ভাইকে ছাড়াতে এসে ছোট ভাই গ্যাঁড়াকলে : দু ভাইকেই জেলহাজতে প্রেরণ : এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

দামুড়হুদায় রুবেল হত্যামামলার আসামি দলকা লক্ষ্মীপুরের লিটন গ্রেফতার

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার কলাবাড়ি গ্রামের রুবেল হত্যামামলার আসামি বহু অপকর্মের হোতা দলকালক্ষ্মীপুরের বহুল আলোচিত লিটনকে (৩৫) দীর্ঘ ৬ বছর পর আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। আটকের পর তাকে দামুড়হুদা থানায় হস্তান্তর করেন। তাকে থানায় নেয়ার সময় ছোট ভাই আলমগীর (৩২) লিটনকে ছাড়াতে আসলে তাকেও আটক করা হয়। আলমগীর লক্ষ্মীপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলাসহ ভাঙচুর মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। পরে পুলিশ দু ভাইকেই আদালতে সোপর্দ করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। তাদের দু ভাইকে আটক করে জেলা হাজতে পাঠানোর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে লক্ষ্মীপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রফিকুল আলম দলকা বিল সংলগ্ন শাহিনের বাড়ি থেকে তাকে আটক করেন।

জানা গেছে,  চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে রুবেলকে (২২) ২০১১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন ভোরে গোপালপুর মাঠপাড়ার ঝন্টু ফকিরের বাড়ির ২শ গজ অদূরে বাগানের মধ্য থেকে রুবেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই নিহত রুবেলের বাবা আব্দুল খালেক বাদি হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী মাসের ১৫ তারিখে ওই মামলার দিন ধার্যও রয়েছে।

ঘটনার বেশ কিছুদিন পর পুলিশ ওই হত্যা মামলায় মেহেরপুর দরবেশপুরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী মতিয়ার রহমান ওরফে মতি মেড়াকে গ্রেফতার করে। ওই মতি মেড়াই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে উঠে আসে দলকা লক্ষ্মীপুরের সাবেক ইউপি সদস্য মজনু মেম্বারের ছেলে মিজানুর রহমান লিটনের নাম। এর কিছুদিন পর লিটন দলকার বিলকে কেন্দ্র করে এলাকার লোকজনের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন এবং গ্রাম ছেড়ে চুয়াডাঙ্গা শহরে বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। লিটন চুয়াডাঙ্গায় বসবাস করলেও এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হতো। ফলে সাধারণ জনগণ তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। লিটন ২০১৫ সালে এলাকার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন এবং লোকজন সাথে নিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এতো কিছুর পরও পুলিশ তার টিকিটিও ছুতে পারেনি বলে জানান এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণ। ক্ষমতার দাপটে সবকিছু থেকে পার পেয়ে যেতো বহু অপকর্মেও হোতা লিটন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রুবেল হত্যা মামলার আসামি মিজানুর রহমান লিটনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য গত ২০১৫ সালে ১১ আগস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। কিন্তু সে হাজির হয়নি।

জুড়ানপুর ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেছেন, তার চলাফেরা ভালো ছিলোনা। এক সময় এলাকার বেশকিছু লোকজন দলকার বিলে চুনো পুটি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। লিটন বিল লিজ নেয়ার পর সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। কেউ কিছু বললে তাকে মিথ্যা মালায় ফাঁসানো হতো। ফলে মানুষ তাকে ভয় পেতো। হত্যা মামলার আসামি মিজানুর রহমান লিটন মামলা দায়েরের পর থেকে কোনোদিন আদালতে যায়নি, জামিনও নেয়নি। তার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরওয়ানা থাকায় ক্ষমতার দাপটে সে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াতো। তার গ্রেফতারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ জানান, লিটন হত্যা মামলার পলাতক আসামি এটা আমার জানা ছিলো না। বিষয়টা জানার পর তাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বেশকিছু দিন আত্মগোপনে ছিলো। গতকাল সে দলকা লক্ষ্মীপুর বিলে মাছ বিক্রি করতে আসার খবর পাওয়ার সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার ব্যবহৃত অ্যাপাচি আরটিআর মোটরসাইকেলটিও থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।