চুয়াডাঙ্গার ফুরশেদপুরে পুকুরের পাড় থেকে গরুব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার

আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা : সন্দেহের তর ছোট স্ত্রী বুলুর দিকে

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: দ্বিতীয় বিয়ে করাই কাল হলো চুয়াডাঙ্গা সদরের ফুরশেদপুর গ্রামের ৫ সন্তানের জনক গরুব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের। বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে শোনা গেলেও পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে নিহত নাসিরের পরিবারের পক্ষ থেকে। ঘটনার পর থেকে সন্দেহের তীর ছোট স্ত্রী বুলুর দিকে। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার রাতে। পরের দিন গতকাল শনিবার সকাল ৬টার দিকে নিহত নাসিরের মরদেহ পুকুরের ধারে পড়ে থাকতে দেখে মাঠের লোকজন। ময়নাতদন্ত শেষে গতকালই রাত ৭টার দিকে নাসিরের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

Nazrul pic (3)

জানা গেছে, ঘরে প্রথম স্ত্রী ও ৫ সন্তান রেখে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ফুরশেদপুর গ্রামের আবু বাক্কার ছেলে গরুব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন (৪৫) বছরখানেক আগে দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়ির পার্শ্ববর্তী ইয়াসিনের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে ৩ সন্তানের জননী বুলুর সাথে। এর আগে নাসির একই ইউনিয়নের কোটালী গ্রামে ২০ বছর আগে খোদাবক্সের মেয়ে সাহিমার সাথে বিয়ে করে। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে নাসিরের পরিবারের লোকজ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। ফলে নাসির সারাদিন বাড়িতে থাকলেও রাত কাটায় দ্বিতীয় স্ত্রী বুলুর নিকট। এভাবেই চলতে থাকে তাদের দোটানা সংসার জীবন। ১৫ দিন আগে বুলু স্বামীর বাড়ি ওঠার জন্য নাসিরের পরিবারের নামে একটি মামলা করে। এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিস বৈঠকও বসে। বুলুর মোটা অঙ্কের অর্থদাবির কারণে সমাধান দিতে ব্যর্থ হয় গ্রাম্য মাতবররা। নাসিরের পিতা আবুবাক্কা ও বোন নুরুন নাহার অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ছোট স্ত্রী বুলু নাসিরকে মারধর করতো এবং মেরে ফেলার হুমকি দিতো। শুক্রবার রাতে নাসির বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে ছোট স্ত্রী বুলুর বাড়িতে যায়। যা অনেকেই দেখেছে। খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে নাসিরকে হত্যা করা হয়েছে। পরে আমাদের পুকুরের ধারে তার লাশ ফেলে রেখে গেছে বুলুর পরিবারের লোকজন। মানুষ বিষ খেলে পায়ের নিকট স্যান্ডেল সাজিয়ে সুঠামভাবে ঘুমের মতো পড়ে থাকতে পারে না। এটা একটি পরিকল্পিত হত্যা, যা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বুলুর পরিবারের লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নাসিরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালমর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে গতকালই রাত ৭টার দিকে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

এ নিয়ে গ্রামজুড়ে চলছে নানা কানাঘোঁষা। নাসির আত্মহত্যা করেছে নাকি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার লাশ ফেলে রেখে গেছে? নাসিরের লাশ যখন পুকুরের ধারে পড়ে ছিলো তখন বুলু বাড়িতে গিয়ে এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে সে বলে নাসির রাতে আমার বাড়িতে আসেনি। লাশের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলে, যেভাবে নাসিরের মরদেহ পড়ে আছে তাতে সে নিজে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। বিষ খাওয়ার পর মানুষ এতো সুন্দরভাবে ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। পুলিশ লাশ উদ্ধার করার সময় নাসিরের মুখ দিয়ে গেজা বের হয়েছে তা স্পষ্টতই ছিলো। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেগমপুর ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ এসআই মনির হোসেন বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বোঝা যাবে এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা।

এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে নাসিরের পরিবারের পক্ষ থেকে যাদের বিরুদ্ধে সন্দেহের তীর উঠেছে তাদের অনেকেরই ব্যস্ত দেখা গেছে। উল্লেখ্য, আবু বাক্কার দু ছেলে। কিছুদিন আগে বড় ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।