উল্টো জনতাকে আসামি করে পুলিশের মামলা

 

স্টাফ রিপোর্টার: টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় মা-ছেলেকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে লাশ হয়েছে তিনজন। জনতার বিক্ষোভে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করেছে। গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েকজন এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারাই বলছেন, অন্তত ৭৮টি গুলি ছোড়া হয়েছে। অথচ এখন উল্টো সেই জনতাকে আসামি করেই মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে কালিহাতী ও ঘাটাইল থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয়।

মামলার বিষয়ে জানতে উভয় থানার ওসির মোবাইলফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ ফোন ধরেননি। টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) জমির উদ্দিন বলেন, মামলা হয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে কতজনকে আসামি করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

পরে টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকারও মামলার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গুলির ঘটনায় ঘাটাইল ও কালিহাতী থানার সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন কনস্টেবল ও তিনজন এসআই রয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ওই সাতজনের নাম জানাতে পারেননি।

পুলিশের গুলির ঘটনায় কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলায় লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছে, বিনা উসকানিতেই পুলিশ গুলি করেছে। আর সে গুলিতে নিরীহ তিনজনের প্রাণ গেছে। অবশ্যই এ ঘটনার বিচার হতে হবে।

পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে গুলির ঘটনায় জড়িত হিসেবে যেসব পুলিশ সদস্যের নাম পাওয়া যাবে তাদের প্রত্যাহার করা হবে। আর চূড়ান্ত তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে একজন অতিরিক্ত ডিআইজিকে প্রধান করে গতকাল তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক মো. মোখলেছুর রহমানের নির্দেশে গতকাল এ কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) মো. আলমগীর আলমকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান ও টাঙ্গাইল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম খানকে সদস্য করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার কালিহাতী থানা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল নিহত তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনকে ইতিমধ্যে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর চিকিৎসায় আরো অর্থ লাগলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার জানান, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর নিহত শ্যামল চন্দ্রের পরিবারকে বাড়ি করার জন্য স্থায়ী জায়গা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।