চুয়াডাঙ্গা গাড়াবাড়িয়ার ঘরজামাই হত্যা : স্ত্রী ও দু কন্যা দোষ চাপালেন বনের বাঘডাশার ওপর

ভোরে কান্নাকাটি : প্রথমে বললেন হৃদরোগে মৃত্যু : লাশে আঘাতের দাগ দেখে প্রতিবেশীদের প্রশ্নের মুখে ঘনীভূত হলো রহস্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার গাড়াবাড়িয়া বাগানপাড়ার দীর্ঘদিনের ঘরজামাই আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার রবিউল ইসলামকে (৫০) হত্যা করা হয়েছে। গতপরশু রাতে তাকে তার বাড়ির দোকান সংলগ্ন ঘরে হত্যা করা হয়। ভোরে এ হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে তার স্ত্রী ও দু মেয়ে হৃদরোগে মারা গেছে বলে প্রচার করলেও স্থানীয়রা লাশে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশে খবর দেয়। এ সময় স্ত্রীসহ দু কন্যা বাঘডাশায় রবিউলকে মেরেছে বলে দাবি করে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রবিউল ইসলামের স্ত্রী জাহেরা খাতুন জারে, ছেলে শান্তি, দু মেয়ে রেহেনা খাতুন ও সাবিনা খাতুনকে সদর থানায় নেয়া হয়। পরে অবশ্য এদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মুন্সী বলেছেন, নিহত রবিউল ইসলামের ছোটভাই আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার মাহাতাব আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে। স্ত্রী মেয়ে ও ছেলেকে নজরদারির মধ্যেই রেখেছে পুলিশ।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া বাগানপাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের মেয়ে স্বামী পরিত্যক্ত জাহেরা খাতুন জারের সাথে আনুমানিক ২৬ বছর আগে বিয়ে হয় আলমডাঙ্গা নতিডাঙ্গার মৃত আজাহার মণ্ডলের ছেলে রবিউল ইসলামের। বিয়ের পর রবিউল তার শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস শুরু করেন। পরিশ্রম করে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি বাড়ি নির্মাণের জন্য ১৮ কাঠা জমিও কেনেন। সেই জমিতেই পাকা বাড়ি নির্মাণ করে ঘরের সাথেই দোকান দিয়ে দিব্যি ছিলেন তিনি। তিন মেয়ে ও এক ছেলে। এদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পেছনপাড়ায় বিয়ে করে ছেলে শান্তি শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করে। মাঝে মাঝে বাড়ি ফিরে জমির ভাগসহ মালামাল নিয়ে অশান্তি করতে থাকে। এ নিয়ে শান্তির সাথে তার মামাদেরও একদফা মারামারিও হয়েছে। এরই এক পর্যায়ে গতকাল ভোরে আজানের সময় বাড়ির লোকজন কান্না কাটি করে প্রতিবেশীদের জাগিয়ে তোলে। প্রতিবেশীরা ছুটে গেলে রবিউল ইসলামের স্ত্রীসহ দু মেয়ে রেহেনা ও সাবিনা জানায়, দোকানের পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো। ঘুমের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ কথায় রহস্যের গন্ধ পান প্রতিবেশীরা। তারা লাশ নেড়ে দেখনে মুখের দাঁড়ি ছেড়া। গলায় ও বুকে আঘাতের চিহ্ন। পা দুটিও রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধার দাগ। এসব দেখে প্রতিবেশীদের প্রশ্নের এক পর্যায়ে জাহেরা খাতুন ও তার দু মেয়ে বলে, ক’দিন ধরে বাঘডাশায় উৎপাত করছে। তা হলে বাঘডাশায় মেরে রেখে গেছে। বাঘডাশার সাথে ধস্তাধস্তির সময় সেখানে থাকা বাইসাইকেলটি পড়ে গেছে।

প্রথমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এবং পরে বাঘডাশায় মেরেছে বলে প্রচার শুরু করলে সন্দেহ ঘনীভূত হয়। স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে চুয়াডঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) কামরুজ্জামান ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান মুন্সী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছুলে দু মেয়ে রেহেনা ও সাবিনাসহ তাদের মা মৃতদেহের পাশ থেকে সরে পড়ে। তাদের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় সদর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধারের সময়ই জাহেরা খাতুনকে ঘর থেকে, দু মেয়ে রেহেনা ও সাবিনাকে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে ও রাস্তা থেকে ছেলে শান্তিকে হাতে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ পিকআপ তুলে সদর থানায় নেয়া হয়। অপরদিকে বিকেলে মৃতদেহ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করানো হয়। সন্ধ্যায় থানা থেকে ৪ জনকেই ছেড়ে দেয়া হয়।

পুলিশ জানায়, এদের প্রাথমিক জিজ্ঞাবাসাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হলেও নজরদারির মধ্যেই রাখা হয়েছে। রাতে নিহত রবিউলের ভাই মাহাতাব আলী বাদী হয়ে হত্যা মামলা রুজু করেছেন। তবে তিনি মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রবিউল ইসলামের তিন মেয়ের মধ্যে রেহেনা খাতুনের বিয়ে হয়েছে বদরগঞ্জ দশমী। স্বামীর নাম রসুল। রোজিনার বিয়ে হয়েছে হায়দারপুরের আব্দারের সাথে। ছোট মেয়ে সাবিনার বিয়ে হয়েছে জয়রামপুরের ইমনের সাথে। গতপরশু শ্বশুরবাড়ি থেকে পিতার বাড়ি গাড়াবাড়িয়ায় ফেরে রেহেনা ও সাবিনা। গতকাল শুক্রবার শান্তিকে ডেকে নিয়ে বাড়িতে সম্পদ সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বৈঠকের কথা ছিলো। তার আগেই পরপারে পাঠানো হলো রবিউলকে। স্থানীয়রা এ তথ্য দিয়ে বলেছে, ছেলে শান্তি বাড়ির জমিজমার ভাগ নেয়ার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই উৎপাত শুরু করে। পিতা রবিউল নিজের নামে কেনা বাড়ির ১৮ কাঠা জমি ছেলের জন্য রেখে স্ত্রী জারের নামে থাকা দু আড়াই বিঘে মাঠাম জমি মেয়েদের নামে লিখে দেয়ার জন্য বলে। এতে বাধ সাধে জারে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ দানা বাধে। ক’দিন ধরে ঝগড়াঝাটি চলছিলোই। এরই মাঝে লাশ হলেন রবিউল। স্বামীর লাশের পাশে শোকের বদলে স্ত্রীর চেহারায় ছিলো আতঙ্কের ছাপ। এসব দেখে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, স্ত্রী জারেকে ঠিক মতো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই হত্যা রহস্য বেরিয়ে আসবে। অথচ পুলিশ তাকে থানায় নিয়েও কেন ছেড়ে দিলো বুঝতে পারছি না আমরা।