গাংনী উপজেলা নির্বাচনে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বিপাকে বিএনপি : মুরাদ মনোনয়ন পেলেও প্রার্থী হচ্ছেন ভুট্টো

গাংনী প্রতিনিধি: গাংনী উপজেলা নির্বাচনে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্তে বিপাকে পড়েছে বিএনপি তথা ১৯ দলীয় জোট। জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মুরাদ আলীকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন না। ফলে দুজন প্রার্থী থাকলে ভোটের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। একক প্রার্থী রেখে বাকিদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোর জন্য জোর প্রচেষ্টাও চলছে। সোমবার নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সভা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায় রয়েছেন নেতাকর্মীরা।

২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনের আগেই হিন্দা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে একক প্রার্থী চূড়ান্তের বৈঠক হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মুরাদ আলী, উপজেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল হক ও উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি আখেরুজ্জামান এবং জাভেদ মাসুদ মিল্টন পক্ষের বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। মুরাদ, রেজাউল ও আখেরুজ্জামান জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন পক্ষের।

বিএনপির বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে, জুলফিকার আলী ভুট্টো মনোনয়নপত্র উত্তোলন না করায় তাকে বাদ রেখে প্রার্থী চূড়ান্তের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রার্থী চূড়ান্তের সভায় অনেকেই ভুট্টোকে সমর্থন দেন। তাকে সাথে নিয়েই প্রার্থী চূড়ান্ত করার অনুরোধ করা হয়। ফলে চার প্রার্থীর মধ্য থেকেই একক প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়। জাভেদ মাসুদ মিল্টন পক্ষের নেতাকর্মীরা ভুট্টোকেই একক প্রার্থী চূড়ান্তের জোর দাবি জানান। কিন্তু সর্বশেষ গত দু দিনে সিদ্ধান্ত হয় মুরাদ আলী দলীয় একক প্রার্থী। সাংগঠনিক বিভিন্ন দিক ও নির্বাচনী এলাকায় মুরাদের শক্ত অবস্থান বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাকি প্রার্থীদের যেকোনোভাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ ও সাংগঠনিকভাবে চাপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু মুরাদ আলীকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না জাভেদ মাসুদ মিল্টন পক্ষের নেতাকর্মীরা। অপর পক্ষ এবং জামায়াতের পক্ষ থেকেও মুরাদের বিষয়ে আপত্তি জানানো হচ্ছে বলে বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বামন্দী ইউনিয়নের সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো দলীয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে পরাজিত করে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে মুরাদ আলী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। মুরাদের চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন ভুট্টো। জামায়াত একক নির্বাচন করলেও তাদের অনেকেই ভুট্টোকে ভোট দিয়েছিলেন। এবারও জামায়াতের পক্ষ থেকে ভুট্টোকে একক প্রার্থী করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে বলে জামায়াতের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। তাছাড়াও বিএনপির তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান ভুট্টোর পক্ষে রয়েছেন। ভুট্টো একক প্রার্থী হলে সহজেই বিজয়ী হবে বলে মনে করছেন তারা। জাভেদ মাসুদ মিল্টন পক্ষের নেতৃবৃন্দ বলছেন, মুরাদ হোসেন গত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই আমজাদ হোসেনকে ছেড়ে জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সাথে রাজনীতি শুরু করেন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের আগে হটাত মিল্টন পক্ষ ছেড়ে যাওয়ায় তার প্রতি নাখোশ অনেকেই। তাই মুরাদকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করলে তাদের আপত্তি ছিলো না বলে জানান জাভেদ মাসুদ মিল্টন পক্ষের কয়েকজন।

এদিকে উপজেলা বিএনপি সভাপতি রেজাউল হক দলীয় মনোনয়ন না পেলে তার অবস্থান কী হবে তা নিয়েও নানা জল্পনা কল্পনা রয়েছে। রেজাউল ও মুরাদের গ্রাম করমদি বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নে রেজাউল ও মুরাদের ভাই জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। জাহাঙ্গীর বিএনপির অনেক ভোট পেয়েছিলেন তাই রেজাউল পরাজিত হন। ইউপি নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারন এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুরাদ ও রেজাউলের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। রেজাউল দীর্ঘদিন ধরেই আমজাদ হোসেনের সাথে রয়েছেন। তাই মুরাদকে আমজাদ হোসেন পক্ষ তথা ১৯ দলীয় জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলে রেজাউলের অবস্থান কী হবে তা নিয়েও শঙ্কিত বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তবে সব মিলিয়ে দলের এ দুঃসময়ে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা যাবে বলে মনে করছেন বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। তাছাড়া দলের বাইরে কেউ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সুবিধা করতে পারবে না এবং সাংগঠনিক চরম পরিস্থিতি বরণ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারী করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।