চুয়াডাঙ্গায় চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলাচাষ : লেখাপড়ার পাশাপাশি চাষে আগ্রহী বেকার যুবকেরা

আলম আশরাফ/জহির রায়হান সোহাগ: চুয়াডাঙ্গায় চাষিদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তুলাচাষ। ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চাষিরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তুলাচাষ করেছেন। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হাইব্রিড জাতের তুলার পাশাপাশি দেশে উদ্ভাবিত উন্নত জাতের তুলাচাষ অর্থকরী ফসল তামাকের বিকল্প ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার চাষিরা। অল্প খরচে লাভজনক ও মাটির উপযোগী চাষ পদ্ধতি হওয়ায় অর্থকরী ফসল হিসেবে তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। এছাড়া বেকারত্বে খাতা থেকে নাম কাটাতে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক লেখাপড়ার পাশাপাশি তুলা চাষে মনোযোগী হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত বছরের তুলনায় এবার তুলার ফলন তুলনামূলক বেশি। তবে বপন সময়ে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং গত বছর দরপতনে এবছর তুলার আবাদ কিছুটা কম হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, গত বছর চুয়াডাঙ্গা জেলার ১২টি ইউনিটে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ হাজার ৪শ হেক্টর এবং অর্জন হয়েছিলো ২ হাজার ৬শ ৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় চাষ হয়েছিলো ৬শ ৯৪ হেক্টর, দামুড়হুদায় ৮শ ৭৩ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ২শ ২ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় ৮শ ৮৯ হেক্টর। এবছর জেলায় তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২ হাজার ৬শ ৮০ হেক্টর যা গত বছরের তুলনায় ৯৫ হেক্টর কম। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় চাষ হয়েছে ৭শ ১২ হেক্টর, দামুড়হুদায় ৮শ ৫৭ হেক্টর, আলমডাঙ্গায় ১শ ৭১ হেক্টর এবং জীবননগর উপজেলায় ৮শ ২৩ হেক্টর। শীত আসলেই বাড়ে তুলা ও গড়ম কাপড়ের চাহিদা। অর্থকারী ফসল হিসেবে তুলাকে বেছে নিয়েছে চাষিরা। চাষিদের পাশাপাশি বেকার শিক্ষিত যুবকেরা তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। নতুন জাতের সিবি ১৪ ও রুপালি হাইব্রিড-১ জাতের তুলার চাষ করে লাভবান হচ্ছে চাষি। বস্ত্রখাতের প্রধান কাঁচামাল তুলা এবং শীত বস্ত্রের অধিক চাহিদার ফলে বাড়ছে তুলার সরবরাহ। দেশের তুলার মোট চাহিদার ৩-৫ ভাগ দেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাকি চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয় তুলা। দেশে উৎপাদিত তুলা আন্তর্জাতিক মানের হলেও জমির পরিমাণ কম হওয়ায় অনেক বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে দিন দিন বাড়তে থাকে তুলার দাম ও চাহিদা। এছাড়া তুলার কোনো কিছুই ফেলা যায় না। বহুবিধভাবে এর ব্যবহার হয়। প্রতি মণ তুলায় ২৮ কেজি তুলা বীজ ও ১২ কেজি ফ্রেশ তুলা থাকে। তুলা বীজ ভোজ্য তেল ও গ্লিসারিন হিসেবে ব্যবহার হয়। প্রতি কেজি তুলা বীজে অপরিশোধীত ৬০০ গ্রাম তেল উৎপন্ন হয় এবং পরিশোধন করলে ৪০০ গ্রাম ফ্রেশ ভোজ্য তেল পাওয়া যায়। এছাড়া তুলার গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা বুজরুকগড়গড়ি এলাকার চাষি আবু বক্কর জানান, এ বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে তুলার আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয় এবং গড়ে বিঘা প্রতি ১৫ মণ তুলা উৎপন্ন হয়ে থাকে। তুলার এবছর ২১শ টাকা মণ হিসেবে মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার যা গত বছরের তুলনায় ১শ ৮০ টাকা বেশি।
এছাড়া বেকারত্ব দূর করতে বর্তমানে যুব সমাজের অনেকে ঝুঁকেছেন তুলা চাষে। এমনই এক যুবক হুমায়ুন কবির। লেখাপড়ার পাশাপাশি এবছর ১০ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন তিনি। তিনি মাথাভাঙ্গাকে জানান, লাভজনক হওয়ায় এখন ব্যাপক হারে তুলাচাষ করা হচ্ছে। তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ নিয়ে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলাচাষ করে দেশে বেকারত্বের হার কমাতে যুব সমাজকে অগ্রহী হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা খন্দকার এনামুল কবির জানান, দেশের মোট চাহিদার ৯৭ ভাগ তুলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এজন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে থাকে। তবে পরিকল্পিতভাবে তুলা উৎপাদন করতে পারলে চাহিদার কমপক্ষে ২০ ভাগ উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়া মাটির জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে তুলা চাষ করে মাটির উর্বরতা শক্তিও রক্ষা করা যায়। তবে স্বল্প মেয়াদি, পোকা মাকড় প্রতিরোধী হাইব্রিড জাতের বীজ এবং চাষিদের কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করলে আগামীতে চাষিরা তুলাচাষে অধিক আগ্রহ হতে পারে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তুলার বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে চাহিদার ২০ ভাগ তুলা এ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি।