অশ্রুসজল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা

 

স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন। স্মৃতিবিজড়িত কারাগারে প্রবেশ করেই প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনীর জন্য রক্ষিত ১৪৫টি দুর্লভ আলোকচিত্র দেখার পর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বঙ্গবন্ধুর এই দুই কন্যা। এরপর জাতির পিতা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘসময় যে কক্ষটিতে বন্দী থেকেছেন তা ঘুরে ঘুরে দেখেন। বিশেষ করে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে লাগানো কামিনী ও সফেদার গাছের নীচে দাঁড়িয়ে তার দুই কন্যা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বাবা বঙ্গবন্ধুর বন্দী জীবনে থাকার কক্ষ, ব্যবহূত চৌকি, টেবিল, চেয়ার, ভাঙা চায়ের কাপ, সিলভারের কেটলিসহ তৈজসপত্র দেখার সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, কখনো মাঝারি বৃষ্টির মধ্যেই স্মৃতির কারাগার পরিদর্শনকালে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার চোখে-মুখে ছিলো বেদনার নীল রঙ। এসব জিনিসপত্র স্পর্শ করে দু বোন যেন তার পিতার স্পর্শ নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় দু বোনের চোখেই ছিলো অশ্রুতে ভেজা। বৃষ্টির মধ্যে এই আবেগাক্রান্ত পুরোনো স্মৃতি মনে হয় যেন আকাশটাও কাঁদছে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার চেহারায় বিষাদের ছাপ আর সব হারানোর বেদনা যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। এরপর জাতির পিতার অজু করার স্থান ও রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহূত ঘরটিও ঘুরে ঘুরে দেখেন তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন শেখ রেহানার পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘর থেকে বেরিয়ে এসে পুরাতন কারাগারের নকশা দেখেন। এ সময় আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে নকশার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী যান জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর ‘মৃত্যুঞ্জয়ী সেলে’। সেখানে প্রবেশের মুখেই রয়েছে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লাশ হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত যে জায়গাটিতে মরদেহ রাখা হয়েছিলো সান বাঁধানো সেই স্মৃতি চিহ্ন। জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরে প্রবেশের আগে সামনে সারিবদ্ধভাবে নির্মিত চার জাতীয় নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় শেখ রেহানা ও রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

মৃত্যুঞ্জয়ী সেলের প্রথম কক্ষ, যে কক্ষে ৩ নভেম্বর কালরাতে ঘাতকরা জাতীয় ৪ নেতাকে একসঙ্গে জড়ো করে অত্যন্ত নিষ্ঠুর পৈশাচিক কায়দায় গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিলো, সেই কক্ষের সামনে এসে মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। সারিবদ্ধভাবে তিনটি কক্ষে জাতীয় চার নেতা যেখানে থাকতেন, সেসব ঘরে প্রবেশ করে তাদের ব্যবহূত জিনিসপত্রও ঘুরে ঘুরে দেখেন তারা। কক্ষটিতে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী দুর্লভ কিছু আলোকচিত্র নিয়ে তৈরি করা গ্যালারি পরিদর্শন করেন। এখানে ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর কারাবরণের সময় থেকে নানা সময়ের আন্দোলন-সংগ্রামের প্রায় ১৪৫টি দুর্লভ আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।

দেশ গঠনের নানা কার্যক্রম, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফর, বঙ্গবন্ধুর টানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ ছুটে আসা, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তার কন্যা শেখ হাসিনাসহ পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নানা সময়ের স্মৃতিকাতর ছবিগুলোও ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া কারাগারে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের মাত্র চার-পাঁচ হাত দূরেই বঙ্গবন্ধুর ব্যবহূত চশমা ও তামাকের পাইপের প্রতীকী স্থাপত্য নিদর্শনও প্রত্যক্ষ করেন তারা। কারাগার পরিদর্শন শেষে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার চেহারায় বেদনার ছাপ ছিলো স্পষ্ট।