বোমাঘাতে সেই মেম্বার ফের অক্ষত থাকলেও মৃত্যুশয্যায় সঙ্গী

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কষবা গ্রামের সেই ইউপি সদস্য শুকুর মীর এবারও বিস্ফোরিত বোমায় অক্ষত আছেন। তবে তার সঙ্গী লিখন মিয়া (২০) গুরুতর জখম হয়েছেন। গতরাত ১০টার দিকে শুকুর মীরের বাড়ির প্রধান গেটের সামনে এ বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাথমিকভাবে শুকুর মীরের ওপর বোমা হামলা হয়েছে বলে প্রচার হলেও আহত লিখনের ক্ষতস্থান বিবেচনায় বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে স্থানীয়সহ পুলিশের মাঝে সন্দেহ দানা বেধেছে। শুরু হয়েছে তদন্ত।
আহত লিখন মিয়া পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগালে এবং শুকুর মীরের নিকটাত্মীয়। তার পিতার নাম আয়ুব আলী। তাকে গতরাতেই গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। শুকুর মীর ধানখোলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড (কষবা) সদস্য।
২০০৫ সালের এক দুপুরে শুকুর মীর কষবা বাজারের মুদিব্যবসায়ী শিলু মিয়াকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে গাংনী থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। গ্রামের অদূরবর্তী মহিষাখোলা-ভাটপাড়া মাঠের মধ্যে পৌঁছুলে সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। এতে শিলু নিহত হন। আহত হয় শুকুর মীর। এ ঘটনার পরেও তার ওপর কয়েক দফা বোমা হামলা হয়েছিলো বলে এলাকা সূত্রে জানা গেছে। শুকুর মীরের বিরুদ্ধে তখন চরমপন্থিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠেছিলো। স্থানীয় ও আহতের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, রাত ১০টার দিকে গ্রামের একটি দোকান থেকে বাড়ি ফিরছিলেন শুকুর মীর। তিনি প্রধান গেট পেরিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে বাইরে বিকট শব্দে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের মানুষের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবে নিয়ে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে লিখনকে রক্তাত্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। তার শরীরে বোমাঘাতের স্থান থেকে রক্ত ঝরছিলো। মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে দ্রুত গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেন।
আহত লিখনের সাথে ছিলেন তার স্বজনেরা। এদের মধ্য থেকে একই গ্রামের জাব্বারুল ইসলাম জানান, গ্রামের একটি দোকান থেকে শুকুর মীরকে এগিয়ে দিতে তিনি ও লিখন তার বাড়ির সামনে পর্যন্ত আসেন। শুকুর মীর বাড়ির ভেতর প্রবেশ করামাত্রই কয়েকজন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত একটি বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে আহত হয় লিখন।
আহত লিখনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. মকবুল হাসান। লিখনের প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য তিনি কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। রাত ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে লিখনকে নেয়া হয় কুষ্টিয়ায়। বোমাঘাতের বিষয়ে ডা. মকবুল হাসান বলেন, তার মুখ ও থুতনীর ডান পাশ, ডান হাতের কব্জি, তালু ও আঙ্গুল এবং ডান পায়ে বোমাঘাতের ক্ষত দেখা গেছে। ডান উরুর এক জায়গায় ক্ষত রয়েছে। ক্ষতগুলো বেশ গভীর। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। তবে প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্তক্ষরণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না হলে রক্তক্ষরণজনিত কারণে রোগীর সঙ্কটাপন্ন অবস্থা হতে পারে।
এদিকে বোমা বিস্ফোরণের সময় লিখন ও জাব্বার শুকুর মীরের সাথে ছিলেন বলে দাবি করলেও এ বিষয়ে শুকুর মীরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে শুকুর মীরের বাড়ির আশপাশের কোনো প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা ওই দুজনের সাথে থাকার বিষয়ে জোরালে বক্তব্য মেলেনি। রাতের আঁধারের বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে স্থানীয়দের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চলছে বিরূপ আলোচনা-সমালোচনাও। সে আলোচনায় সন্দেহ বাড়িয়ে দিয়েছে লিখনের শরীরের ডান পাশের ক্ষত। এলাকার মানুষের নানাবিধ প্রশ্নের সাথে পুলিশ কর্মকর্তারাও একমত পোষণ করেছেন। তাই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে লিখনের আহত হওয়ার বিষয়টিকে।
গাংনী থানার ইন্সপেক্টর (ওসি-তদন্ত) মোক্তার হোসেন জানান, আহতের ডান হাত, ডান পা ও মুখমণ্ডলের ডান অংশে ক্ষত দেখা গিয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া স্থানীয়রা কেউ-ই বোমা হামলা নাকি বিস্ফোরণ সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছুই বলতে পারেনি। তাই পুলিশের মনে সন্দেহের দানা বেঁধে উঠেছে। তাছাড়া শুকুর মীরের ওপর পুর্বের বোমা হামলার ঘটনাগুলো পুলিশের তদন্তের সামনে চলে এসেছে। ওই হামলাগুলো কীভাবে এবং কেন হয়েছিলো তাও তদন্তের স্বার্থে বিশ্লেষণ করছে পুলিশ।
লিখন সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করে ওসি মোক্তার হোসেন আরো বলেন, বোমা বিস্ফোরণের খবর পেয়ে গাংনী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মনিরুজ্জামান ও কষবা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখান থেকে বিস্ফোরিত বোমার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে গতরাত ২টার দিকে এ সংবাদ লেখার সময় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিখনের চিকিৎসা চলছিলো। তার অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান তার স্বজনরা।