মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ৪টি ইউপিতে দুটি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও দুটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নির্বাচিত

 

শেখ শফি: মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। প্রশাসনের কঠোর ভূমিকায় ভোটের এমন সুষ্ঠু পরিবেশ মেহেরপুর জেলার মানুষ অন্য কোনো সময় দেখেছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন সব দলের ভোটাররা। নির্বাচনে ৪টি ইউপির মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত দুই জন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ২ প্রার্থী জয়লাভ হয়েছেন। ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি প্রার্থীদের। বাগোয়ান ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়ুব হোসেন (নৌকা) পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ১১ হাজার ৩৬৮। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মানজারুল ইসলাম (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৮ হাজার ৬৩৫ ভোট। জামায়ত সমর্থিত সেলিম হোসেন খান (চশমা) ৪ হাজার ৭১৪ ভোট পেয়েছেন।

মহাজনপুর ইউপিতে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আমাম হোসেন মিলু। নৌকা প্রতীকে তিনি ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৫৬৯। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবীব সোনা (ধানের শীষ) ৫ হাজার ৮৮২ ভোট পেয়েছেন।

মোনাখালী ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগকর্মী মফিজুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন। ঘোড়া প্রতীকে তিনি ৪ হাজার ৭০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম অপা গাইন (নৌকা) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৬৯ ভোট। জামায়াত সমর্থিত খানজাহান আলী (চশমা) পেয়েছেন ২ হাজার ৮৬৯ ভোট। বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মোল্লা (আ.লীগের বিদ্রোহী) আনারস প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ১ হাজার ১০০।

দারিয়াপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি তৌফিকুল বারী বকুল (অটোরিকশা) ৩ হাজার ৭৬৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনিত প্রার্থী আনছারুল ইসলাম কাটু (ধানের শীষ) ৩ হাজার ১০৬ ভোট পেয়েছেন। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী আওলাদ হোসেন (চশমা) ২ হাজার ৬৫৬ ভোট পেয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. কলিম উদ্দীন (নৌকা) ১ হাজার ১৯৪ ভোট পেয়েছেন।

বাগোয়ান ইউপির ১ নং ওয়ার্ডে রহিত আলী, ২ নং ওয়ার্ডে দিলিপ মল্লিক, ৩ নং ওয়ার্ডে সোহরাব হোসেন, ৪ নং ওয়ার্ডে এমএ মালেক, ৫ নং ওয়ার্ডে কাজী কোমর উদ্দীন, ৬ নং ওয়ার্ডে শংকর বিশ্বাস, ৭ নং ওয়ার্ডে ফেরদোস আলী, ৮ নং ওয়ার্ডে আনোয়ারুল ইসলাম ও ৯ নং ওয়ার্ডে জাকির হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নার্গিস পারভীন, জেসমিন আক্তার মুক্তা ও শাহীনুর খাতুন নির্বাচিত হয়েছেন।

মহাজনপুর ইউপিতে সদস্য পদে ১ নং ওয়ার্ডে নুরুল ইসলাম, ২ নং ওয়ার্ডে জয়নাল আবেদীন, ৩ নং ওয়ার্ডে মফিজুল ইসলাম, ৪ নং ওয়ার্ডে রফিকুল ইসলাম, ৫ নং ওয়ার্ডে সোহরাব হোসেন, ৬ নং ওয়ার্ডে  জহুরুল ইসলাম স্বপন, ৭ নং ওয়ার্ডে ছানোয়ার হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ডে আজিজুল হক ও ৯ নং ওয়ার্ডে শহিদুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। এ ইউপিতে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ফাহিমা খাতুন, গুলতা খাতুন ও রহিমা খাতুন জয়লাভ করেছেন।

মোনাখালী ইউপি সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন ১ নং ওয়ার্ডে মফিজুর রহমান, ২ নং ওয়ার্ডে দুলর্ভ হোসেন, ৩ নং ওয়ার্ডে রেজাউল ইসলাম, ৪ নং ওয়ার্ডে জুলফিকার আলী ভুট্টু, ৫ নং ওয়ার্ডে মুনছুর আলী, ৬ নং ওয়ার্ডে  মিজানুর রহমান, ৭ নং ওয়ার্ডে সাফায়েত হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ডে সিরাজুল ইসলাম ও ৯ নং ওয়ার্ডে জহির খান। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে পারুলা খাতুন, মরিয়ম ও আসমানী খাতুন বিজয়ী হয়েছেন।

দারিয়াপুর ইউপিতে সদস্য পদে ১ নং ওয়ার্ডে আনছার আলী, ২ নং ওয়ার্ডে গোলাম নবী, ৩ নং ওয়ার্ডে মাসুদ রানা, ৪ নং ওয়ার্ডে ময়নুদ্দীন, ৫ নং ওয়ার্ডে আওলাদ হোসেন, ৬ নং ওয়ার্ডে আরোজ আলী, ৭ নং ওয়ার্ডে শাহাজান আলী, ৮ নং ওয়ার্ডে তারা মিয়া ও ৯ নং ওয়ার্ডে  আব্দুল হান্নান জয়লাভ করেছেন। এ ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে আরজিনা খাতুন, শেফালী খাতুন ও শিরিনা আখতার জয়লাভ করেন।

গতরাত সাড়ে দশটার দিকে উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুল হাদী বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। তবে ইউপি সদস্যদের ফলাফলের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় তাদের ভোটের পরিমাণ পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেমায়েত উদ্দীন, রিটার্নিং অফিসার ডা. নুর আলমসহ নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চারটি ইউনিয়নের ৪০টি কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রদান করেন ভোটাররা। কেন্দ্র গুলোতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যণীয়। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিলো ৭৩ হাজার ৭৩৮। এর মধ্যে শতকরা ৮৬ ভাগের উপরে ভোট পোল হয়েছে। এদিকে সারাদিন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলেও দুপুরের পরে মোনাখালী ইউনিয়নের শিবপুর দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের সমর্থকদের দু দফা মৃদ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মহাজনপুর ইউনিয়নের যতারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের সাথে পুলিশের বাগবিতণ্ডা বাধে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। সেখানে শটগানের ১২ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী এএসআই জহুরুল ইসলাম।

মুজিবনগর উপজেলার চারটি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১২৫ জন ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।  প্রধান দুটি দল একক প্রার্থী নির্ধারণ করে প্রতীক বরাদ্দ দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বতন্ত্র ব্যানারে চারটি ইউপির তিনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জামায়াতের প্রার্থীরা। নির্বাচন ঘিরে চার স্ততরের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করে প্রশাসন। পুলিশ, বিজিবি ও ৱ্যাবের টহলের পাশাপাশি দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।