তৃতীয় ধাপের তফশিল ঘোষণা : দামুড়হুদাসহ ৮৩ উপজেলায় ভোট ১৫ মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার: তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তফশিল অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদাসহ ৮৩টি উপজেলায় আগামী ১৫ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্দলীয় চরিত্র হারাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় ভিত্তিতে প্রার্থী চূড়ান্তসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। দল দুটি কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও একক প্রার্থী দেয়ার জন্য তাদের জেলা ও উপজেলা ইউনিটকে লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছে। কোনো কোনো উপজেলায় দলের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত না পাওয়া প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হচ্ছে। এ রকম ক্ষেত্রে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের আচরণের ফলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিবিড়ভাবে যুক্ত ব্যক্তিরাও নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করলেও বিএনপির তেমনটি করতে পারেনি।

নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ ফেব্রুয়ারি, যাচাই-বাছাই ১৭ ফেব্রুয়ারি, প্রত্যাহার ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ইসি সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন। এসময় তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রতিটি ধাপেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।

এর আগে আরো দু দফায় উপজেলা নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে ইসি। দেশের ৪৮৭ উপজেলার মধ্যে প্রথম ধাপে ৯৭ উপজেলায় ১৯ ফেব্রুয়ারি, একটিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় দফায় ১১৭ উপজেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে। এছাড়া বাকি উপজেলাগুলোতে চতুর্থ দফার ভোট ২৫ মার্চ ও পঞ্চম দফার ভোট ৩১ মার্চ হওয়ার কথা। তফশিলও এ মাসে ঘোষণার কথা রয়েছে। বর্ষা মরসুমকে সামনে রেখে ঊপকূলের ১৬ জেলার ৪৯ উপজেলার ভোটও মার্চের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি।

যে ৮৩ উপজেলায় নির্বাচন: আগামী ১৫ মার্চ যে ৮৩টি উপজেলায় নির্বাচন হবে সেগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর, দিনাজপুর সদর ও নবাবগঞ্জ, নীলফামারী সদর, লালমনিরহাটের আদিতমারী, কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী ও চিলমারী, গাইবান্ধা সদর ও সাদুল্লাপুর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ, নওগাঁর মান্দা, পোরশা ও ধামুইরহাট, রাজশাহীর গোদাগাড়ি, চারঘাট ও দুর্গাপুর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, যশোরের মনিরামপুর, নড়াইলের লোহাগড়া, বাগেরহাট সদর, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, মংলা ও শরণখোলা, খুলনার পাইকগাছা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ, ভোলা সদর, বরিশালের মুলাদী, হিজলা ও বাবুগঞ্জ, পিরোজপুরের নেছারাবাদ, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, শেরপুরের শ্রীবর্দী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, গৌরীপুর, মুক্তাগাছা, ফুলপুর ও ধোবাউড়া, নেত্রকোনা সদর ও মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, কুলিয়ারচর ও হোসেনপুর, গাজীপুরের শ্রীপুর, ফরিদপুর সদর, আলফাডাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা ও মধুখালী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, শরীয়তপুর সদর ও নড়িয়া, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও দ. সুরমা, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও দেলদুয়ার, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, হোমনা, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়া ও তিতাস, চাঁদপুরের কচুয়া ও হাজীগঞ্জ, নোয়াখালীর সেনবাগ, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটির বরকল, বাঘাইছড়ি ও কাউখালী, মানিকগঞ্জের ঘিওর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, ফেনীর দাগনভূঁইয়া এবং বান্দরবান সদর ও আলীকদম।
নির্বাচনী ম্যানুয়াল পৌঁছেনি: ইসির নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, তৃতীয় ধাপের তফশিল ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারেনি কমিশন। চলতি সপ্তায় আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনী ম্যানুয়াল হাতে পাননি কর্মকর্তারা। গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম ধাপের ও ২৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের তফশিল ঘোষণার পরও এখন পর্যন্ত এসব উপজেলায় নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়াল সরবরাহ করা হয়নি। ম্যানুয়াল না থাকায় সমস্যায় পড়েছে রিটার্নিং অফিসার ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ সমস্যা সমাধান না করে তৃতীয় ধাপের তফশিল ঘোষণা করায় সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই আচরণ বিধিমালা ও নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়ালসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার রীতি রয়েছে।

এদিকে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়া আগামী রোববার বাজেট, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ আগামী এক বছরের সার্বিক বিষয়ে ইসির পরিকল্পনা নিয়ে নির্ধারিত বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।