ঝিনাইদহের চার উপজেলায় নির্বাচনে সংঘর্ষ : আজ হরতাল

ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুজনের কারাদণ্ড : ভোট বর্জন

ঝিনাইদহ অফিস: ভোট বর্জন, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে ঝিনাইদহের ৪ উপজেলার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে উৎসবের মধ্যদিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলোতে তেমন ভোটার উপস্থিতি না থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

সকাল ১১টার সময় শৈলকুপা শহরের কবিরপুর নিজ বাসভনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জন ও বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধা হরতাল পালনের ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী রাকিবুল হাসান খান দিপু। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোশারফ হোসেন শিকদাদের লোকজন ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে জালভোট প্রদান, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এজেন্টদের বের করে দেয়া এবং কর্মীদের মারপিট করছে। এছাড়া ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনার পর শৈলকুপার থানার ওসি আনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সকালে ব্যালটবাক্স ও ব্যালটপেপার ছিনতাইয়ের কারণে শৈলকুপার মথুরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে।

এদিকে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দোগাছি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফয়জুদ্দীন মোল্লাকে ৩ মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারকে লাঞ্ছিত ও জালভোট দেয়ার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমান আতিয়ার রহমান নামে এক যুবককে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে ভোটকেন্দ্রে আসার সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপি সমর্থকদের ওপর হামলা করে। এ সময় উভয়দলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে মাধবপুর গ্রামের আওয়ামী লীগকর্মী আলী আজগর, একই গ্রামের মফিজ, চান্দেরপোল গ্রামের রফিকুল, পুড়োবেতাই গ্রামের আশাদুল, বিএনপিকর্মী নাছির উদ্দীন, নাজমুল ও আবুল কালাম আহত হন। একই সময় গান্না ইউনিয়নের রঘুনাথপুর কেন্দ্রে বিএনপি কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালালে দুর্গাপুর গ্রামের কিতাবদি, তোয়াজ উদ্দীন, আব্দুল হান্নান, সুপ্রাদ আলী, আব্দুল জব্বার ও বাবলু মিয়া আহত হন। সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার মামুনশিয়া গ্রামে বিজিবির টহলদলের সামনে আওয়ামী লীগকর্মীদের হামলায় ফারুক ও আব্দুল কুদ্দুস আহত হন।

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের খাজুরা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসার সময় যুবদল নেতা লোকমান হোসেন ও মঙ্গল মিয়াকে পিটিয়ে আহত করে। এদিকে ঝিনাইদহ কেসি কলেজ ভোটকেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও ভোটার তালিকা কেড়ে নেয়া হয়েছে। এ সময় জেলা বিএনপি নেতা শাহজাহান আলী আহত হন।

সকালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাঞ্চননগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সরকার দলীয় সমর্থকদের হামালায় তিনজন আহত হয়েছে। এ সময় মিলন নামে বিএনপি সমর্থক চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আলিমের এজেন্টকে বের করে দেয়। ঝিনাইদহ পৌর এলাকার পবহাটি ও উদয়পুর ভোটকেন্দ্রে ৫ বিএনপি সমর্থককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষ। এদিকে কালীগঞ্জ উপজেলায় নলডাঙ্গাভুষণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবর্ণসারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উলণ্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাকোবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়তালিয়ান দাখিল মাদরাসা, সাহাপুর ঘিঘাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেলাট দৌলতপুর দাখিল মাদরাসা, হাটবারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বার্ফা মঙ্গলপৈতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমরাহাটি দাখিল মাদরাসা, ঝন-ঝনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাগরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাজদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ  ২৬টির অধিক ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে কেন্দ্র দখল করে নেয়। ঝিনাইদহের চারটি উপজেলায় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৩৮৮টি আর ভোটার ছিলো ৮ লাখ ৪০ হাজার ৮১৪ জন।