জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে

রোগের নাম লেপ্টোস্পাইরোসিস। রোগটি নতুন না হলেও বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাবের কথা নতুন করে জানা যাচ্ছে। গত ২০ মাসে ১০টি হাসপাতালে পরীক্ষা চালিয়ে শতাধিক রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বাংলাদেশে এই রোগটি ছড়ানোর পরিবেশ খুবই অনুকূল। ধারণা করা যায়, সারাদেশের সব উপজেলা হাসপাতালসহ চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা চালানো হলে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশিই হবে। রোগটি কিডনি, লিভার ও ফুসফুস অকেজো করে দিতে পারে। তাই এ রোগে মৃত্যুর হারও হয় অনেক বেশি, ৭০ শতাংশের মতো। এতো কঠিন একটি রোগ এতোদিন কিভাবে অগোচরে বিরাজ করছিলো, তা-ই আমাদের আশ্চর্য করে। আর এ থেকেই ধারণা পাওয়া যায়, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখনো কতো দুর্বল।
লেপ্টোস্পাইরোসিস রোগের কারণ লেপ্টোস্পিরা নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। সাধারণত ইঁদুর বা তীক্ষ্মদন্তী প্রাণীর মূত্রের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াটি ছড়ায়। এছাড়া বন্য বা গৃহপালিত উভয়বিধ পশুর প্রস্রাবের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। ত্বক, নাক, মুখ ও চোখের মাধ্যমেও এটি মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলেই এর প্রাদুর্ভাব বেশি। প্রধানত মাঠে কাজ করা কৃষক ও বস্তির ঘিঞ্জি পরিবেশে বাস করা নিম্নবিত্ত লোকজনই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। কারণ ইঁদুরের মূত্র ত্যাগ করা মাটি বা পানির স্পর্শে তারাই বেশি আসে। এর আরেকটি খারাপ দিক হলো, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে অসুস্থতার কোনো লক্ষণ না-ও দেখা দিতে পারে। আর মৃদু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে সাধারণ সর্দিকাশি, জ্বর যেগুলো মানুষ সাধারণত আমলেই নিতে চায় না। তাই প্রাথমিক অবস্থায় বেশির ভাগ রোগীই চিকিৎসকের কাছে যায় না। পরবর্তীকালে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া কিংবা ফুসফুসে রক্তক্ষরণের মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে রোগী ও তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। তখন রোগীকে আরোগ্য করাও অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে যারা সাধারণত এ রোগে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে রোগ সম্পর্কে অসচেতনতা বেশি থাকায়ও প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নেয়ার হার কম থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা প্রাণঘাতী হয়। তাই এ রোগ সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং দেশব্যাপী স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে রোগী শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। এমনিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও বিশ্বব্যাপী নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। কলেরা, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগগুলো নতুন শক্তিতে হামলে পড়ছে। ডেঙ্গু জ্বরের জ্ঞাতি জিকা ভাইরাস সারা দুনিয়ায় আতঙ্কের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও তার আশঙ্কামুক্ত নয়। মশা বা কীটপতঙ্গবাহিত অন্যান্য রোগেরও প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এবার শীতকালেও মশা খুব একটা কমেনি। বাড়ছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবও। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে কেবল কঠিন পরিণতির জন্যই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।