্রাপ্তকে দিয়ে চালানো হচ্ছে। পরিসংখ্যান কর্মকর্তা পদটিও শূন্য। মেডিকেল টেকনোলজি ও ফিজিওথেরাপি পদটিও পূরণ করা হয়নি। মেডিকেল টেকনিশিয়ান রেডিও দুটি পদে আছেন একজন। এরকম অনেক পদেই লোকবল নেই। সদর হাসপাতালের নেই নেই দশা থেকে মুক্ত করতে না পারলে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। এরপরও যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মধ্যে কেউ আছেন যারা হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের চেয়ে ক্লিনিকে বা প্রাইভেট প্র্যাকটিসেই অধিক আগ্রহী। এদের অনেকেই আছেন যারা হাসপাতালের চেম্বারে ঢুকেই বেরিয়ে পড়েন। যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের ওপর বাড়তি চাপ লেগেই থাকে। হিমসিম খেতে হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। এদিকে দায়িত্বশীলদের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার বলে মন্তব্য অনেকের।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১শ শয্যায় উন্নীতকরণের পর ২০১১ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়েছে আড়াইশ শয্যা প্রকল্পভুক্ত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ আগামী বছর জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কবে নাগাদ আড়াইশ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে পূর্ণতা পাবে তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।