মসজিদের নামকরণ নিয়ে সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ইটের আঘাতে বৃদ্ধ নিহত

 

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি ফরিদপুরে দুপক্ষের বিরোধের নগ্ন বহির্প্রকাশ : গ্রামজুড়ে উত্তেজনা:ভাংচুর

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার ফরিদপুর স্কুলপাড়া জামে মসজিদের নাম পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে বিরোধে ষাটোর্ধ্ব মুসল্লি আব্দুল জলিলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি একই গ্রামের ওল্টুর ছেলে মিশর মসজিদের ইমামের ওপর হামলা করতে উদ্যত হলে আব্দুল মজিদ তাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করেন। সে সময় ক্ষিপ্ত মিশর তার মাথায় ইট মেরে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে নয়ন, জিন্না, মিশর মসজিদ কমিটির সভাপতি ও এম সবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক আহসান হাবীবের ঘর বাড়ি ভাঙচুর করে। বর্তমানে গ্রামজুড়ে চলছে চাপা উত্তেজনা।

জানাগেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের স্কুলপাড়ার মৃত রায়হান আলী মণ্ডল নিজ জমিতে গ্রামের মুসল্লিদের সহযোগিতায় ১৯৭৯ সালে ফরিদপুর স্কুলপাড়া জামে মসজিদটি নির্মাণ করেন। দীর্ঘ ৩৩ বছর মসজিদটি ওই একই নামে চলে আসছে। সম্প্রতি ওই গ্রামের কিছু মানুষের বোধোদয় ঘটে যে, মসজিদটি শুধু স্কুলপাড়ার নয়, সমস্ত গ্রামের। শুধু স্কুলপাড়া জামে মসজিদ হলে অন্যান্য পাড়ার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। বিশেষ করে গ্রামে নেতৃত্বদানকারী বিশ্বাস ও জোয়ার্দ্দার বংশের হোমরা-চোমরাদের। তারা মসজিদের নতুন করে একটা সার্বজনীন নাম দিতে আদা-জল খেয়ে লাগলেন। ঠিক করলেন মসজিদের নতুন নাম দেবেনফরিদপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। কিন্তু তাদের এ খায়েশে বাঁধ সাধলেন স্কুলপাড়াবাসীর সাথে সাধারণ গ্রামবাসী। স্কুলপাড়ার মৃত রায়হান মণ্ডল নিজ জমিতে এ পাড়ার মানুষের সহযোগিতায় মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার সহোদর মসজিদের নামে মাঠে জমি দিয়েছেন। তাদের দেয়া নাম পরিবর্তন করলে তাদের অপমান করা হবে। এমনকি স্কুলপাড়াকেও অপমান করা হবে। তারা তা হতে দিতে নারাজ। বেশ কিছুদিন ধরে এ নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। এরই মাঝে গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা মসজিদে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাগবিতণ্ডা শুরু হলে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই তা শেষ হয়। সাধারণ মুসল্লির বেশিরভাগ ঘরে ফিরে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, কয়েকজনের সাথে সবশেষে মসজিদের ইমাম মসজিদ ছেড়ে বের হলে নাম পরিবর্তনের পক্ষের শক্তির নেতা ওল্টু বিশ্বাস ইমামের ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। ইমামকে রক্ষা করতে ছুটে যান ওই গ্রামের মৃত আব্দুস সোবহানের ছেলে ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক মুসল্লি আব্দুল জলিল। ওই সময় ওল্টু বিশ্বাসের ছেলে মিশর ক্ষিপ্ত হয়ে মাথায়, কপালে ও চোখের নিচে ইট দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে। গ্রামের অনেকে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ওল্টু বিশ্বাস পূর্বে মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। বর্তমান টার্মে তাকে সভাপতি করা হয়নি। ওই ব্যাপারে তিনি ইমামসহ অনেকের ওপর ক্ষুব্ধ। গতকাল ওই বন্য ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটেছে জঘন্য এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে।

এ বিষয়ে মসজিদের ইমাম মাও. শহিদুল হক ও মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ আহসান হাবিব বুলবুল অভিন্ন সুরে বলেন, তাদের সামনেই মিশর ও সুজন, বাবুল আক্তার গাড্ডুর ছেলে সাকিব ও দাউদ জোয়ার্দ্দারের ছেলে জিন্না, জয়নাল মেম্বারের ছেলে নয়ন তাকে আক্রমণ করে। এক পর্যায়ে মিশর ও নয়ন ইট মেরে আব্দুল বৃদ্ধ জলিলকে হত্যা করে।এরপর নয়ন, জিন্না, মিশর মসজিজদ কমিটির সভাপতি ও এম সবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আহসান হাবীবের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। ঘটনাস্থলে বর্তমানে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও গ্রামজুড়ে চলছে চাপা উত্তেজনা।সংবাদ পেয়ে এ.এস.পি (সার্কেল) কামরুজ্জামান ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

নিহত বৃদ্ধ আব্দুল জলিল ৪ ছেলে ও ১ কন্যার জনক। তারা সকলে বিবাহিত। গতকাল বিকেলে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সরকারি হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে রাতে আলমডাঙ্গা থানায় নিহতের ছেলে আকুল বাদী হয়ে একটি এজাহার দায়ের করেছেন।