দুর্ঘটনা নয়, হত্যায় দায়ী চালকদের উপযুক্ত শাস্তি দিন

 

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। চালকদের বেপরোয়া আচরণ, আইন না মানা, চলাচলের অনুপযুক্ত গাড়ির হিড়াহিড়ির পাশাপাশি শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযানের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে সড়ক পরিচিতি পাচ্ছে মৃত্যুপুরী নামে। সড়কে বের হয়ে সুহালে বাড়ি ফেরারই নিশ্চয়তা নেই, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দেবে কে? এরপর রয়েছে ক্ষুব্ধ চালকের হত্যাকাণ্ড। গতপরশু মেহেরপুরের মুজিবনগরে এরকমই এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, কিছু দুর্ঘটনা হয়তো অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু পরিবহনকর্মীরাও অনেক সময় ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে যাত্রী বা চালকদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। কিছুদিন আগে রাজধানীর উত্তরায়- ‘তুই সর, নাইলে পিষ্যা ফালামু’ বলেই এক চালক যাত্রীবাহী বাস তুলে দিয়ে এক অটোরিকশাচালককে খুন করে। এরপর গতপরশু মুজিবনগরে একইভাবে চালকের ক্ষোভে চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন এক শ্রমিক। অনেক চালকের আচরণ নিরাপদ নয়। চালকরা মোবাইলফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালান। দুর্ঘটনার ব্যাপারে যাত্রীরা সাবধান করতে গেলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার এতো বেশি হওয়ার পরও মামলা বা শাস্তির নজির খুব কম। বৈধ যানবাহন দুর্ঘটনায় হতাহতের ক্ষেত্রে মামলা হলেও অবৈধযানের ক্ষেত্রে মামলা হচ্ছে না বললেই চলে। অথচ লাইসেন্সবিহীন কোনো চালকের হাতে প্রাণহানি হলে হত্যার মতোই অপরাধের দৃষ্টিতে দেখার বিধান দেশের প্রচলিত আইনেই রয়েছে।

কোনো চালক স্বেচ্ছায় কাউকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগ এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মানুষ মেরেও যখন চালকরা পার পেয়ে যায়, তখন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবার সততা কাম্য। ভারী যান চালানোর ক্ষেত্রে চালক সনদ তথা লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়ন বা তাদের সংগঠনের সুপারিশ নয়, যথাযথভাবে পরীক্ষা নিয়েই লাইসেন্স দেয়া দরকার। মানসিকভাবে সুস্থ কি-না তাও দেখা উচিত। কেননা চালকও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায়।