বোমা মেরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে গরু ব্যবসায়ীদের ২০ লক্ষাধীক টাকা ডাকাতি

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ-গাংনী সড়কের নতিডাঙ্গা মধুখালী মাঠে দীর্ঘ সময় ধরে ডাকাতদলের তাণ্ডব

 

 

 

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি/স্টাফ রিপোর্টার: রাত তখন আনুমানিক সাড়ে ৮টা। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মন্সিগঞ্জ-গাংনী সড়কের মধুখালী মাঠে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণ। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। পাশ্ববর্তী নতিডাঙ্গা গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে ঘোষনা, আমাদের গ্রামের গরু ব্যবসায়ীরা পাশের মধুখালী মাঠে ডাকাতির কবলে পড়েছে। যার যা আছে তাই নিয়ে ডাকাত ধরতে ঝাপিয়ে পড়ো। এ ঘোষনা শুনে গ্রামবাসী যখন ঘটনাস্থলে পৌছায় তখন সেখানে রক্তের স্রোত।

ডাকাতদল দীর্ঘ সময় ধরে তাণ্ডব চালিয়ে গরু ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা ডাকাতি করেছে। কুপিয়ে খুন করেছে একজনকে। ডাকাতদলের ধারালো অস্ত্রের এলোপাথাড়ি কোপে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাসপাতালে অনিশ্চতার প্রহর গুণছেন ৯ জন। অবশ্য আহত হয়েছেন ১৬ জনের বেশি। ডাকাতদলের সামনে টাকার থলি খুলে ছড়িয়ে দিয়ে দৌড়ে গ্রামে ফিরলেও জ্ঞানহারা হয়ে পড়েছেন এক ব্যবসায়ী। তিনিই প্রথমে গ্রামবাসীকে ওই ডাকাতির খবর দেন।

ডাকাতদলের ধারালো অস্ত্রের উপর্যপুরি কোপে নিহত হয়েছেন নতিডাঙ্গা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী ভূলু (২৮)। তিনি রবিউল ইসলামের ছেলে। এ ছাড়া রক্তাক্ত জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রযেছেন একই গ্রামের আলী হোসনের ছেলে শামসুল (৩৪), নতিডাঙ্গার বাসিন্দা হাটবোয়ালিয়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে হানিফ (২৮), নতিডাঙ্গার ঠাণ্ডু মালিতার ছেলে গ্রামের পশু চিকিৎসক জিয়াউর রহমান (২৭), চাঁদ আলীর ছেলে বাবুল আক্তার (৩৫), বিশারত আলীর ছেলে হারেজ আলী (৩০), বদর উদ্দীনের ছেলে মিলকি(৩৫), আব্দুল বারেকের ছেলে ইকরামুল (৪৫), বুদ্দিনের ছেলে টরিক (৩২), শাহাবুদ্দিনের ছেলৈ আজিজুল (৩৫)। এদের মধ্যে ইকরামুল ও বাবুল আক্তার গতরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক এদের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, অবস্থা খুবই শঙ্কাটাপন্ন।

ডাকাতদল মিলকির নিকট থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকাত, হারেজের নিকট থেকে দেড় লাখ টাকা, জিয়াউর রহমার নিকট থেকে ৮৫ হাজার টাকা, হানিফের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা, শামসুলের নিকট থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। এ  ছাড়া অন্যদের নিকট থেকেও নিয়েছে টাকা। তবে তাদের কার নিকট থেকে কতোটাকা ডাকাতি হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করে ডাকাতির কবলে পড়া গরু ব্যবসায়ীরা জানাতে পারেননি।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডাকাতির কবলে পড়া গরু ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গ্রামেরই লাটাহাম্বার মালিক চালক তৌহিদ হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জীবননগরের শেয়ালমারি পশুহাটে গরু কেনা-বেচার কাজ শেষে সন্ধ্যায় শ্যালোইঞ্জিন চালিত লাটাহাম্বারে দুটি গরুসহ ২২ জন ব্যবসায়ী বাড়ি ফিরছিলাম। মুন্সিগঞ্জ হাসপাতাল মোড় হয়ে গাংনী সড়কে প্রবেশ করি। নতিডাঙ্গার অদূরবর্তী মধুখালী মাঠের মধ্যবর্তী স্থানে পাটকাঠি দিয়ে বেরিকেড দেয় ডাকাতদল। পাটকাটির পর পর দুটি আটি লাটাহাম্বার অতিক্রম করলে ডাকাতদল বোমা নিক্ষেপ করে। বোমা বিকট শব্দে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে সকলে। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লাটাহাম্বার রাস্তার পাশের খাদে দিয়ে পালায়। ২৫/৩০ জনের ডাকাতদল ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে। যার কাছে যা আছে তা ডাকাতি করতে থাক। ডাকাতদল যেভাবে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে তার  বর্ননা দেয়া কঠিন। ঘটনাস্থলে রক্তের বন্যা বয়ে যেতে থাকে। বোমার শব্দে ও বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করেও ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৫শ গজ দূরে থাকা পুলিশ এগিয়ে আসেনি। বরঞ্চ তার আগেই গ্রামের লোকজন সংগঠিত হয়ে ঘটনাস্থলের দিকে ছুটতে থাকে। ডাকাতদল মাঠের দিকে নেমে যায়।

গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে পৌছ রক্তাক্ত গরু ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক নতিডাঙ্গার গরু ব্যবসায়ী ভুলুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অন্যদের পর্যায়ক্রমে সেলাই দেয়া হয়। ভর্তি করে চলে চিকিৎসা। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশিদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, সদর থানার ওসি …………. সঙ্গীয় ফোর্স হাসপাতালে পৌছে আহতদের নিকট থেকে ডাকাতির বর্ণনা শোনেন। পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছান। গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে গোটা মাটা ঘেরাও করে রাখেন। গতরাত দেড়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুরো মাঠ ঘেরাও করা অবস্থায় ছিলো। তবে ডাকাতদলের তেমন কাওকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

ডাকাতির শিকার গরু ব্যবসায়ীদের অনেকেই এলাকার পুলিশ ফাঁড়ির টহরদলকে দোষারোপ করেছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার বলেছেন, পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি অবশ্যই ক্ষতিয়ে দেখা হবে। ডাকাতদল ধরে আইনে সোপর্দ করার সর্বাত্মক চেষ্টা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

ডাকাতির বিষয়ে নতিডাঙ্গা গ্রামের মৃত সুন্নত আলীর ছেলে গরু ব্যপারী আব্দুল জব্বার বলেছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার শেয়ালমারী গরু হাট থেকে কেনা বেচা করে লাটাহাম্বার যোগে নতিডাঙ্গা গ্রামের মৃত হাবিলের ছেলে বদর আলী, বদরের ছেলে মিল্কি ও লিমন, হামিদ মালিথার ছেলে মিঠু, বারেকের ছেলে ইকরামুল, চান্দালীর ছেলে বাবলু, ঠান্ডুর ছেলে জিয়াউর, কুরবানের ছেলে আলামিন, উম্বাদ খার ছেলে জহুরুল, শুকুর আলীর ছেলে ট্যংরা, ঈমানের ছেলে বিল্লাল, বিশা ছেলে হারেজ, বকুলের  ছেলে ভুলু, ওহিদের ছেলে ঝন্টু, সাহাবউদ্দিনের ছেলে আজিজুল, মফিজের ছেলে সিরাজুল, নবিছদ্দির ছেলে ওয়াজ, বাদলের ছেলে হাসেম, নবিছদ্দিনের ছেলে লাটাহাম্বার চালক তৌহিদ সহ ২০/২২  জন এক সাথে বাড়ি ফিরছিলাম। রাত সাড়ে ৯ টার দিনে মুন্সিগঞ্জ সোনাতনপুর মোড়ে পুলিশ আমাদের গতিরোধ করে মধুখালী রাস্তায় যেতে নিষেধ করে অন্য পথে যাবার জন্য বলে। অথচ লাটা হাম্বার চলক বলে দারোগার সাথে কথা হয়েছে। সমস্যা নেই। ওর কথা মতো মধুখালী মাঠের রাস্তায় গেলে ডাকাতের কবলে পাড়ি।

তিনি বলেন, মধুখালী মাঠের পুকুরের কাছে পৌছুলে রাস্তার উপর পাটখাটি বোঝা দেখতে পাই। লাটাহাম্বার পাট খাটির বোঝার উপর দিয়ে চালিয়ে দিলে পিছন দিক থেকে ডাকাত দল দাড়া দাড়া বলে তেড়ে আসে। গাড়ি দ্রুত সরে পড়ার চেষ্টা করলে একটি বোমা বিস্ফোরন ঘটায় ডাকাত দল। বোমার শব্দে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। মুহুত্বের মধ্যে আবার সামনে থেকে একটি ডাকাত দল এসে আমাদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রক্তে ভেষে যায় রাস্তা। গরু ব্যপারীদের কাছে থাকা নগত প্রায় ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেই। ডাকাত দল প্রায় পৌনে ১ ঘন্টা ধরে তান্ডব চালায়। বোমার শব্দ ও আমাদের চিৎকার চেচামেচিতে পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ডাকাত দল র্নিবিগ্নে ডাকাতি করে মাঠের দিকে চলে যায়। মোবাইল ফোনে বাড়াদী ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাসুদ পারভেজের কাছে জানালে নতিডাঙ্গা গ্রামের মসজিদের মাইকে প্রচার দিলে গ্রামাবাসী এসে আহতদের উদ্বার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

গ্রামবাসী জানায়, মসজিদের মাইকে প্রচার শুনে লাঠি সোটা নিয়ে মাঠ ঘেরাও করা হয়। এবং আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন, ওসি (তদন্ত্) মেহেদি রাসেল এসআই জিয়াউর রহমান, এসআই মহাব্বত সঙ্গিয় ফোর্স নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সংবাদ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার  ও এডিশনাল এসপি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মাঠে ডাকাত দল অবস্থান করছে সন্দেহে পুলিশ ও নতিডাঙ্গা গ্রামবাসী মধুখালী মাঠ ঘেরাও করে রেখেছে।

নিহত ভুলুর পরিচয়

‌     ভুলু নতিডাঙ্গা গ্রামের রবিউল ইসলামের ছোট ছেলে। সে দু ভাই এক বোনের মধ্যে ছিলো ছোট। তিন বছর আগে বয়ে করেছে। তিন মাসের কন্যা সন্তান রয়েছে। গরু ব্যবসা করে ভুলু বেশ ভালোই ছিলো। ডাকাতদল তার কাছে থাকা টাকাই শুধু হাতিয়ে নেয়নি, প্রানটাও কেড়ে নিয়েছে। এলাকাবাসী ক্ষোভের আগুনে ফুসছে। সে কারনেই ডাকাতধরতে গতরাতে গোটা মাঠ ঘিরে ডাকাত ধরার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, ওই সড়কে প্রায়ই ডাকাতি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে গতরাতের মতো অতোবড় ডাকাতরি ঘটনা স্মরণকালে এ্টাই প্রথম।