আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে : গমচাষে লাভবান হতে আশাবাদী মেহেরপুরের চাষিরা

মহাসিন আলী: গত বছরের চেয়ে কম হলেও চলতি রবি মরসুমে মেহেরপুর জেলায় গমচাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ফলনও ভালো বলে কৃষক খুশি। তবে ফাল্গুনের প্রথমে ৩ দিনের বর্ষায় দেরিতে চাষ করা অর্থাৎ নামলা গমের কিছুটা ক্ষতি হলেও বিকল্প ব্যবস্থায় কৃষক সে ক্ষতিও পুষিয়ে নিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাবমতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট এ জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৬০ হাজার একশ হেক্টর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমিতে ধানচাষ হয়ে থাকে। সম্প্রতি সার-বিষ ও সেচ খরচ বেশির কারণে ধানচাষে লাভ করতে পারছেন না এ জেলার কৃষকরা। তাই এ জেলার মানুষ সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শেখ ইফতেখার হোসেন জানান, এ বছর জেলায় ১৭ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে গমচাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৬২ হেক্টর বেশি জমিতে গমচাষ। তবে গত বছরে এ বছরের অর্জনের চেয়ে আরো ৪৬৫ হেক্টর বেশি জমিতে গমচাষ হয়েছিলো। এ বছর মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৮শ হেক্টর, গাংনী উপজেলায় ৮ হাজার ৯শ হেক্টর ও মুজিবনগরে এক হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে গমচাষ হয়েছে।

প্রথম থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর জেলার চাষিরা গমের আবাদে খুশি। ফলন ভালো হবে এটা তাদের আশা। গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান এ বছর ৬ বিঘা জমিতে গমচাষ করেছেন। তিনি বলেন, ধানচাষে কৃষক লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। খরচ বেশি। লাভ হচ্ছে না। তাই অনেক কৃষক ধানচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তিনি গমের আবাদ থেকে লাভবান হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিবিঘা জমি থেকে ১২ থেকে ১৫ মন গম উঠলে আর প্রতিমণ গম সর্বনিম্ন ৮শ টাকা দরে বিক্রি হলেই চাষিরা খুশি। একই গ্রামের হাসান মাস্টার বলেন, তিনি বাড়িতে খাওয়ার জন্য এ বছর মাত্র এক বিঘা জমিতে গমচাষ করেছেন। গাছ দেখে ও ফলন ভালো হবে বুঝে তিনি খুশি। তিনি বলেন, নিজের এক বিঘা জমিতে গমচাষে সার-বীজ, সেচ, চাষ ও কাটা-মাড়াই করা পর্যন্ত লেবার সব মিলিয়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়।

এদিকে যারা নামলা করে গম করেছেন তারা ফাল্গুনের প্রথম ৩ দিনের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। গমে শিষ বের হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টি হওয়ায় ফুল ধুয়ে যাওয়ায় গমে বেশি চিটে হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এছাড়া নিচু জমিতে লাগানো গমক্ষেতে পানি জমে গমগাছ কাঁত হয়ে পড়েছে। এতে বেশ কিছু চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে লাভ না হলেও হতাশা হওয়ার কারণ নেই বলে দাবি করেছেন অনেক কৃষক।

সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, মেহেরপুরে গো-খাদ্যের চাহিদা আছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা হেলে পড়া ওই কাঁচা গমগাছ কেটে গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে খরচ তুলে নিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শেখ ইফতেখার হোসেন আরো বলেন, মাঠে গমের আবাদ ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন গম কাটা-মাড়াই করা পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এ বছর গমচাষে কৃষকরা লাভবান হবেন। এছাড়া এ বছর ফাল্গুনের প্রথম বৃষ্টিতে নামলা গমের কিছুটা ক্ষতি হলেও আগাম চাষ করা গমে সুফল বয়ে আনবে।