শাবাশ মেয়েরা এগিয়ে যাও প্রবল আত্মবিশ্বাসে

শাবাশ বাংলাদেশ! শাবাশ বাংলাদেশের মেয়েরা! এএফসি অনুর্ধ-১৬ মেয়েদের ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে উঠে গেলো বাংলাদেশ। শক্তিশালী কঠিন প্রতিপক্ষ চীনা তাইপেকে শনিবার অপরাহ্নে ৪-২ গোলে হারিয়ে বহু আকাঙ্ক্ষিত জয়টি তুলে নিতে পেরেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। বাস্তবে এই জয়টি মোটেও সহজ ছিলো না। বাংলাদেশ ও চীনা তাইপের মধ্যে ফুটবলে সিনিয়র দলের ৱ্যাংকিং পার্থক্য ৮৩ ধাপ। বাংলাদেশ ১২১, চীনা তাইপে ৩৮। সুতরাং দুস্তর ব্যবধানটা সহজেই অনুমেয়। তবে শক্তিশালী চীনা তাইপের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অদম্য ও অপরাজিত মেয়েরা খেলেছে গভীর দেশপ্রেম ও আত্মবিশ্বাসের সাথে। এর প্রমাণ ম্যাচের শুরুতেই গোল খেয়েও মেয়েরা গেছে প্রতি আক্রমণে এবং রীতিমতো সমীহ আদায় করে নিতে পেরেছে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মেয়েদের দাপটের সামনে উল্টো চাপে পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে চীনা তাইপে। তাদের জুটেছে দুটি লাল কার্ড এবং পেনাল্টিতে খেয়েছে দুটি গোল। এর আগে বাংলাদেশের সামনে ইরানও ছিলো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। সেই ইরানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শুরু। এরপর সিঙ্গাপুরকে ৫-০ এবং কিরগিজদের ১০-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। এর আগে এএফসি অনুর্ধ-১৪ ফুটবলের আন্তর্জাতিক পর্বে নেপাল ও তাজিকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই ছিলো বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের বড় অর্জন। ওই দুটি দলের মেয়েরাই খেলেছে এই টুর্নামেন্টে। সোমবার শেষ ম্যাচ খেলেছে দলটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে। ফলাফল যাই হোক না কেন প্রথম চার ম্যাচে অপরাজিত থেকে ১২ পয়েন্ট যথেষ্ট বাংলাদেশের চূড়ান্ত পর্বে উঠে যাওয়ার জন্য। আগামী বছর এই দলটি খেলবে এশিয়ার শীর্ষ স্তর জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ফুটবল পরাশক্তির বিরুদ্ধে। এই অদম্য ও অপরাজিত কৃতিত্ব গোটা দলের পাশাপাশি কুশলী কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনেরও। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ মেয়েদের ফুটবলের এই অনন্য বিজয় উৎসর্গ করা হয়েছে মহিলা ফুটবলের পথপ্রদর্শক প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম বাচ্চুকে।

দেশের মেয়েদের এই অনন্যসাধারণ অর্জনে স্বভাবতই অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে আশা প্রকাশ করেছেন যে, দলটি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে আগামীতে অনুষ্ঠেয় এএফসি-১৬ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখবে। সত্য বটে, নারীর উন্নয়ন, অগ্রগতি ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটি রোলমডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে বহির্বিশ্বে। খেলাধুলা বিশেষ করে ফুটবল এবং ক্রিকেটেও আশাব্যঞ্জক উন্নতি সাধনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। একদা দেশীয় ফুটবলের যে উজ্জ্বল অতীত ঐতিহ্য ছিলো তা ছেলেরা ফিরিয়ে আনতে না পারলেও মেয়েরা পারছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি শ্লাঘার বিষয়। এও মনে রাখতে হবে যে, দলের অধিকাংশ মেয়ে উঠে এসেছে অবহেলিত গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। যেখানে বিদ্যালয়সংলগ্ন পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই, প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও প্রশিক্ষণের প্রকট অভাব- সর্বোপরি নিত্যসঙ্গী দারিদ্র্যের কশাঘাত। অনেক অঞ্চলে অদ্যাবধি বিদ্যুত পর্যন্ত পৌঁছেনি। সে অবস্থায় অদম্য ও অপরাজেয় নারী ফুটবলারদের কৃতিত্ব খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। অতঃপর এই দলটিকে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন দেয়ার ব্যবস্থা করা হলে দেশে ও বিদেশের মাটিতে, এরাই একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিজয় গৌরব ও সুনাম ছিনিয়ে আনতে সমর্থ হবে। শাবাশ মেয়েরা, এগিয়ে যাও প্রবল আত্মবিশ্বাসে।