চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাট ট্রাজেডি দিবস আজ

উজ্জ্বল মাসুদ: আজ ২৬ জানুয়ারি, চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাট ট্রাজেডি দিবস। ১৯৭৯ সালে আজকের এদিনে চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটে ঘটে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। ওইদিন বেলা ১টা ২০ মিনিটে খুলনা থেকে পার্বতীপুরগামী রকেট মেইল ট্রেনটি চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটে পৌঁছুলে দুর্ঘটনাকবলিত হয়। সরকারি হিসাবে এ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিলো ৭৪। বেসরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৫ শতাধিক। আহত হয়েছিলো কয়েকশ’ যাত্রী। এ দুর্ঘটনার আগে ১৯৪০ সালে একই স্থানে ট্রেন দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন মারা যায়। ১৯৭৯ সালের ৩০ অক্টোবর একই স্থানে ঘটে আরেকটি ট্রেন দুর্ঘটনা। ১৯৮০ সালের ১০ আগস্ট এখানে আবারো ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা যায় ৪ জন।
দীর্ঘ ৩৭ বছর পরও ওই পথটি ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। একই স্থানে ৩ কিলোমিটার রেললাইন এখনো ঝুকিপূর্ণ। ফলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাইদঘাট গ্রামটি চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। ওই গ্রামের ওপর দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-কোলকাতা রেললাইন। এখানকার রেললাইন ধনুকের মতো বাঁকা। রেললাইনের দু পাশে নিচু জমি। এ রেলপথে ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রী ট্রেনটি চলাচল করে। এছাড়াও প্রতিদিন এ পথে ১৮টি যাত্রীবাহী এবং বেশ কয়েকটি মালবাহী ট্রেন চলাচল করে থাকে। রেলপথটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশ আমলের পর থেকে এ স্থানে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়নি। ফলে সবসময়ই ঝুঁকির মধ্যে থেকেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার গাইদঘাট এলাকার রেলপথ।
১৯৭৯ সালের ২৬ জানুয়ারি গাইদঘাটে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর ১৯৮১ সালে এখানে গাইদঘাট রেলওয়ে স্টেশন ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। গাইদঘাট স্টেশনকে ঘিরে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। কিন্তু এ স্টেশন থেকে আশানুরূপ আয় না হওয়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর পরই স্টেশনটি বন্ধ ঘোষণা করে। স্টেশনের টিনশেড ভবনটি এখনো ওখানে আছে। তবে ভবনের জানালা-দরজাসহ মূল্যবান অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গাইদঘাট এলাকার রেললাইন পরিদর্শন করে দেখা যায়, ১৯৭৯ সালের দুর্ঘটনা স্থানের খুব কাছে রেল দিয়ে ওয়াল তৈরি করে মাটি ধসে পরা রোধ করা হয়েছে। আরো দু একটি স্থানে মাটি দিয়ে ভাঙন ঠেকানো হয়েছে। রেললাইনের পাশে গাছপালা থাকায় দূর থেকে কিছু দেখা যায় না। এসব কারণে এখানে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। স্মৃতিসৌধটিও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, এখানে স্টেশন চালু হওয়ার পর এলাকাটি ছিলো জমজমাট। এখানে গুড়ের হাটও বসতো। স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এখানকার মানুষের ট্রেনে উঠতে হলে ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চুয়াডাঙ্গায় যেতে হয়। লোকসংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এখানে স্টেশন হলে রেল কর্তৃপক্ষের লোকসান হওয়ার কথা নয়।
শুধু গাইদঘাটবাসীর কাছেই নয়, চুয়াডাঙ্গাবাসীসহ দেশের অনেকের কাছেই ২৬ জানুয়ারি একটি কষ্টময় দিন। ওই দুর্ঘটনায় আহত অনেকে এখনো পঙ্গুত্ব বরণ করে বেঁচে আছেন। তারা বিশেষ এদিনে গাইদঘাটে এসে ঘুরে যান, নীরবে চোখের পানি ফেলেন। ওই দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া অনেকের পরিবার-পরিজনও এখানে আসেন। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় কোনো সংগঠন দিবসটি পালনের জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে না। এলাকাবাসী দিবসটি সরকারিভাবে পালনেরও দাবি তুলেছে।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার ফজলুল করিম দুর্বল রেললাইনের কথা স্বীকার করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এলাকাবাসীর দাবির বিষয়ে জানানো হবে বলে জানান তিনি।