ডেসটিনির ৫১ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগপত্র

স্টাফ রিপোর্টার: ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক সেনাপ্রধান হারুনুর রশীদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনসহ ৫১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কমিশনের নিয়মিত সভায় চার হাজার ১১৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং মানি লন্ডারিঙের (অর্থ পাচার) অভিযোগে পৃথক দুটি মামলার ক্ষেত্রে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বিচারের জন্য অভিযোগপত্রটি আগামী সপ্তায় আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লি. (ডিটিপিএল) ও ডেসটিনি মাল্টি পারপাস কোঅপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অনুসন্ধান কাজ শুরু করি। প্রায় এক বছরের অধিক সময় তদন্ত করে কমিশনের তদন্ত টিম প্রায় ১ হাজার ৩শ পাতার প্রতিবেদন কমিশনে পেশ করে। কমিশন তা পর্যালোচনা করে গতকাল বৃহস্পতিবার নিয়মিত সভায় এ বিষয়টি অনুমোদন করে। মাল্টিপারপাসের মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে এবং ট্রি প্লানটেশনের মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে পরিচালনা পর্ষদের একাধিক ব্যক্তি দুটি মামলাতেই অভিযুক্ত হয়েছেন। এখন বিচার শুরুর জন্য অভিযোগপত্র আগামী সপ্তায় আদালতে দাখিল করা হবে।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশনের আওতায় ছয় কোটির অধিক গাছ (কল্পিত) বিভিন্ন প্যাকেজে সাড়ে ১৭ লাখ গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সরেজমিন দুদকের তদন্তে সাড়ে ৩২ লাখ গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তাদের অপরাধলব্ধ আয় হয়েছে দুই হাজার ৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা পরবর্তী সময়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তরা অভিনব ও কৌশলী প্রতারণা করেছেন। আর ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাড়ে আট লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৪৬ ভাগ পর্যন্ত লাভে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডেসটিনির মাত্র ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। যেখানে তাদের দায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। ফলে গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধের কথা কল্পনা করা যায় না।

দুদক জানায়, দু মামলায় মোট ৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন উভয় মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন। ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় দায়েরকৃত ৩২ নম্বর মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তে আরও সাতজনের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এ মামলায় দু হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকা পাচারের দায়ে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে আসামিরা হলেন- ডিটিপিএল এবং ডি২কে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, ডিটিপিএলের চেয়ারম্যান এবং ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) এম হারুন-আর-রশিদ, ডি২কে’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ডেসটিনি গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোফরানুল হক (ডেসটিনি-২০০০ লি. এর প্রাক্তন পরিচালক ও ডিএমডি), ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান (ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের প্রাক্তন পরিচালক), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মেজবাহ উদ্দিন (প্রাক্তন পরিচালক), ডি২কে পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, মিসেস ফারহা দিবা, মিসেস জামশেদ আরা চৌধুরী, গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান (প্রাক্তন পরিচালক ডেসটিনি-২০০০ লি.), ভাইস প্রেসিডেন্ট নেপাল চন্দ বিশ্বাস (ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের প্রাক্তন পরিচালক), ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার ও পিএইডি এক্সিকিউটিভ জসিমউদ্দিন ভুইয়া, ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার ও ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ জাকির হোসেন, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের সোহেল, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান এবং ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার ও ক্রাউন এক্সিকিউটিভ আবুল কালাম আজাদ। একই তারিখে দায়ের করা ৩৩ নম্বর মামলায় ২২ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তে আরও ২৪ জনের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এ মামলায় এক হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৫ টাকা পাচারের দায়ে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এতে আসামিরা হলেন- ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের এমডি ও ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ রফিকুল আমীন, ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জে. (অব.) এম হারুন-আর-রশিদ, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, প্রাক্তন ডিএমডি মোহাম্মদ গোফরানুল হক, প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মো. মেজবাহ উদ্দিন (স্বপন), ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারহা দিবা, জামশেদ আরা চৌধুরী, প্রাক্তন পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ বিশ্বাস, ডিএমসিএসএল’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, প্রাক্তন যুগ্ম-সম্পাদক আজাদ রহমান, প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ মো. আকবর হোসেন সুমন, ডিএমসিএসএল’র প্রাক্তন সদস্য মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সাইদুল ইসলাম খান (রুবেল), মো. সুমন আলী খান, শিরীন আক্তার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মো. মজিবুর রহমান, ডায়মন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও গ্রুপের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, বেস্ট এভিয়েশনের লিমিটেডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. এম হায়দারুজ্জামান, উপদেষ্টা মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, প্রাক্তন হেড অব ফিন্যান্স কাজী মো. ফজলুল করিম, প্রাক্তন সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মোল্লা আল আমিন, ইসলাম ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. শফিউল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ মো. জিয়াউল হক মোল্লা, প্রাক্তন ম্যানেজার সিকদার কবিরুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ মো. ফিরোজ আলম, মমতাজ এন্টারপ্রাইজ ও গোল্ডেন লাইন এসোসিয়েটসের মালিক ওমর ফারুক, ডেসটিনি গ্রুপের কন্ট্রোলার সুনীল বরণ কর্মকার, ডেসটিনি এয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আকতার, ডেসটিনি নিহাজ জুট স্পিনার্সের চেয়ারম্যান এস সহিদুজ্জামান চয়ন, ডায়মন্ড বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান তপন, ডিএমসিএসএল’র সহসভাপতি মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান, সম্পাদক এসএম আহসানুল কবির (বিপ্লব), প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, সদস্য গোলাম কিবরিয়া (মিল্টন), মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন, ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের ডায়মন্ড এক্সিকিউটিভ জেসমিন আক্তার (মিলন) এবং ডেসটিনি গ্রুপের অ্যাডভাইসর মো. শফিকুল হক। ডেসটিনির দুর্নীতি অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি দল গঠন করে কমিশন। এ দলের সদস্যরা হলেন- দুদকের উপপরিচালক বেনজীর আহম্মদ, মাহমুদ হাসান, এসএমএম আখতার হামিদ ভূঞা, মো. মোজাহার আলী সরদার এবং সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *