অপহরক রাকিবের ডেরায় সন্ধ্যা নামতেই বাজানো হতো উচ্চ স্বরে গান

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সজিবকে তারই সিনিয়র বন্ধু সাকিলকে দিয়ে দীর্ঘদিনের দাগী নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য রাকিবের ডেরায় নেয়া হয়। দামুড়হুদা বৃক্ষমেলার মাঠ থেকে সাকিল কৌশলে সজিবকে চুয়াডাঙ্গা সিঅ্যান্ডবিপাড়াস্থ মৎস্য অফিসের অদূরবর্তী ওই ডেরায় রেখে সে ফিরে যায়। একটি ঘরে আটকে রাখে অপহরকচক্র। সূত্র এরকমই তথ্য দিয়ে বলেছে, সজিবকে ওই ডেরার অন্ধকার ঘরে বন্দি রাখলেও তার মোবাইলফোনটি রাকিবসহ তার সহযোগীরা নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী জেলা মেহেরপুরের আমঝুপিতে। সেখানে বসেই সজিবের মোবাইলফোন দিয়ে তার মায়ের নিকট ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করা হয়। এসব তথ্য এখন ৱ্যাব-পুলিশের নখদর্পনে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া মনিরামপুর চকপড়ার ইমান আলী ভিকুর ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৬) হাই স্কুলের গণ্ডি পার করতে পারেনি। কয়েক বছর আগে সট্টু বলে পরিচিত ছিলো এলাকায়। বয়স বেড়েছে, বেড়েছে অপকর্মের মাত্রা। স্থানীয়দের অনেকেই এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, ওর অপরাধের মাত্রা অনুপাতে মামলার সংখ্যা খুবই কম। অবাক হলেও সত্য যে, নিজ গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস না করলেও সর্বশেষ নির্বাচনে ইউপি মেম্বার পদে নির্বাচিত হয়। নির্বাচনের সময় তার সাথে ঘুরতো বহিরাগত। অস্ত্রের মহড়াও দেখে এলাকাবাসী। অভিযোগ করতে সাহস করেনি। নির্বাচনে শুধু হুমকি ধামকিই নয়, প্রচুর অর্থও ছড়িয়েছে। ভোটে নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই তার চার্জার লাইট কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে মূলত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। চুয়াডাঙ্গা সিঅ্যান্ডবিপাড়ায় জেলা মৎস্য অফিসের অদূরে রাকিবের শ্বশুর বাড়ি। পাশেই শ্বশুরের আরও একটি বাড়ি। ওই বাড়িটি শ্বশুর কোরবান তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে মাঠান জমি দিয়ে বিনিময় করে। এই বাড়িতে রাকিব চার্চার লাইট কারখানা করলেও ওখানে মূলত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো। গত কয়েক মাস ধরে দিনে শুন শান নিরবতা থাকলেও সন্ধ্যার পর উচ্চ স্বরে গান বাজানো হতো। গানের শব্দে ভেতরের কিছুই বুঝতে পারেননি প্রতিবেশীরা। গত ৩১ আগস্ট ভোরে ওই ডেরার ওঠোনে নির্মাণ করা সেফটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে স্কলছাত্র সজিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করার পর চমকে ওঠে সকলে। বুঝতে পারে চার্জার লাইট কারখানার নামে সেখানে কী হয়েছে।

রাকিব সিঅ্যান্ডবিপাড়স্থ তারই এক চাচা শ্বশুরবাড়িতে প্রথম স্ত্রী নিয়ে ভাড়ায় বসবাস করতো। দ্বিতীয় স্ত্রী আলুকদিয়া চকপড়ার ইতি খাতুন পিতার বাড়িতেই থাকে। ৪ মাস আগে ইতিকে বিয়ে করে। রাকিব সম্পর্কে তথ্য নিতে গেলে তার গ্রামের অধিকাংশ নারী পুরুষ মুখ খুলতে চাননি। তবে একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার চাঞ্চল্যকর জুবাইর খুন-গুম মামলার আসামি ছিলো। ওই সময় ক্রসফাঁয়ার হচ্ছে-হবে বলে খবর রটে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বেশ কিছুদিন জেলহাজতে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও মেতে ওঠে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। কয়েক বছর আগে এসব ছিলো অপেন সিক্রেট। অবশ্য কয়েক বছর ধরে রাকিবকে প্রকাশ্যে তেমন অপকর্মে দেখা যায়নি। তবে তার গড়ে তোলা গ্যাঙের অপতৎপরতা মাঝে মাঝেই টের পেতেন এলাকাবাসী। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের আলুকদিয়া কানাপুকুরের আশে পাশে যাই ঘটেছে তার সবই ওই গ্যাঙের। অনেকেরই অভিমত, পুলিশকে ম্যানেজ করেই কৌশলে রাকিব গ্যাং দীর্ঘদিন ধরে অপরাধমূলক নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিলো। অবশেষে দামুড়হুদা ব্রিজমোড়পাড়ার মৃত হাবিবুর রহমান হাবিবের ছেলে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সজিবকে অপহরণের পর হত্যা করে তারই ডেরায় গুম করে। ৱ্যাব-পুলশ বর্তমানে রাকিব গ্যাঙ পতনের মুখে। ইতোমধ্যে রাকিবের শ্বশুর-শাশুড়ি ও শ্যালককে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। সজিবকে অপহরণের পর খুন-গুম মামলায় রিমান্ডের আবেদনও জানানো হয়েছে।

রাকিব গ্যাঙের রাকিব, সবুজসহ দামুড়হুদার সাকিল ও শাহীনকে পৃথকসময়ে শাদা পোশাকে মাইক্রোতে তুলে নেয়া হয় বলে তাদের নিকটজনেরা জানালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কোনটির তরফেই স্বীকার করা হয়নি। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সিঅ্যান্ডবিপাড়ায় রাকিবের গড়ে তোলা ওই ডেরাটি দেখতে গত কয়েকদিন ধরেই  উৎসুক জনতার ভিড় জমছে। গতকাল শনিবার বিকেলে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে খেঁচুড়ি রেধে মিলাদ দিয়েছে। বাড়িটি অরক্ষিত। অথচ ওই বাড়ির একটি ঘরে পড়ে রয়েছে দুটি থালা, একটি হ্যান্ডগ্লব। ওই ঘরেই কি আটকে রাখা হয়েছিলো সজিবকে?