১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ.লীগের ডা. আসহাবুল হক ন্যাপের প্রার্থীকে ৩২,৬৬১ ভোটে পরাজিত করে ফিরে দেখা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা-৮০ চুয়াডাঙ্গা-২

তাছির আহমেদ: জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা-৮০ চুয়াডাঙ্গা-২ গঠিত হয়েছে দামুড়হুদা উপজেলা ও জীবননগর উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে। আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭৭৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৬১ আর মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৪ হাজার ১১৭ জন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ আসনে শুধুমাত্র দুজন প্রতিযোগী নৌকা প্রতীকের বিপরীতে হাতুড়ি প্রতীক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (আ.লীগ) থেকে মনোনীত প্রার্থী এ নৌকা প্রতীকের মালিক দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পুরাতন বাজার এলাকার মৃত আব্দুল ওহাবের ছেলে আলী আজগার টগর। আর হাতুড়ি প্রতীকের মালিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী দামুড়হুদা উপজেলার কলাবাড়ী ইব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত ছানোয়ার হোসেনের ছেলে মো. সিরাজুল ইসলাম শেখ। দোড়গোড়ায় ঘনিয়ে আসা নির্বাচনের এ সময়, গত নির্বাচনে ভোটারদের মাঝে যে ব্যাপক সরগরম পরিলক্ষিত ছিলো, এবারের বেলায় তার একাংশও নেই। নেই অধিকাংশ ভোটারদের মাঝে আনন্দ। সাধারণ ভোটারদেরকে নিয়ে রশি টানাটানির খেলা সমর্থকদের মধ্যেও তেমন নেই। তবে আ.লীগের সক্রিয় কর্মীদের মাঝে জেগে আছে এ খেলা। চা-পান-বিড়ির দোকানে হচ্ছে না কোনো কানাঘোসা। ভোট প্রদানের নির্ধারিত দিন ৫ জানুয়ারি আসতে আর মাত্র বাকি আছে ৯ দিন। ওই দিনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এক নাগাড়ে চলবে এ ভোটারদের ভোটযুদ্ধ। এবারের যুদ্ধে জয় পরাজয় কে হবে? ভোটাররা অগ্রিম নিশ্চিত করে বলছেন নৌকা।

নির্বাচন অফিসসূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ নির্বাচনী এলাকায় মোট ১৫২টি ভোট কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে রয়েছে মোট ৯৪৫টি ভোটকক্ষ। এ নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা বিগত জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বতঃস্ফুর্তভাবে ভোট প্রদান করেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। মোট ৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৮ হাজার ৭১৯ জন আর বাতিল হয় ২ হাজার ৩৯৯টি। জামায়াতের প্রার্থী মাও. হাবিবুর রহমানের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ১২ হাজার ৯০৫ ভোটের ব্যবধানে আলী আজগার টগরকে বিজয় নিশ্চিত করে আ.লীগ। জয়ের মালা গলাই দেয়া আলী আজগর টগরের মোট প্রদত্ত ভোট ছিলো ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩২৩ আর মাও. হাবিবুর রহমানের ছিলো ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮ অপর প্রতিযোগী জাকের পার্টির প্রার্থী আব্দুল লতিফ খান ৫ হাজার ২১৬টি ভোট পান।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে। এ নির্বাচনে মোট ২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৪৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৯৯ জন ভোটার, বাতিল হয় ২ হাজার ৪১৮টি। এ নির্বাচনে বিগত সকল নির্বাচনের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৩৯ হাজার ৪৯৮ ভোটের বিশাল ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করে। আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী মির্জা সুলতান রাজাকে পরাজিত করে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোজাম্মেক হক। মোজাম্মেল হকের প্রদত্ত ভোট ছিল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৮, মির্জা সুলতান রাজার প্রদত্ত ভোট ১ লাখ ৭ হাজার ৫০, জাতীয় পার্টি (জাপা) নবি চৌধুরীর ২ হাজার ৭৪৪ এবং সিপিবির অ্যাড. শহীদুল ইসলাম মাত্র ৯৫৭টি ভোট পান।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুব অল্প সংখ্যক ব্যবধানে বিএনপি জয়লাভ করে। এ নির্বাচনে মাত্র ১ হাজার ২৩টি ভোটের ব্যবধানে বিএনপির বিজয় হয়। এতো কম সংখ্যক ভোটের বিজয় বিগত সব নির্বাচনের রেকর্ড ভঙ্গ করে। মোট ২ লাখ ২৭ হাজার ৬৫৩ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৫৫৭ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন, বাতিল হয় ১ হাজার ৪২২টি। বিজয়ী বিএনপির প্রার্থী মোজাম্মেল হকের প্রদত্ত ভোট ৬৪ হাজার ৭৫৫, সামান্য ভোটে পরাজয় বরণ করা আ.লীগের মির্জা সুলতান রাজা ৬৩ হাজার ৭৩২, জামায়াতের মাও. হাবিবুর রহমান ৪৮ হাজার ৯৪৪, জাতীয় পার্টির (জাপা) হাবিবুর রহমান ১১ হাজার ১৮৭, ইসলামী ঐক্যর এ মান্নান ১ হাজার ৮৭২ ও জাকের পার্টির আমির হোসেন ১ হাজার ৩৯৭ ভোট পান।

