হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ : পাসের নিশ্চয়তা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ

 

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে : এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষার জয়

মহাসিন আলী: প্রায় দুই দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে পদখালী না থাকা কিংবা নতুন নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়ায় উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পরও সাধারণ শিক্ষা শিক্ষার্থীর জন্য তেমন কোনো কাজে আসছিলো না। তখন সরকার বেকারত্ব দূরিকরণ এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বি.এম) কোর্স চালু করেন। ২০০০ সাল পূর্ববর্তী সময়ে সরকার সারাদেশের বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ওই কোর্স চালু করেন। হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণ, পাসের নিশ্চয়তা ও কর্মসংস্থান হওয়ায় এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বি.এম) কোর্স শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই সরকার ২০০০ সালের পূর্ববর্তী সময়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে জেলার দু-একটি প্রতিষ্ঠানে ওই কোর্স চালু করলেও অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের চাহিদার কারণে ২০০০ সালের পরবর্তী সময়ে এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বি.এম) কোর্সের জন্য সারাদেশের জেলায় জেলায় নতুন নতুন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। পাশাপাশি বেশ কিছু উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওই কোর্স সংযোজন করেন।

চলতি আগস্ট মাসের ১৮ তারিখে একযোগে সারাদেশের ১০ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যেখানে গড় পাসের হার ছিলো ৭৮ দশমিক ৭০ ভাগ। সেক্ষেত্রে ৮ সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিলো ৭১ দশমিক ৩৫ ভাগ এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৭ ভাগ। ৮ সাধারণ শিক্ষা  বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার পরীক্ষার্থী ছিলেন ১০ লাখ ১১ হাজার ৭৮৯ জন। পাস করেছেন ৭ লাখ ২৯ হাজার ৮০৩ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৫০ জন। যার মধ্যে শুধু বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪১ হাজার ৪৬৮ জন। বাকি ৭ হাজার ৪৮২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক, ইসলামের ইতিহাস ও সঙ্গীত বিভাগ থেকে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ১ লাখ ২ হাজার ২৪৮ পরীক্ষার্থীর সকলে পরীক্ষায় অংশ নেন এবং ৮৬ হাজার ৪৬৯ জন পাস করেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৮৭ জন। সুতারং দেখা যায় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারের পাশাপাশি জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হারও বেশি।

মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মহা. আখতারুজ্জামান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন- এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) কোর্সে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাসের নিশ্চয়তা পান। কারণ এখানে আছে সেমিস্টার সিস্টেম। হাতে কমলে (ব্যবহারিক) শিক্ষা বেশি থাকায় বেশি বেশি নম্বর তোলাও সম্ভব। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার যেকোন বিভাগ থেকে নূন্যতম পয়েন্ট (জিপিএ) পেয়ে এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। দু বছরের এ কোর্সে শিক্ষা খরচও কম। এছাড়া গরিব ও মেধাবী শতকরা ৬৫ ভাগ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পেয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন- বিগত ৭ বছর তার প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। চলতি বছরে ৫৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জন জিপিএ-৫সহ শতভাগ পাস করেছেন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৬ জন হলেন- মহুয়া, মায়াবী আক্তার, রিক্তা খাতুন, বিলকিস খাতুন, সুমাইয়া ও গোলজান আরা। যাদের এসএসসি পরীক্ষায় সর্বনিম্ন জিপিএ ৩ দশমিক ৬৩ থেকে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ১৯ ছিলো। এছাড়া গত বছরে (২০১৫) এ প্রতিষ্ঠান থেকে ২ জন জিপিএ-৫ পেয়ে ছিলেন এবং জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীনে ৮ জন স্নাতক (সম্মান) এ ভর্তি হয়েছেন।

আয়েশা আক্তার সুইটি ২০১৫ সালে মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও (বিএম) কলেজ থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে পাস করেছেন। তিনি বলেন- আমি একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাস করি গ্রেট পয়েন্ট ‘এ’ নিয়ে। পাস করার পরে আমি সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের পূরবর্তী বছরের রেজাল্ট দেখে ও প্রতিষ্ঠানের স্যারদের আগ্রহে সাঁড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠানের এইচএসসি (বিএম) কোর্সে ভর্তি হই। জিপিএ-৫ পেয়ে আমি খুশি হয়েছি। সর্বোপরি আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে স্নাতক (সম্মান) এ ভর্তি হতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই। আমি ইংরেতে অনার্স (সম্মান) নিয়ে স্নাতক ভর্তি হয়েছি। কিন্তু আমার সাথে ভালো পয়েন্ট নিয়ে এসএসসি পাস করা অনেক শিক্ষার্থী অন্য প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি ভর্তি হয়ে খুব কম পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছেন আবার অনেকে ফেল করেছেন।

মেহেরপুর মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ আলী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ শাহী উদ্দিন বলেন- তার প্রতিষ্ঠান থেকে এ বছর শতকার প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। যাদের মধ্যে ২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন- সরকার শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপান (বিএম) কোর্স চালু করেছেন। যে কারণে শিক্ষার্থীরা যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। তরুণ প্রজন্ম শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগ পেয়ে বোর্ড নির্ধারিত সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন। এতে শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা কোর্সের যুগোপযোগী বিভিন্ন শাখায় ভর্তি হয়ে মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করছেন এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পথ সুগম করছেন। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য দরখাস্ত করার সুযোগ পাচ্ছেন।