খেলার মাঠ দখলদারদের সাথে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ : এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

দামুড়হুদার মজারপোতায় বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের মালিকানা দাবি করে দখলের চেষ্টা

 

damurhuda pic. 19.08.15 (2)

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল খেলার মাঠ দখল করাকে কেন্দ্র করে স্কুলকর্তৃপক্ষ ও পুলিশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সাড়ে ১০টা থেকে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশ ১০ রাউন্ড শটগানের গুলিবর্ষণ করে। চামেলী নামের এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ওই গ্রামের তৌহিদের স্ত্রী। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। তার দেহে শটগানের ৪টি গুলিবিদ্ধ হয়।

damurhuda pic. 19.08.15 (5)

জানা গেছে, পুলিশের লাঠিপেটায় বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা দাবিদার আ. জলিলের ৫ ছেলে কদম আলী, আদম আলী, ওল্টু, জুলু, বকতিয়ার, মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে আ. হান্নান, গৃহবধূ পান সোনারাসহ কমপক্ষে ৯ জন আহত হয়েছে। অপরদিকে জমির মালিকানা দাবিদারদের শাবলের আঘাতে গোলাম রসুল নামের এক পুলিশ কনস্টেবল ও বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সদস্য আ.লীগ নেতা মতিয়ার রহমান মতি রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবলকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার মজারপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল খেলার মাঠে ওই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে জমির মালিকানা দাবিদার বৃদ্ধ আ. জলিল (৭০), রবিউল ইসলাম (৪০) ও সাথীকে (১৮) আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০-২৫ জনের নামে দামুড়হুদা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

এলাকাসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের মজারপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফুটবল খেলার মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফুটবল খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু ওই মাঠের পৌনে দু বিঘা জমি প্রায় ৩০ বছর আগে মাঠের পশ্চিম পাশের বাসিন্দা আব্দুল জলিল গংদের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। ভুলক্রমে রেকর্ডভুক্ত হলেও স্কুলকর্তৃপক্ষ তা সমাধানের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় মাস দুয়েক আগে ওই জমির মালিকানা দাবিদার বৃদ্ধ আ. জলিল গং বাঁশের বেড়া দিয়ে মাঠ ঘিরে তাদের দখলে নেয়। ওই দফায় গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় বেড়া সাময়িক অপসরাণ করা হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান হয় না। তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার রাতে মাঠের পশ্চিম পাশের বাসিন্দা আব্দুল জলিল গং আবারও ওই জমি নিজেদের দাবি করে দখলের উদ্দেশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দুটি টিনের ছাপড়া নির্মাণ করে।

গতকাল বুধবার সকালে এলাকাবাসী মাঠটি দখলমুক্ত করতে স্কুলকর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়। তারা বিষ্ণুপুর ক্যাম্পের পুলিশ সদস্য ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উচ্ছেদ অভিযানে যায়। এ সময় আব্দুল জলিলসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যরা বাধা দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। পুলিশের সাথেও আ. জলিল গং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিষ্ণুপুর, লক্ষ্মীপুর এবং হোগলডাঙ্গা ক্যাম্প পুলিশকে তলব করা হয়। আসে দামুড়হুদা থানা পুলিশও। আত্মরক্ষা ও জানমালের নিরাপত্তাসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ১০ রাউন্ড শটগানের গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে মজারপোতা গ্রামের তৌহিদের স্ত্রী গৃহবধূ চামেলী খাতুন (২৪) আহত হন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গৃহবধূ চামেলীর ডান পায়ে ১টি, ডান হাতে ১টি, বাম পায়ে ১টি ও মাথার বাঁ পাশে ১টি গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া পুলিশের লাঠিপেটায় জমির মালিকানা দাবিদার আ. জলিলের ৫ ছেলে কদম আলী (৪০), আদম আলী (৩৬), ওল্টু (৩২), জুলু (৩০), বকতিয়ার (২৭), মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে আ. হান্নান (৫০), গৃহবধূ পানসোনারাসহ (৩৮) কমপক্ষে ৯ জন আহত হন। অপরদিকে জমির মালিকানা দাবিদারদের শাবলের আঘাতে গোলাম রসুল (৩০) নামের এক পুলিশ কনস্টেবল ও বিষ্ণুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আ.লীগ নেতা মতিয়ার রহমান মতি (৪৮) রক্তাক্ত জখম হন। এর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবলকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে জমির মালিকানা দাবিদার বৃদ্ধ আ. জলিল, রবিউল ইসলাম ও সাথীকে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে আটক করে থানায় নেয়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০-২৫ জনের নামে দামুড়হুদা থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাড. রফিকুল আলম রান্টু জানান, যে খেলার মাঠটি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে তা বাংলাদেশ স্বাধীনের আগে থেকেই এলাকার মানুষ ওই ফুটবল খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। হঠাৎ করে জলিল গং মাঠের জমি দখলের চেষ্টা করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তিনি আরো জানান, জলিলের পিতা ঝড়ু মণ্ডল ওই দু বিঘা জমি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হিসেবে অনেক আগে দান করে গেছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই জমির মালিককে অন্যত্র ২৩ শতক জমিও দিয়েছে।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান জানান, আটক তিনজনকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্য স্কুলকর্তৃপক্ষের উদাসিনতাই দায়ী।