আলমডাঙ্গার নাগদাহে শহিদ হত্যামামলার আসামিরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে : নিহতর স্মরণে মহিলাদের দোয়া মাহফিল

মোমিনপুর প্রতিনিধি: যতোই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততোই অসহায় বাদী পক্ষরা হতাশার মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছে। ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত আসামিদের টিকরে ছুঁতে পারেনি পুলিশ। প্রভাবশালী আসামিদের চাপের মুখে প্রতিটি দিন পার করতে হচ্ছে দরিদ্র নিহত শহিদের পরিবারের সদস্যদের। স্বচ্ছল হলে বিচার পাওয়া যায় দরিদ্র হলে কী বিচার পাওয়া যায় না? আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় এ প্রশ্নটা মাঝে-মধ্যে বাদী পক্ষের ভাবিয়ে তুলছে। গত পরশু শুক্রবার বাদ জুম্মা আসামিদের গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গ্রামের জোয়ার্দ্দারপাড়ার জামে মসজিদের সামনের সড়কে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। নামাজ আদায়ের পর কতিপয় অসাধু প্রভাবশালীদের বাঁকা চোখে অনেকেই মানববন্ধন এড়িয়ে বাড়িতে চলে যায়। এক পর্যায়ে নিহত শহিদের বাড়ির সামনের সড়কে তার নিকটজনেরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। গতকাল থেকে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। জমিক্রেতা ছোট দশ হাজার টাকার বিনিময়ে এলাকার চি‎‎হ্নিত গাঁজাব্যবসায়ী মোজাম্মেল, চি‎হ্নিত ফেনসিডিলব্যবসায়ী মহাবুল, আতিয়ার, রসুল, টেংরাসহ কয়েকজনকে ভাড়া করে। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে সালিসসভার দিন বিকেলে ছোট ৫ হাজার টাকা অগ্রিম তাদের হাতে তুলে দেয়। এ মামলার ১১ জন আসামিদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। নেশার টাকার জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা এ নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। গ্রামের সাবেক মেম্বার আলাউদ্দিন ক্ষোভের সাথে বলেন শাদাশিদে মনের মানুষ শহিদ হত্যাটি ধামাচাপা পড়ে গেলে আগামীতে আসামিরা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

অপরদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এলাকার সচেতনমহল প্রকাশ্যে না বললেও নীরবে তারা এ হত্যার আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। দরিদ্র বাদীপক্ষের লোকজন জানায়, আমরা আর মৃত্যুর ভয় করি না। আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো হুমকিই আর দমাতে পারবে না। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে এলাকার মহিলাদের উদ্যোগে নিহত শহিদের রুহের মাগফেরাত কামনায় শহিদের বাড়িতে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের নাগদাহ গ্রামের উত্তরপাড়ার আপিল মণ্ডল ৩ বছর আগে তার প্রতিবেশী আরশেদ আলীর ছেলে ছোটর নিকট ৪ শতক জমি বিক্রি করে। জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। কেনা জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বললে বিক্রেতার দু ছেলে সাদ আলী ও হোসেন আলী আরও টাকা দাবি করা নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সালিসসভায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ছোটর ভাড়া করা লোকজন দু ভাইকে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের সামনে পড়ে দু ভাইয়ের চাচাতো ভাই নিরীহ কৃষক শহিদ। শহিদকে তার বাড়ির উঠোনে স্ত্রী-সন্তানদের সামনে মারধর করে দলেচটকে গলা টিপে হত্যা করে ঘাতকরা।

এদিকে গ্রাম্যসালিস নিয়ে অনেকের অভিযোগ, গ্রাম্যআদালত থাকতে কী করে মাতবররা সালিসের আয়োজন করে। সালিসসভায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইতঃপূর্বে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন মাথাভাঙ্গাকে জানান, গ্রাম্যসালিসের আইনগতভাবে কোনো বৈধতা নেই।