গৃহকর্মীর ছেলের হাতেই যাত্রাবাড়ির জোড়া খুন

স্টাফ রিপোর্টার: মাত্র দশ হাজার টাকা না পেয়ে যাত্রাবাড়ির কলাপট্টিতে গৃহকর্ত্রী রওশন আরা বেগমকে (৬৩) নৃশংসভাবে খুন করেছে গৃহকর্মীর ছেলে সাঈদ হাওলাদার। আর এ দৃশ্য দেখে ফেলায় আপন ছোট বোন কল্পনা আক্তারকেও (১২) হত্যা করে সে। গত বুধবার সাঈদকে রাজধানীর শাহজাহানপুর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডে রিয়াজ নামে তার এক বন্ধুও জড়িত ছিলো। সে পলাতক রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তর যাত্রাবাড়ির ওই বাসা থেকে রওশন আরা ও গৃহকর্মী লাকী আক্তারের মেয়ে কল্পনার গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন রওশন আরা বেগমের বাসায় যায় গৃহকর্মী লাকী আক্তারের ছেলে সাঈদ হাওলাদার (১৮)। তার সঙ্গে ছিল বন্ধু রিয়াজ। তারা দু’জনে বাসায় যাওয়ার পর তাদের নাস্তা খেতে দেন লাকী। নাস্তা খেয়ে তারা দু’জনেই ড্রইংরুমে বসে টিভি দেখে। এরপর লাকী আক্তার চিকিত্সকের কাছে যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন। তার সাথে সাঈদ ও রিয়াজও বের হয়। পরে লাকী ডাক্তারের কাছে গেলেও আবারও ওই বাসায় ফিরে আসে ওই দুইজন। বাসায় এসে রওশন আরা বেগমের কাছে তারা সবজি ব্যবসার জন্য দশ হাজার টাকা ধার চায়। কিন্তু রওশন তাদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এসময় তাদের বকাঝকাও করেন তিনি। বকাঝকার এক পর্যায়ে সাঈদ ডাইনিং টেবিলে থাকা ফলের ছুরি দিয়ে রওশন আরাকে গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় রিয়াজ তাকে সহযোগিতা করে। এ ঘটনা দেখে চিত্কার শুরু করে সাঈদের ছোট বোন শিশু কল্পনা। এ সময় রিয়াজ তাকেও হত্যা করার কথা বলে সাঈদকে। পরে সমস্যা হতে পারে এই আশংকায় রিয়াজের সহযোগিতায় আপন বোনকেও জবাই করে সাঈদ। এরপর একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল এবং ১৪ হাজার ৪০০ নগদ টাকা নিয়ে তারা বাসা থেকে পালিয়ে যায়।

মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনের ফুটপাতে ল্যাপটপটি ৪ হাজার এবং মোবাইলটি ৪শ টাকায় বিক্রি করে তারা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব স্বীকার করেছে সাঈদ। গৃহকর্মী লাকী আক্তার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানেন কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তার মেয়েও খুন হয়েছে। তারপরও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ আগে স্বামী পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  আবদুল কুদ্দসের মৃত্যুর পর রওশন আরার তিন ছেলে আর দুই মেয়ে পর্যায়ক্রমে পাড়ি জমান কানাডা আর আমেরিকায়। সন্তানদের সান্নিধ্য পেতে রওশন আরাও মাঝেমধ্যে বিদেশে যেতেন। বিশ্বস্ত গৃহকর্মী লাকী আক্তার ও তার মেয়ে কল্পনাকে পরিবারের সদস্য মনে করতেন রওশন আরা। ভালোবেসে মাস কয়েক আগে লাকীর মামাতো বোন চম্পাকেও বাসায় আশ্রয় দেন রওশন আরা। লাকীও বেশ স্বস্তির সঙ্গে অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে ওই বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। সেই সূত্র ধরেই রওশন আরার বাসায় যাতায়াত ছিল লাকীর ছেলে সাঈদের।