এদেশের মাটিতে কিছুতেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান হতে দেবো না

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আরও জঙ্গি হামলা হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের অর্থায়ন আর অতীতে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যাকারী বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নানা ঘটনা ঘটাতে পারে। হয়তো দেখা যাবে, একই সোথে ৭/৮টি জেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কিংবা বিভিন্ন মানুষের ওপর তারা আক্রমণ চালাচ্ছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সকলকে আরো সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে তারা এখানেই থেমে থাকবে না। তাদের নানা ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে তাদের এসব অপচেষ্টা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। আর জনগণের শক্তি নিয়ে আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করে দেশকে প্রগতি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব। সম্মিলিতভাবেই দেশবিরোধী এই শত্রুদের মোকাবেলা করে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলবোই ইনশাল্লাহ।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার গণভবন থেকে দেশের চারটি বিভাগের ৩১টি জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণের সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী ভিডিও কনফারেন্সে সূচনা ও সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রথমে সিলেট ও চট্টগ্রামের ১৫টি এবং পরে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬টি জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী। গত দু দিনে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৬টি বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে দেশবাসীকে জাগিয়ে তুলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না। এদেশের মাটিতে কিছুতেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান হতে দেবো না। ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এটা কখনোই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ ও মোকাবেলা করতে হবে। সন্ত্রাস-নাশকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আরো সচেতনতা সৃষ্টি এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসবিরোধী প্রচারণাটাও ব্যাপকভাবে সবাইকে করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের শুরু থেকে টানা ৯৩ দিন বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগীরা মিলে সারাদেশে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য কার্যক্রম করতে পেরেছিলো। তারা কিন্তু এখন থেমে থাকবে না। তারা জঙ্গি সম্পৃক্ত হয়েই কাজ করবে। তাই এ ব্যাপারে আরো সচেতন থাকতে হবে।

যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব যুদ্ধাপরাধীর আমরা বিচার করছি তাদের পরিবার-পরিজন আছে। তারা কিন্তু থেমে নেই। তারাও নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এমনকি তারা কেউ দেশে-বিদেশে রয়েছে। তাদের অর্থ-সম্পদের অভাব নেই। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা আক্রমণ চালাতে পারে। আমি আশা করি জনসচেতনতা সৃষ্টি করে জনগণের শক্তি নিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হবে।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিজ নিজ এলাকায় আরো সচেতন ও সজাগ থাকার পাশাপাশি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। এজন্য জনসচেতনা বাড়াতে হবে।

পবিত্র মদিনা শরিফে মসজিদ নববীতে বোমা হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এটাও আমাদের দেখতে হয়েছে। আমরা জানি না তারা কী ধরনের মুসলমান? মুসলমান হয়েও মুসলমান হত্যা করে পবিত্র ধর্মকে হেয় করা হচ্ছে। এটা বরদাশত করা হবে না। গুলশানের হামলার ঘটনার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলাকারীরা দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছে। তারা উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। কেন এমনটি ঘটছে তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন-ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, অভিভাবক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে সব সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক এটা আমরা চাই। শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, যখন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে, উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে- ঠিক সে সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা, উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করা, দেশকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে ঢেলে দেওয়ার একটা চেষ্টা হচ্ছে। দেশের মানুষের যখন কল্যাণ হচ্ছে, যখন মানুষের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের সামনে হেয় করছে তারা।

দেশের অন্যান্য জেলার সাথে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতেও পারলেও চুয়াডাঙ্গার সাথে কথা বলতে পারেননি। বিটিসিএল নেওয়ার্কের ত্রুটির কারণে তিনি চুয়াডাঙ্গায় সংযোগ পাননি। গতকাল প্রধানমন্ত্রী সকালে ৪ বিভাগের জেলা পর্যায়ে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। বিকেলে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাথে যুক্ত হতে পারেননি। তবে চুয়াডাঙ্গায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণের সাথে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। তিনি বলেন, নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যদি কোনো ছাত্র দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকে, লেখাপড়া করছে না, তাদের খোঁজ রাখবেন। হুইপ ছেলুন বলেন, সন্তান কার সাথে মেশে, কী করে-তাদের সম্পর্কে আপনাদের আরও জানা উচিত। পারিবারিক বন্ধন যাতে সৃষ্টি হয়, ছেলেমেয়েরা যেন বাবা-মাকে কাছে পায়, তাদের মনের কথা বলতে পারে, সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, ৬ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক মেজর মঈন, জেলা পরিষদ প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খুস্তার জামিল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান মাও. আজিজুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম মামুন উজ্জামান, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হাফিজ, জেলা শিক্ষা অফিসার আজাহার আলী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষ অফিসার রমেন্দ্রনাথ পোর্দ্দার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এবিএম রবিউল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সভাপতি আজাদ মালিতা, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আকসিজুল ইসলাম রতন, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাড. সোহরাব হোসেন, জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল কাসেমী, বিএডিসি জামে মসজিদের পেশ ইমাম ইবাদত হোসেন, বায়তুন আনাম জামে মসজিদের ইমাম জাহিদ হাসান, ফার্স্টক্যাপিট্যাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার হারুন অর রশিদ, কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম মুফতি রুহুল আমিন, কেদারগঞ্জ জামে মসজিদের ইমাম রুহুল আমিন, বদরগঞ্জ বাকি বিল্লাহ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল হাওলাদার।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বললেন মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হালিম। গতকাল বুধবার ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলা প্রশাসকদের সাথে কথা বলার সময় সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হালিম মেহেরপুর জেলাবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন। তিনি জেলার উন্নয়নসহ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন, জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, আতরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খায়রুল হাসান, গণপূর্ত বিভাগের নিবাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, মেহেরপুর পৌর মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু, গাংনী পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম, মেহেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যন অ্যাড. মারুফ আহমেদ বিজন, মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান মুরাদ আলী, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হাসান, গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি আলহাজ আনছার উদ্দিন বেলালীসহ জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।