সবুজ সঙ্কেত পাননি কেউ : প্রচারণায় একাধিক প্রার্থী

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রধান দু দলের সাম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন লাভের আশায় মাঠে নেমেছেন। অধিকাংশ আসনে উভয় দলের একাধিক প্রার্থী এখন গণসংযোগে ব্যস্ত। তবে তাদের কেউই এখন পর্যন্ত দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পাননি; কিন্তু ভোটারদের মন জয় করার জন্য তারা বসে নেই। সমাবেশ, ব্যানার, পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন তারা। দলের মনোনয়ন লাভ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের প্রভাবশালী নেতাদের কাছেও অনেকে ধরনা দিচ্ছেন। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচার-প্রচারণা গতি পাচ্ছে।

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। দলীয় প্রধান এ বোর্ডের সভাপতি। প্রধান দু দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নের সিদ্ধান্ত কার্যত দলীয় প্রধানের ওপর নির্ভরশীল। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আগ্রহী প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। পরে পার্লামেন্টারি বোর্ড তাদের সাক্ষাত্কার নিয়ে থাকে। এরপর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়; কিন্তু নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলেও দলীয় মনোনয়ন কোন প্রার্থীর ভাগ্যে জুটবে তা উভয় দলের নেতাকর্মী, এলাকার ভোটার ও প্রার্থীদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কেউই বসে নেই, সবাই ভোটার তুষ্টিতে ব্যস্ত।

আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপিদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশিই আগামীতে মনোনয়ন পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠককালে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তখন প্রধানমন্ত্রী দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের বলেছেন, সব এমপির আমলনামা আমার কাছে রয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করেই আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে।

দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও চলছে জোর গ্রুপিং-লবিং। এলাকায় তারাও নির্বাচনের আগাম প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, যেসব নেতার কারণে বিগত সময়গুলোতে দল ও সরকার বিব্রত হয়েছে, এবারের নির্বাচনে তাদের মনোনয়নের বিষয়ে নতুন করে ভাবা হবে। সেক্ষেত্রে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদেরই বেশি প্রাধান্য দেবে দলের হাইকমান্ড। ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে, এমন নেতাদের একাধিক প্রাথমিক তালিকাও ইতিমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে করা হয়েছে। যা বর্তমানে লন্ডনে দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানও যাচাই-বাছাই করছেন। মনোনয়নের সবুজ সংকেত পেতে অনেকে লন্ডন ছুটে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া অভিন্ন হলেও এই দলেও দলীয় প্রধান ও তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের ওপরই প্রধানত নির্ভর করে- কে মনোনয়ন পাবেন।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও এখন নির্বাচনী আবহ। একই চিত্র দলীয় প্রধানের কার্যালয়েও। সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ভিড় করছেন দলের কেন্দ্রীয় ও দলীয় প্রধানের কার্যালয়ে, উদ্দেশ্য দলের প্রভাবশালী নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়রা এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। মনোনয়ন লাভে স্থানীয় প্রতিপক্ষের সাথে বিতণ্ডায়ও জড়াচ্ছেন কেউ কেউ।

টাঙ্গাইলের আটটি আসনেই প্রধান দু দলের একাধিক প্রার্থী সক্রিয়। টাঙ্গাইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন মাহবুবুল আলম স্বপন। তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলীও মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। তার পোস্টারে ছেয়ে গেছে নির্বাচনী এলাকা; কিন্তু দু দলের কেউই আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামতে পারছেন না।

টাঙ্গাইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামান। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের অন্তত তিনজন নেতা মাঠে তত্পর। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, গোপালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনূছ ইসলাম তালুকদার ও ব্যবসায়ী হাসমত আলী।

ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, মকবুল হোসেন বাবু, রফিকুল ইসলাম, ইন্দ্রনাথ রায় ও অরুনাংশ দত্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চান। তবে এ আসনে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া আর কোনো প্রার্থী নেই।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দবিরুল ইসলাম, হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম ফেরদৌস টগর, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাক আলম টুলু দৌড়-ঝাঁপে ব্যস্ত। এ আসনেও বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা ফয়সাল আমিন ও জেড মুর্তজা তুলা চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে প্রধান দু দলের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. ইবাদুল হক, পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আখতারুল ইসলাম, রানী শংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক সইদুল হক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সেলিনা জাহান লিটা এবং বিএনপির পীরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি জাহিদুর রহমান, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন রোকন প্রমুখ।

এভাবে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় সংসদের তিনশ আসনেই বড় দু দলের একাধিক প্রার্থী তত্পর রয়েছেন। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা ধরনের রাজনৈতিক টানাপড়নের মধ্যেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের উত্সাহে ভাটা নেই। তবে তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই রয়েছে সংশয়। মনোনয়ন হবে তো!