২৪ দিনেও হদিস মেলেনি শরিফুলের : সন্দেহের তীর জোহার দিকে

গাংনী প্রতিনিধি: নিখোঁজের প্রায় দু মাস পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি মেহেরপুর গাংনীর কল্যাণপুর গ্রামের দিনমজুর কৃষক শরিফুল ইসলামের। পথের কাঁটা পরিষ্কার করতেই তাকে হত্যার পর গুম করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পরিবার। এ নিয়ে অজানা আতঙ্ক আর নানা শঙ্কায় দিন কাটছে শরিফুলের পরিবারের। নিখোঁজের পেছনে সন্দহের তীর একই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সামসুজ্জোহা ওরফে জোহার দিকে। তবে এলাকার আলোচিত সুদ ব্যবসায়ী ও মাদকব্যবসার গড ফাদার হিসেবে পরিচিত জোহা মিলিটারির হুমকি-ধামকিতে এখন অসহায় হয়ে পড়েছে শরিফুলের পরিবার। নিখোঁজ শরিফুল ইসলাম কল্যাণপুর গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে।
গত ১৫ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি শরিফুল ইসলাম। তার স্ত্রী আনেছা খাতুন জানান, দারিদ্র্যের কারণে এলাকার অভিযুক্ত শীর্ষ মাদকব্যবসায়ী সাবেক সেনা সদস্য সামসুজ্জোহা ওরফে জোহা মিলিটারির ফেনসিডিল বহনকারী হিসেবে কাজ করতেন শরিফুল। ফেনসিডিলের চালান নিয়ে পৌঁছে দিলে ৩ থেকে ৪শ টাকা মজুরি দিতো জোহা মিলিটারি। ফেনসিডিল পাচার ঝুঁকিপূর্ণ ও আইনবিরোধী হওয়ায় এবং সন্তানদের কথা ভেবে প্রায় বছরখানেক আগে জোহাকে জানিয়ে দেন তিনি আর কাজ করবেন না। সেই থেকে জোহা তার ওপর নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলো জোহা। নিখোঁজের একদিন আগে ১৪ নভেম্বর বিকেলে জোহা তার দু সহযোগী লাবলু ও রিপনের সাথে হাড়াভাঙ্গা সেন্টারপাড়াতে বসে একজনকে হত্যা করে গুম করার কথা আলাপ করেছিলো। সেদিন শরিফুলের ভগ্নিপতি শওকত আলী সেটা শুনে বাড়ি এসে জানিয়ে দেন।
বর্তমানে দু মেয়ে নিয়ে নিখোঁজ স্বামীর ফিরে আসার আশায় বুক বেধেছেন স্ত্রী আনেছা খাতুন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে অসহায় এই পরিবার এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছে। পরিবারটিতে শুধুই কান্নার রোল বইছে। স্বামী ছাড়া দুই কন্যা শিশুকে কিভাবে মানুষ করবেন তা নিয়ে অথই সাগরে পড়েছেন স্ত্রীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।
এদিকে শরিফুল ইসলাম নিখোঁজের পর থেকেই জোহা মিলিটারি বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে শুরু করে নানা ধরনের টালবাহানা। মামলা করতেও নিষেধ করে পরিবারকে। অবাধ্য হলে শরিফুলের মতো তাদেরও পরিণতি ভোগ করতে হবে বলেও হুমকি দিয়েছে। শরিফুল ইসলামের ভাই মিনারুল ইসলাম জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে জোহা মিলিটারি নানাভাবে তৎপর হয়ে ওঠে। নিখোঁজের দু দিন পর তাদের বাড়িতে এসে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়। পরদিন মিনারুলের সাথে করে থানায় যায়। কিন্তু থানায় জিডি করলেও মিনারুলকে কৌশলে থানায় কারো সাথে কথা বলতে দেয়নি জোহা মিলিটারি। শরিফুলের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও জিডিতে উল্লেখ করেনি জোহা। নিখোঁজের আগে জোহা মোবাইলে শরিফুলকে ডেকে নিয়ে যায় বলে জানতে পারে পরিবার। তাই শরিফুলের ব্যবহৃত মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করলেই নিখোঁজের আসল রহস্য জানা যাবে।
অভিযুক্ত জোহা মিলিটারির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে প্রশাসনের গোয়েন্দা বিভাগের লোক দাবি করে সাংবাদিকদের জানান, আমার মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের সাথে শরিফুল জড়িত। এছাড়া সে এলাকার সন্ত্রাসী ছিলো। তাকে কে হত্যা করতে পারে তা আমার জানা নেই। শরিফুলের পরিবার থানায় জিডি করার পর গাংনী থানার এএসআই মোস্তাফিজুর রহমান ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে নগদ ২ হাজার ৫শ টাকা ও মোটরসাইকেলের ২ লিটার পেট্রোল নিলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তিনি অজ্ঞাত কারণে জোহা মিলিটারির সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন বলে অভিযোগ শরিফুলের পরিবারের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এএসআই মোস্তাফিজুর রহমান লাকি অভিযোগ মেনে নিয়ে বলেছেন, আমি সেখানে (কল্যাণপুর) দু দিন তদন্ত করতে গেছি। আমার খরচ খরচা বাবদ এটা নেয়া হয়েছে। তবে আমি তদন্তের পাশাপাশি এ ঘটনায় জোহা মিলিটারিকেও সন্দেহের তালিকায় রেখেছি। জোহার মাদক ও সুদ ব্যবসার ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।
এ বিষয়ে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর সাথে কেউ জড়িত থাকলে সে যতোই শক্তিশালী হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। জোহা মিলিটারির দিকে পুলিশের সন্দেহের তীর রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এএসআই মুস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে দাপ্তরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।