হল-মার্কের ১ হাজার ৫৭২ শতাংশ জমি নিলামে তুলল সোনালী ব্যাংক

 

স্টাফা রিপোর্টার: পাওনা ৭১০ কোটি টাকা আদায়ে বহুল আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকার ১ হাজার ৫৭২ শতাংশ জমি নিলামে তুলেছে সোনালী ব্যাংক। আগামী ১০ মার্চ দরপত্র খোলা ও নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে, অর্থ আদায়ে চলতি মাসের মধ্যে মামলা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩-এর ১২(৩) ধারা মোতাবেক গ্রুপটির এ জমি নিলামে তোলা হয়েছে বলে সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রটি জানায়, হলমার্ক গ্রুপের ছয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৭১০ কোটি টাকা আদায় করতে চায় ব্যাংকটি। এজন্য পাওনা আদায়ে গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৫৭২ শতাংশ জমি নিলামে তুলা হয়েছে। এর মধ্যে হলমার্ক ফ্যাশনের কাছে পাওনা ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আদায়ে নিলামে তোলা হয়েছে ১ হাজার ২৫৮ শতাংশ জমি। আর হলমার্ক স্টাইলের ৯ কোটি টাকা আদায়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ জমির। এছাড়া হলমার্ক প্যাকেজিংয়ের ১ কোটি ৬১ লাখ টাকা আদায়ে ৭০ শতাংশ, হলমার্ক অ্যাকসেসরিজের ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা আদায়ে ১৬৫ শতাংশ, ববি ডেনিম কম্পোজিটের ৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আদায়ে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ওয়ালমার্ট ফ্যাশনের ২২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আদায়ে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ জমি এবং সেই সাথে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিও নিলামে তোলা হয়েছে। নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগামী ১০ মার্চ বেলা ৩টার মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল (সাবেক শেরাটন) করপোরেট শাখায় রক্ষিত বাক্সে দরপত্র জমা দিতে হবে। একই দিন দরপত্র খোলা হবে ও নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্রটি জানায়, হলমার্ক গ্রুপ প্রকৃত মালিক, শুধু এমন জমিই নিলামে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে হলমার্কের পুরো ঋণ আদায় হবে না। গ্রুপটি আরো জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখার প্রকিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু গ্রুপের কর্ণধাররা গ্রেফতার হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, অর্থঋণ আদালতে মামলা করার আগে বন্ধকি জমি নিলামে তুলতে হয়। নিলামে বিক্রির অর্থে ঋণ সমন্বয় হলে মামলার প্রয়োজন পড়ে না। পুরো ঋণ সমন্বয় না হলে বাকি ঋণের জন্য মামলা করতে পারে ব্যাংক। পরে মামলার মাধ্যমেই বাকি অর্থ আদায়ের পন্থা বেরিয়ে আসে। বন্ধকির বাইরের জমিও এক্ষেত্রে নিলামে তোলা যায়।

এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নজিবুর রহমান বলেন, অর্থ আদায়ে চলতি মাসেই মামলা করা হবে। এর প্রক্রিয়া হিসেবেই জমি নিলামে তোলা হয়েছে। মামলার সংখ্যা হতে পারে ২ থেকে ৫টি।

উল্লেখ্য, জালিয়াতির মাধ্যমে হল-মার্কসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করেছে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সাতটি সরকারি, ২৯টি বেসরকারি ও পাঁচটি বিদেশী ব্যাংকের ১০০ শাখার মাধ্যমে এসব অর্থ বের করে নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

হল-মার্ক ছাড়া অন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে প্যারাগন নিট কোম্পানি, খানজাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেড, ডি অ্যান্ড স্পোর্টস লিমিটেড, টি অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেডি এবং নকশি নিট লিমিটেড।

২০১০ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে এসব অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে হল-মার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ বের করে নিলেও এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা একসময় হল-মার্ক গ্রুপের কর্মচারী ছিলেন। কর্মচারীদের মালিক সাজিয়ে ও গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালিয়ে এসব অর্থ বের করে নেন হল-মার্ক গ্রুপের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ।

পরে হল-মার্কের অর্থ (ফান্ডেড) লোপাটের ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর ২৭ জনকে আসামি করে ১১টি মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হয়। পর্যালোচনা শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করে কমিশন।

এছাড়া গত বছরের ১ জানুয়ারি অরো পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফান্ডেড ৩৫০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা জালিয়াতির অভিযোগে ২৬টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এতে আসামি করা হয় ৩৫ জনকে।