ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় টাকা জালিয়াত চক্র

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদকে সামনে রেখে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে টাকা জালিয়াতচক্র। তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ চক্রের মূল হোতাসহ ৬ সদস্যকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, গত এক বছরে টাকা জালিয়াতিচক্রের ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে জালটাকা ও টাকা তৈরির সরঞ্জাম। এরপরও এ চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে ঈদ ও রোজার মরসুমে তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। সোমবার রাতে ঢাকা মিরপুরের একটি ভাড়া বাসা থেকে এই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হচ্ছে- জালিয়াত চক্রের মূল হোতা শফিকুল ইসলাম ওরফে শামীম, সোহাগ অধিকারী, সুমন আহমেদ, বায়েজীদ উদ্দিন, সিদ্দিকুর রহমান ও জেসমিন আক্তার। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ছাপা ও অর্ধছাপা বাংলাদেশি ১০০০ ও ৫০০ টাকা মূল্যমানের বিপুল পরিমাণ জালনোট, তা তৈরির কাগজ, ১২টি ফ্রেম, রং, নিরাপত্তায় ব্যবহৃত থ্রেট সুতা, ৩টি ল্যাপটপ, ১টি ডেক্সটপ কম্পিউটার, ৩টি প্রিন্টার, ১২ বান্ডিল ১০০০ ও ৫০০ টাকা লেখা জলছাপ দেয়া কাগজ, ২টি কার্টার ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। নাজমুল আলম আরও জানান, চক্রের প্রধান শফিকুল তার সহযোগীদের নিয়ে ছয়-সাত বছর ধরে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করার পেশায় জড়িত। এর আগেও দুবার শফিকুল পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। জামিনে বেরিয়ে আবার পুরোনো পেশায় ফিরে যায়। সে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে জাল টাকা তৈরির কারখানা স্থাপন করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা, ভারতীয় রুপি, ডলার, ইউরোসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা তৈরি করে। জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুল জানায়, প্রায় আট বছর ধরে জাল নোটের ব্যবসা করছে সে। টাকা ছাড়াও ভারতীয় রুপি, ডলার, ইউরো, দিরহাম, রিয়ালসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের জাল নোট তৈরি করে। একবার দেখে সেটিকে ভালোভাবে পরখ করে যেকোনো ধরনের মুদ্রা নিখুঁতভাবে জাল করতে পারে শফিকুল। তারা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জাল নোট বাজারজাত করে। তিন ধাপে এসব জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়। প্রথম ধাপে জাল মুদ্রা নোট প্রস্তুতকারীরা পাইকারি বিক্রেতার কাছে এক হাজার টাকার নোটের একটি বান্ডিল (এক লাখ টাকা) ৪০-৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। দ্বিতীয় ধাপে পাইকারি কারবারিরা আবার এসব টাকা খুচরা কারবারির কাছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ৩য় ধাপে খুচরা কারবারিরা এসব টাকা নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে সুকৌশলে ঢাকার গুলিস্থান, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, সদরঘাট, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, কারওয়ান বাজার, গাবতলী ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে। অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষত, বৃদ্ধ, দরিদ্র ও নিম্নআয়ের লোকেরাই হচ্ছে নোট জালকারীদের মূল টার্গেট। ফুটপাতে হকার, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন জনকে টার্গেট করে কৌশলে জাল নোট গছিয়ে দেয়।

আটককৃতরা জানায়, মূলত ঈদ ও রোজাকে সামনে রেখে তারা এই ব্যবসা চলে। চলতি বছর তারা ৫০ লাখ টাকা মানের জাল নোট তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু টাকা তারা বাজারে ছেড়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় মামলা হয়েছে। তাদের অপর সহযোগীদের গ্রেফতারের উদ্দেশে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।