ন্যূনতম আশ্রয় পাওয়ার অধিকার নিশ্চয় ওদের আছে

আমাদের দেশ ক্ষুদ্রতমগুলোর মধ্যে অন্যতম। মাত্র ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫শ ৭০ বর্গ কিলোমিটার। প্রতিবেশী দেশ ভারতের? ৩ কোটি ২ লাখ ৮৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। আমাদের দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে সেই কবে। রাস্তা-ঘাটে মাছি থকথকে ভিড়। এরপর চক্রবৃদ্ধিহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দেশে পরদেশের লাখ লাখ মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছে। ওরা মানুষ, মানবতার তাগিদে দেশে ঠাঁই দিতে হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত কেন সেই মানবতা ন্যূনতমও দেখাচ্ছে না কেন? ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্তে ৬ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে ঠেলে দেয়ায় সামনে এসেছে সঙ্গতঃ এ প্রশ্ন।
আমাদের দেশ ঘিরে রয়েছে ভারত। সামান্য সীমান্ত রয়েছে মিয়ানমারের সাথে। যাকে আগে বার্মা বলেই চিনতো সকলে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের খুবই সামান্য অংশজুড়ে মসুলমান ধর্মাবলম্বী কয়েক লাখ মানুষের বাস। রাখাইন রাজ্যের এরা পেয়েছে রোহিঙ্গা পরিচিতি। মিয়ানমারে ওদের কখনো বলা হয় বাংলাভাষী মুসলিম, কখনো বলা হয় অনুপ্রবেশকারী। গত শতকের সত্তর দশকে ওদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে। উৎপাত উৎখাতে ওরা আমাদের দেশে ঢুকে কোনো রকম প্রাণে বাঁচে। সে দফা দেন দরবার করে আবারও তাদের সিংভাগকে ফেরত দেয়া সম্ভব হলেও এবার? লাখে লাখে আসছে ওরা। চরম মানবতা বিপর্যয়। বাড়ি-ঘর জমিজমা সব কিছু ফেলে শূন্যহাতে সন্তান সন্ততি বৃদ্ধা-বৃদ্ধদের নিয়ে লাখে লাখে রোহিঙ্গা দম্পতির দেশান্তর হওয়ার দৃশ্য দেখে বিশ্ব হতবাক। কিছু দেশ সাহায্যের হাত বাড়ালেও মিয়ানমারের ওপর এখন পর্যন্ত তেমন শক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে পশ্চিমাদের কিছু হুংকার হুমকি অবশ্য সম্প্রতি শুরু হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, শেষ পর্যন্ত ওই হুমকিধামকিই সার হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। অথচ প্রতিবেশী প্রভাবশালী ভারতের তেমন উচ্চবাচ্য দূরের কথা, ন্যূনতম মানবতাটুকু দেখাচ্ছে না ওরা। কিছু রোহিঙ্গা ভারতে প্রবেশ করলেও তাদের ধরে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে। মুজিবনগর সীমান্তের বিপরীতে ভারত অভ্যন্তরে আরও কিছু গচ্ছিত করে রাখা হয়েছে ঠেঁলে দেয়ার জন্য। এরকমই খবর ছড়িয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায়। বিএসএফ ঠেলে দিচ্ছে সেটাও রুখতে রুক্ষতার বদলে মায়াবি চেহারাটাই দেখিয়ে চলেছি আমরা। যদিও ওরা হুমকি হতে পারে শঙ্কা মেনেও মাছি থক থক ভিড়ে আসন দিয়ে হরদম কুড়িয়ে চলেছি প্রশংসা। ভারত এ প্রশংসার বদলে অমানবিক চেহারা দেখানোর মধ্যেই কি লুকিয়ে আছে ভবিষ্যত নিরাপত্তা? যে পৃথিবী আজ কিম-ট্রাম্পের হুংকারে টলমল, সেই ধরিত্রীর বুকে নির্যাতিতদের ভয়ে কি মুখ লুকানো সাজে? অমানবিকতা যেমন কোনো ধর্মও যেমন সমর্থন করে না, তেমনই কোনো সমাজেরও আদর্শ হওয়া উচিত নয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রোহিঙ্গা পরিবারের ৬ সদস্যের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ৪ শিশুসন্তান নিয়ে পিতা-মাতা কতোটা কষ্টেই না পড়েছে। ওরা ওদের সন্তানগুলোকে বাঁচাতে, ওরা ওদের জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। মিয়নমারের রাষ্ট্রীয় বাহিনী যেভাবে নির্যাতন করছে বলে ওরা বর্ণনা দিচ্ছে তা যে চরম মানবতা বিপর্যয় তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। এরকম পরিস্থিতির শিকার হয়ে যারা দেশান্তর, তাদের দিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সহমর্মিতার হাত বাড়ালেও প্রতিবেশী বিশাল রাষ্ট্র কেন বিমুখ? মানবতা বিপর্যয়ে ধর্ম-বর্ণ ভুলে ন্যূনতম আশ্রয় পাওয়ার অধিকার নিশ্চয় ওদের আছে। ধরিত্রীরই সন্তান, অবশ্যই ওরাও মানুষ।