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯১ সালের ২৭ জানুয়ারি। বিএনপির প্রার্থী মোজাম্মেল হককে ৯ হাজার ৬৬৮ ভোটে পরাজিত করে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় জামায়াতের প্রার্থী মাও. হাবিবুর রহমান। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিলো ২ লাখ ১২ হাজার ৫১, প্রদত্ত ভোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭১ আর বাতিল ১ হাজার ৪২২টি। বিজয়ী মাও. হাবিবুর রহমানের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৪৯ হাজার ৬৮৮, মোজাম্মেল হকের ৪০ হাজার ২০, জনতা মুক্তির প্রার্থী মির্জা সুলতান রাজার ২৫ হাজার ৪৭০, জাপার প্রার্থী হাবিবুর রহমানের ১০ হাজার ৭৮৮ আর জাকের পার্টির প্রার্থী সাইদুর রহমান ৫ হাজার ৮৩২টি ভোট পান।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী খালিদ মাসুদকে ১৮ হাজার ২১৬ ভোটে পরাজিত করে জাসদ শাহ. প্রার্থী মির্জা সুলতান রাজা। মির্জা সুলতান রাজার পদত্ত ভোট ছিলো ৩৫ হাজার ৩৬৯ আর খালিদ মাসুদের ১৭ হাজার ১৫৩ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান ১৫ হাজার ২২৯ ভোট পান।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ২৮ ফ্রেব্রয়ারি। আ.লীগের (মালেক) প্রার্থী ইউনুচ আলীকে ১০ হাজার ২৫৮ ভোটে পরাজিত করে সংসদ নির্বাচিত হয় বিএনপির প্রার্থী আবু সাইদ খান। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ২৭ হাজার ৬২৫ এরমধ্যে ভোট পোল হয় ৬৩ হাজার ৫৪৭। বিএনপির প্রার্থী এ নির্বাচনে মাত্র ২৪ হাজার ৪৯১ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনুচ আলীর প্রাপ্ত ভোট ১৪ হাজার ২৩৩, এমএল অ্যান্ড আইডিএলের প্রার্থী নওয়াজীশ আহমেদ ১৩ হাজার ২৮৭, আর জাসদের প্রার্থী মির্জা সুলতান রাজা ৩ হাজার ৪৭০ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। তখন ভোটারের সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ১২ হাজার ৬০৫ আর কেন্দ্র ছিলো ৪৯টি। এই নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিশাল ভোটের ব্যবধানে তিনি আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী ডা. আসহাবুল হক। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপের (মোজাফফর) প্রার্থী শহিদুল ইসলাম। ভোটের ব্যবধান ৩২ হাজার ৬৬১। প্রথম সংসদ সদস্য ডা. আসহাবুল হকের প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ছিলো ৪৪ হাজার ৪৪৯ আর ন্যাপের শহিদুল ইসলামের প্রাপ্ত ভোট ছিলো ১১ হাজার ৭৭৮ আর জাসদের প্রার্থী আবুল হাসিম ১ হাজার ৬৫৫টি ভোট পান।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ জাতীয় সংসদ নিবাচন ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।