আজ যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর

আলমডাঙ্গা দুর্লভপুরের বীর মুুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বার হত্যা মামলা

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার দুর্লভপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন মেম্বার হত্যা মামলার ২ আসামি মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত রবকুল মণ্ডলের মেজ ছেলে মনোয়ার হোসেন ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দু’বার ইউপি মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। বৃহত্তর এ অঞ্চলে তিনি কৃতিখেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দেশে তো বটেই, ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন অঞ্চলেও তিনি হা-ডু-ডু খেলেছেন। ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দ্দারের বাড়িতে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি কতিপয় চরমপন্থিরা কুপিয়ে হত্যা করে মনোয়ারকে। ওইদিনই মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বারের ভাই অহিম উদ্দীন বাদি হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যা মামলা দীর্ঘ এক যুগ পর ২০০৬ সালে এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ৩ জনের ফাঁসি ও দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে ঝড়–সহ ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা ২ জন হলেন দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়া। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস পায়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে আপিল করলে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত একজন ও যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশপ্রাপ্ত ২ জন আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দণ্ডাদেশ মওকুফ করে আপিল বিভাগ। বাকি দু’জনের ফাঁসির দ-াদেশ বহাল থাকে। দীর্ঘ ২৩ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর করা হবে। তবে কোনো কারণে আজ ফাঁসি স্থগিত হলে আগামি রোববার কার্যকর হবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব স্পস্ট করে কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি বিশ্বস্তসূত্র এ ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, নিহত মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বারের ছেলে কুমারী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ২ আসামির ফাঁসির বিষয়টি কয়েকদিন পূর্বে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ও চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে জানান। তবে কবে, কখন ফাঁসি কার্যকর করা হবে তা জানাননি।
তবে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের বিশেষ শাখা আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে এ বিষয়ে লিখিতভাবে অবগত করানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ফাঁসি হওয়ার পর লাশ স্বজনরা গ্রহণ করবে কি-না, কিংবা যারা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক তাদের সাথে যোগাযোগ করে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়।
থানাসূত্রে জানা যায়, ঝড়ুর লাশ গ্রহণ করবেন তার ছেলে তরিকুল ইসলাম। তিনি উপজেলার বেতবাড়িয়া গ্রামে বসবাস করেন। এছাড়া মোকিমের লাশ গ্রহণ করবেন তার ছেলে মখলেছ আলী। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামে বসবাস করেন। লাশ গ্রহণের জন্য তরিকুল ও মখলেছ আলী আজ বৃহস্পতিবার যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে যাবেন বলে পুলিশকে নিশ্চিত করেছেন।
দীর্ঘ প্রায় ২ যুগ পর আজ হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হতে চলেছে। নিহত মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বারের পরিবারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে, নিহত মনোয়ারের স্ত্রী চায়না খাতুন বলেন, এক সময় বছরের পর বছর আমরা চোখের জলে বুক ভাসিয়েছি। আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছেন। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। খুনি দু’জনের ফাঁসি হচ্ছে। এখন খুনির আত্মীয়দের কান্নার পালা।
নিহত মনোয়ারের মেজ ছেলে ইউপি মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দীর্ঘ ২৩ বছর পর পিতা হত্যার বিচার পাচ্ছি। অবশ্যই খুশি। আমার নিরপরাধ পিতাকে হত্যার পর জনযুদ্ধের সময় কতো হুমকি সহ্য করেছি। নিজেদের জীবন বাঁচাতে খুনিদের জীবন বাঁচানোর ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছে। তারপরও আমরা খুশি।
মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার বাদীর ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বলেন, একসঙ্গে দু’ভাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। কতো স্মৃতি আছে আমাদের। সেই ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রাণপ্রিয় ভাইকে হারিয়ে নিরবে-নিভৃতে কতো ডুকরে ডুকরে কেঁদেছি। বিলম্বিত বিচার অবিচারের সামিল। মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার না পেয়ে কতো অসহায় চোখের জল ফেলেছি তা কাউকে বোঝাতে পারবো না। দু’যুগ পরে হলেও খুনিদের ফাঁসি হওয়ার সংবাদ শুনে ভালো লাগছে বলে তিনি জানান।