চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের পূজামণ্ডপগুলোতে উপচেপড়া ভিড় : জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পরিদর্শন

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মহালয়ায় দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন যাত্রা শুরু হয়েছিলো। অতঃপর পঞ্চমী তিথিতে অকাল বোধনে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হন মণ্ডপে মণ্ডপে। এসেছিলেন ঘোটকে, ফিরছেন দোলায়। ভক্তদের পূজা নিয়ে দেবী দুর্গা পার করলেন ৪টি দিন। শাস্ত্রীয় বিধান মেনে গতকাল একই দিনে নবমী এবং দশমী তিথি শেষ হয়েছে। আর এরই মধ্যদিয়ে এবারের মতো সমাপনী হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় পার্বন শারদীয় দুর্গোৎবের। আজ বিসর্জন দেয়া হবে দুর্গতিনাশিনীকে। গতকালও চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনেকেই পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত।

পূজার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আজ শুক্রবার বিসর্জনের পূর্বাবধি চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা দেখার সুযোগ পাবেন। এদিকে গতকাল ভক্তরা সকাল থেকেই ভিড় জমান পূজামণ্ডপগুলোতে। সন্ধিপূজা দিয়ে শুরু হয় নবমী পূজা। শাপলা-শালুক ও বলিদান সাথে নানা আনুষ্ঠানিকতা। শাস্ত্রবিধি মতে, নবমীতেই দেবী বন্দনার সমাপ্তি। তাই ভক্তরা প্রার্থনা করতে থাকেন দেবীর উদ্দেশে। যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আমকাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। মা দুর্গাকে প্রণাম জানাতে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরছেন ভক্তরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে। আজ প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে এবারের শারদীয় উৎসবের পূর্ণ সমাপনী। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস গতকাল সন্ধ্যার পর বড়বাজার পূজামণ্ডপসহ বেশ কয়েকটি মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। সাথে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরা, সহকারী কমিশনার ফারজানা খানম, সৈয়দা নাফিস সুলতানা প্রমুখ। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুনিয়া চাঁদপুরসহ কয়েকটি গ্রামের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগ নেতা আরশাদ উদ্দীন চন্দন। তিনি পূজামণ্ডপ কমিটির হাতে অর্থ প্রদান করেন।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দর্শনার ৫টি পূজা মন্দির পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। দর্শনা হরিজন সম্প্রদায়, কেরুজ, পুরাতন বাজার, রামনগর দাসপাড়া ও আদিবাসিপাড়া পূজা মন্দিরে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে পরিদর্শন ও আর্থিক অনুদান প্রদানকালে এমপি আলী আজগার টগর বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানের সাথে রয়েছে আত্মার সম্পর্ক। যার যার ধর্ম সে সে যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে সেদিকে সরকার সবসময় সজাগ। তাই আসুন সম্প্রীতির বাধনে আবদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। এ সময় তার সাথে ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, গোলাম ফারুক আরিফ, মোমিনুল ইসলাম প্রমুখ। মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহকারে নেতৃবৃন্দ পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করেন এবং পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন মেহেরপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ জয়নাল আবেদীন, মেহেরপুর সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. গোলাম রসুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক আব্দুল মান্নান, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফিজুর রহমান পোলেন, সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুনায়েদ ইমতিয়াজ জুলফিকার, সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম আনন্দ, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কুদরুত-ই খোদা রুবেল, মুজিবনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হেলালউদ্দিন লাভলু প্রমুখ। এছাড়া মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর, কোমরপুর, মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর, গহরপুর, বারাদী, আমঝুপি, চাঁদবিল, বামনপাড়াসহ মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন আ’লীগ নেতা-কর্মীরা। মেহেরপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ শহরের বিভিন্ন পূজাণ্ডপ পরিদর্শন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের সিদ্ধেরস্বরী কালীমন্দির, হালদারপাড়া, নায়েববাড়ি, হরিসভা ও বামনপাড়া পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম পেরেশান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহসম্পাদক এমএএস ইমন, যুবলীগ নেতা ইয়ানুস আলী, মিজানুর রহমান জনি, মাহবুব হাসান ডালিম প্রমুখ।

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মির্জ্জা হাকিবুর রহমান লিটন বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে আন্দুলবাড়িয়া, বাজদিয়া ও নিশ্চিন্তপুর শারদীয়া র্দুগা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের আর্থিক অনুদান আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন। এ সময় ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা সামসুজ্জোহা, আলাউদ্দিন মণ্ডল, বিন্দা ভৌমিক, রানা, মোক্তারসহ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য মকবুল হোসেন। এমপি মকবুল হোসেন পরিদর্শনকালে গাংনী উপজেলার ১৭টি পূজামণ্ডপের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করে তাদের হাতে নগদ ৫ হাজার টাকা করে অনুদান তুলে দেন। উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, গাংনী পৌর মেয়র আহমেদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মকলেছুর রহমান মুকুল, সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুন্তাজ আলী, উপজেলা আ.লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আহসানুল্লাহ মহন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফি কামাল পলাশ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুজ্জামান শিপু, সৈনিকলীগের সহসভাপতি জিয়াউর রহমান, প্রগতি ক্লাবের সভাপতি মজনু প্রমুখ।

এদিকে গতকাল বিকেলে এ উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক। পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে এমএ খালেক ও খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশনের পরিচালক যুবলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম তাদের হাতে অনুদানের টাকা তুলে দেন। পরিদর্শনকালে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মহিবুর রহমান মিন্টু, উপজেলা আওয়ামী মহিলা যুব লীগের সভাপতি সাহানা ইসলাম শান্তনা, সাধারণ সম্পাদক ফারহানা ইয়াসমীন, গাংনী পৌর সভাপতি লাভলী খাতুন, পৌর সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রওশন আরা, যুবলীগ নেতা আনারুল ইসলাম বাবু, মিজানুর রহমান হাসু, পৌর ৭নং ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি জহুরুল ইসলাম প্রমুখ। এদিকে সন্ধ্যায় পৌর এলাকার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে সার্বিক খোঁজখবর নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন। সুষ্ঠু পরিবেশে প্রতিমা বিজর্সনের আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে বলে জানান গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি টিম গতকাল বৃহস্পতিবার জীবননগর উপজেলা পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাফিজ, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা উপপরিচালক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের প্রফেসর মফি উদ্দিন, সহকারী শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার আব্দুস সাত্তার প্রমুখ পরিদর্শন দলে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগ জানিয়েছে, প্রতিদিনের ন্যায় গতকালও বড়বাজার, মালোপাড়া, বেলগাছিসহ মুচিপাড়া পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায় ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক। এ সময় তার সাথে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি জাবিদুল ইসলাম জাবিদ, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেক, জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ জোয়ার্দ্দার, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগ নেতা অয়ন হাসান জোয়ার্দ্দার, সদস্য খালিদ মাহামুদ, কলেজ ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল প্রমুখ। পরে এলাকার আইনশৃঙ্খলা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই সব বিষয়ে এএসপির সাথে আলাপ-আলোচনা করেন বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।