ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে ব্রাজিলের শুভ সূচনা

আত্মঘাতী গোল দিয়ে বিশ্বকাপের গোল শুরু হলেও টান টান উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার: ক্রোয়েশিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিক ব্রাজিল। এবারের বিশ্বাকাপে দু পক্ষের মোট ৪টি গোল হলেও গোলগুলো হয়েছে সবগুলোই ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে। অর্থাত ব্রাজিলের বিপক্ষের গোলটিও হয়ে ব্রাজিলের খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে। আত্মঘাতী গোলে ব্রাজিল খেলার ১১ মিনিটের মাথায় পিছিয়ে পড়ে। খেলার ২৯ মিনিটের মাথায় নেইমার দূরদান্ত গোল করে সমতা আনে। এভাবেই চলে প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল আক্রামনাত্মক হয়ে ওঠে। দলের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটিও করে নেইমার। খেলার ৭১ মিনিটে নেইমারের দ্বিতীয় গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। পাল্টা আক্রমণের পর আক্রমন করতে থাকে ক্রোয়েশিয়া। খেলার ৮৮ মিনিটের দিকে নেইমারকে মাঠ থেকে নামিয়ে নেয়া হয়। তখন ব্রাজিল ছিলো চাপের মুখে। এর মাঝেও ব্রাজিল দল ৯০ মিনিট পার করে অতিরিক্ত ৪ মিনিটের মধ্যে প্রথম মিনিটে তথা ৯১ মিনিটে ব্রাজিলের অস্কার তৃতীয় গোলটি করে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী খেলায় ৩-১ গোলে এগিয়ে নেয়। ব্রাজিল সমর্থকদের মাঝে আনান্দের বন্যা নেমে আসে।

এদিকে সংশয় ছিলো, তবে সংকল্পও ছিলো। নানা বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে তাই ব্রাজিল বিশ্বকাপের উদ্বোধন হলো সাও পাওলোতে। গতরাত বাংলাদেশ সময় সোয়া ১২টার দিকে উদ্বোধন হয়। এদিকে সারা বিশ্বের মতো চুয়াডাঙ্গাতেও বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনায় কমতি নেই। গতরাতে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের উদ্যোগে পৌর প্রাঙ্গণে, আর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কর্ণধার নঈম জোয়ার্দ্দারের ব্যবস্থাপনায় টাউন ফুটবল মাঠে বড় টিভিতে সকলের জন্য উন্মুক্ত পরিবেশে খেলা দেখার আয়োজন উন্মাদনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করে।

অলিম্পিকের মতো ঘটা করে উদ্বোধনের চল নেই ফুটবলবিশ্বকাপে। আরেনা দে সাও পাওলোতে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টায়শুরু হওয়া এ আয়োজন তাই খুব দ্রুতই ফুরিয়ে গেল। প্রায় ২৫ মিনিটেরএ অনুষ্ঠানে প্রয়াস ছিলো  ব্রাজিলের ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলার।

উদ্বোধনীঅনুষ্ঠানের চেয়ে অবশ্য স্বাগতিক দর্শকদের কাছেগুরুত্বপূর্ণ স্কলারি-নেইমারদের ‘হেক্সা’ জয়ের অভিযান। তার আগে একই মাঠেবিশ্ববাসীর সাক্ষাৎ ঘটলো ব্রাজিলের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে। প্রকৃতি, মানুষ আর ফুটবলের মাঝের বন্ধনকেই সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফুটিয়ে ধরাহলো, যা তেমন মনকাড়তে পারেনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না আসার ঘোষণা দিয়েছিলেনপপ তারকা জেনিফার লোপেস। পরে অবশ্য মত পরিবর্তন করেছিলেন। নাটকীয়ভাবেই স্টেডিয়ামেরমাঝখানের মঞ্চ ফুড়ে বের হলেন তিনি। পিটবুল আর ব্রাজিলিয়ান শিল্পী ক্লাওজিয়া লেইতের সাথে গাইলেনবিশ্বকাপের গান ওলে ওলা (উই আর ওয়ান)। তখন মনে হলো, অবশেষে দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে ব্রাজিলবিশ্বকাপ ২০১৪।

তবে বিশ্বকাপের মূল সূচনাটা হবে বৃহস্পতিবারবাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ দিয়েই। তখনই মূলত শুরু হবেএক মাসের এ মহাযজ্ঞ।বিশ্বকাপের আয়োজক কমিটির কর্তারা সব সময়ই বলেএসেছেন সময় মতো সব আয়োজন পূর্ণ হবে। তবে গত এক বছর ধরেই  বিশ্বকাপ বিরোধীআন্দোলন, স্টেডিয়াম নির্মাণে বারবার ফিফার দেয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়া, অবকাঠামোগত অন্য আরো অনেক শর্ত পূরণ না হওয়া – এসব সংশয় সুচ ফুটিয়েছে একেরপর এক।

ব্রাজিল সরকার আর বিশ্বকাপ আয়োজকদের প্রতিশ্রুতির অনেক অবকাঠামো ও প্রকল্পশেষে আর আলোর মুখ দেখেনি। শেষে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফাআয়োজকদের বলেছে, আর কিছু না হোক, স্টেডিয়ামগুলো উদ্বোধনী ম্যাচের আগে শেষহলেই চলবে।

শেষ পর্যন্ত উদ্বোধনী ম্যাচের শহর সাও পাওলোতেমেট্রোকর্মী আন্দোলন মিইয়ে গেছে। বেতন বাড়ানো ও সহকর্মীদের ওপর মামলা উঠিয়েনেয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবারওধর্মঘটের হুমকি দিয়েছিলো তারা। তবে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার পর স্থগিতহয়েছে তা। ব্রাজিলেরসবচেয়ে বড় শহরের বিশ্বকাপের ভেন্যু আরেনা দে সাও পাওলো স্টেডিয়ামেব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া উদ্বোধনী ম্যাচটি দেখতে যেতে আর কোনো সমস্যাই রইল নাসমর্থকদের।

অবশ্যউদ্বোধনের দিনও সাওপাওলোর একটি অংশে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।এখনসংশয়ের মেঘ কেটে যাওয়ার পর ব্রাজিলের আকাশে ধরা পড়ছে নানান রঙের স্বপ্ন।ছোট থেকে বড় স্বপ্ন দেখছে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ৩২টি দলই। কারও ইতিহাস গড়ারস্বপ্ন, কারও আবার নিজের আলোয় বিশ্বকাপকে রাঙিয়ে দেয়ার স্বপ্ন।