দৌলতপুরের ২৪টি ইটভাটায় অবাধে কাঠ পুড়ছে

১২টির লাইসেন্স থাকলেও মেয়াদত্তীর্ণ

দৌলতপুর প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বৈধ-অবৈধ সকল ইটভাটা মালিক একাট্টা হয়ে তাদের ইটভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছেন। উপজেলার ইটভাটা মালিকদের ২৪টি ইটভাটায় অবৈধভাবে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ কাঠের খড়ি পুড়ছে। সরকারি নিয়মনীতির কোনোরকম তোয়াক্কা না করে এখানকার ইটভাটা মালিকরা স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইটভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এ সকল ইটভাটা কৃষি জমিতে স্থাপন করার ফলে ব্যাপকহারে কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। তাছাড়া ইটভাটা সংলগ্ন অন্যান্য জমির ফসল পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষক। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৪টি ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।  পরিবেশ আইন অনুসারে দৌলতপুর উপজেলায় ইটভাটা স্থাপনের জন্য কোনো জায়গা না থাকলেও ইটভাটা মালিকদের সাথে পরিবেশ কর্মকর্তাদের অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে তারা ১৮টি ইটভাটা মালিককে অনুমোদন দিয়েছে এবং এর জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও দৌলতপুর উপজেলায় তা কোনোভাবেই মানা হচ্ছে না।

অন্যদিকে সরকারি নির্দেশমতে ড্রাম চিমনির ব্যবহার অবৈধ ঘোষণা করা হলেও এখানকার ৬ জন ইটভাটা মালিক সরকারের এ নির্দেশ অমান্য করে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করছে। ড্রাম চিমনির ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার পরও তারা সরকারকে রীতিমত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। খোদ দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের এক কিলোমিটারের মধ্যে ৩টি ইটভাটায় ড্রাম চিমনির ব্যবহার করা হচ্ছে। দৌলতপুর উপজেলার ২৪টি ইটভাটার মধ্যে ফিক্সড চিমনি রয়েছে ১৮টি এবং ড্রাম চিমনি রয়েছে ৬টি। ফিক্সড চিমনিগুলো উপজেলার স্বরূপপুরে আব্দুস সাত্তার, বজলুর রহমান ও নুরুল ইসলাম, ডাংমড়কায় খন্দকার আবুল কালাম আজাদ, মোহাইমিনুল হক, শাজাহান সিরাজ ও জাহাঙ্গীর আলম, জয়রামপুরে মতিউর রহমান, সোনাইকান্দি জোয়ার্দ্দারপাড়ায় শহিদুল ইসলাম অলি, রিফাইতপুর গলাকাটিতে নজরুল ইসলাম, চক দৌলতপুরে আব্দুল হান্নান ও রমজান আলী, মানিক দিয়াড়ে এজাজ আহমেদ মামুন, দৌলতপুর হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী এলাকায় মনিরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আব্দুস সালাম, আড়িয়ায় নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা ও খলিশাকুণ্ডিতে ফয়সাল মেহেদী হাসান চপল। এদের মধ্যে ১২ জনের ইটভাটার লাইসেন্সের মেয়াদ ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। অন্য ৬ জনের কোনো লাইসেন্স নেই। অবৈধ ড্রাম চিমনির মধ্যে গলাকাটি মোড়ের ঝুমুর আলী, ঝাউদিয়ায় ইয়াছিন আলী, দৌলতখালীর সুজন আলী, বাজুডাঙ্গায় আমান উল্লাহ, সাদিপুরে ইদবার আলী এবং গোয়ালগ্রামে হাজি আহম্মদ আলী। দৌলতপুরসহ আশপাশের বনজসম্পদ উজাড় করে অবশেষে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক খড়ি দৌলতপুরের এসব ইটভাটায় মজুদ করে তা পোড়ানো হচ্ছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকতার হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র ব্যতীত যেসব ইটভাটায় অবৈধভাবে ইট প্রস্তুত করার খবর পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও এ সকল ইটভাটায় শুধুমাত্র কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

এদিকে উপজেলা পরিষদের মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে ৭টি ও দৌলতপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে ৫টি ইটভাটা স্থাপন ও অনুমোদন কীভাবে হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তার জবাব মেলেনি। অত্যন্ত জনবহুল এলাকায় কীভাবে ওই ১২টি ইটভাটামালিক কীভাবে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র পেয়েছে তা  এলাকাবাসী ও সচেতনমহলের বোধগম্য নয়। জনবহুল এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করার ফলে শিশুসহ সব ধরনের মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, যক্ষ্মা, চর্মসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।