কারা অভ্যন্তরে নির্যাতন ও বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু

 

 

মানুষ হয়েও আমরা কিছু মানুষকে বন্দি করে রাখি। সমাজের স্বার্থেই রাখতে হয়। তার মানে এই নয় যে, বন্দি মানুষটা ভিনগ্রহের বা অছুত। বন্দিদের সকলেই যেমন অপরাধী নন, তেমনই সকলেই নিরাপরাধও নন। তর্কের খাতিরে যদি সকলকে অপরাধী ধরেও নেয়া হয়, তারপরও কি সেখানে ন্যূনতম নির্যাতনের সুযোগ আছে? না। তা হলে কেন নির্মমতা?

গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় পৃথক দুটি প্রতিবেদনের একটিতে ছিলো মেহেরপুর জেলা কারাগারে এক বন্দির রহস্যজনক মৃত্যু। অপরটি ছিলো চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে এক কয়েকদির মায়ের নিকট টাকা চেয়ে না পেয়ে মিথ্যা অভিযোগে অমানবিকভাবে মারপিট। নির্মমভাবে মারের কারণে শহীদ নামের কয়েদি স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারছেন না। তার মা এ তথ্য জানিয়ে কারাগারের এক সিআইডির বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়ের বর্ণনা দিয়ে তার ছেলেকে মারধরের নালিশ করেছেন। বলেছেন, ছেলে শহীদকে আমিই সুস্থ করতে জেলহাজতে রাখার ব্যবস্থা করেছি। অথচ তাকে দিয়ে ফুটফরমেশ কাজ করানোর পাশাপাশি তাকে দিয়ে টাকা আদায় করানো হয়। সুষ্ঠু তদন্ত হলে এ অভিযোগে অভিযুক্তরাও বোধ করি অস্বীকার করতে পারবেন না।

দেশের অধিকাংশ জেলা কারাগারেরই অভিন্ন চিত্র। অনিয়মের অন্ত নেই। বন্দিদের বিশেষ করে বিচারাধীন মামলার আসামি তথা হাজতিদের মেরে, মারার ভয় দেখিয়ে ও নোংড়া স্থানে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়। বন্দিদের মধ্য থেকেই মনোনীত মেড ও কথিত সিআইডি এই অর্থ আদায় করে নিজেদের বাড়িতেই শুধু পাঠান না, জেলখানার কর্মকর্তাদের কারো কারো পকেটেও যায়। তা না হলে মেডে বা সেকেন্ড মেড বা সিআইডি ওইভাবে অর্থ আদায়ের সুযোগ পান কিভাবে? অপরদিকে মেহেরপুরে একজন বন্দির অস্বাভাব্কি মৃত্যু নিয়ে নানামুখি বক্তব্য পাওয়া গেছে। জেলা কারাগারের স্থানীয় কর্মকর্তা বলেছেন, ওই বন্দি গলায় গামছা দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের লোকজন বলেছেন, আত্মহত্যার বিষয়টি ঠিক নয়। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গামছা দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার তেমন আলামত শাদা চোখে দেখা যাচ্ছে না।

কারাগারে বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং টাকা চেয়ে না পেয়ে একজন বন্দিকে নির্মমভাবে নির্যাতনের অভিযোগ খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। তদন্ত শুধু প্রশাসনের তরফে নয়, বিচার বিভাগীয় তদন্তও প্রয়োজন। কারা অভ্যন্তরের আসল চিত্র বাইরে থেকে বোঝা দুষ্কর। সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।