জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা : কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

 

স্টাফ রিপোর্টার: জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট তথা জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এই পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।  এর প্রেক্ষিতে গত ৩১ আগস্ট পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে জেএসসি কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এতে জেএসসি পরীক্ষা বিষয়ে জারি করা পরিপত্র এবং সরকারের সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করা হবে না তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দুই শিক্ষা সচিবসহ ৬ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রিট আবেদনটি দায়ের করেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিট আবেদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ১০ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছিলো। জেএসসি পরীক্ষা নেয়ার সরকারের এ সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মেধাশূন্য করছে বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়। এদিকে জেএসসি পরীক্ষা হবে কি হবে না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি আদালতে যাওয়ায় তাদের পড়ালেখাও বিঘ্নিত হচ্ছে। নভেম্বরে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, পঞ্চম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার আদলে নেয়া হচ্ছে সমাপনী পরীক্ষা। আবার এই পরীক্ষার তিন বছর পেরুলেই অংশ নিতে হচ্ছে জেএসসি পরীক্ষায়। ফলে পরীক্ষা ভীতিতে ভুগছে শিশু শিক্ষার্থীরা। আর এ কারণেই পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির দুটি পৃথক পরীক্ষাকে ‘অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি বোঝা’ হিসাবে দেখছেন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, এত পরীক্ষার মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলা হচ্ছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক যন্ত্রণায় রাখা হচ্ছে।

অভিভাবকরা বলছেন, দেশে চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোটাই পরীক্ষাকেন্দ্রিক। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করতেই একজন শিক্ষার্থীকে চারটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। আর প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে প্রতিটি শ্রেণিতে অংশ নিতে হয় কমপক্ষে ছয় পর্বের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায়। একটি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই আরেকটি পরীক্ষার সূচি ঘোষণা হয়। ফলে পরীক্ষার এই বোঝা মাথায় নিয়ে ভীত হয়ে পড়ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

আহসানুল করিম টিটু নামে এক অভিভাবক বলেন, পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় একজন শিশু শিক্ষার্থীকে। এই পরীক্ষায় পাস করা বা ভালো ফল করার প্রস্তুতি শুরু হয় বছরের শুরু থেকেই। মূল ক্লাস বাদ দিয়ে স্কুলগুলোতে শুরু হয় কোচিংয়ের নামে বাড়তি পড়াশোনা। দিতে হয় একাধিক মডেল টেস্ট। অনেক স্কুলে ক্লাসের পর  জেএসসি পরীক্ষার্থীদের দুপুর-বিকেল দুই দফা কোচিংও করান হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মতে, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষাভীতি ঢুকে গেছে। এ থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমাদের দেশে ঘটা করে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, এটা ঠিক হচ্ছে না। এই শিক্ষাবিদের মতে, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকেই পরীক্ষা নিয়ে নিতে হবে। এতে কেউ খারাপ করলেও পরবর্তীতে তাকে ভালো করার সুযোগ দেয়া যাবে। উন্নত দেশগুলোতে এভাবেই হচ্ছে। পরীক্ষা হলো মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়া। কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে তাতে এ মান যাচাই হয় না। আমাদের শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ ভীতিকর। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষার ভয় থাকে। পরীক্ষাপদ্ধতি বদলানর জন্য অভিজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে।

জানা গেছে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) প্রচলন হয়। পরের বছর মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হয় ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা। আর ২০১০ সালের ১৫ জুন জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে আয়োজন করা হয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা।

সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধ্যাদেশ-১৯৬১ অনুযায়ী সকল শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি/এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ওই অধ্যাদেশে পিইসি বা জেএসসি পরীক্ষা বলতে কিছু নেই।

এদিকে চলতি বছরে প্রাথমিক সমাপনী নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিভাবকরাও ছিলেন মাঠে। তাদের দাবি ছিলো, যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, তাহলে পঞ্চম শ্রেণিতে কেন সমাপনী দেবে। এছাড়া এবার যারা প্রাথমিক সমাপনী দেবে তাদের কেন অষ্টম শ্রেণিতে গিয়ে আবার সমাপনী দিতে হবে। অভিভাবকদের এই দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনায় এক পর্যায়ে ৫ম শ্রেণিতে সমাপনী বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ভারমুক্ত ছিলেন অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পরে মন্ত্রিসভা মন্ত্রণালয়ের ওই ঘোষণা বাতিল করে। ফলে এবারও সমাপনী দিতে হচ্ছে খুদে শিক্ষার্থীদের। আর জেএসসি পরীক্ষা নিয়ে আদালতের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।