গাংনীতে ভারতীয় ৩টি ঘোড়াসহ তিনজন আটক

???????????????????????????????

 

গাংনী প্রতিনিধি: কোলকাতায় দুলদুলের আর দাম নেই। ভাড়ার অভাবে কুচয়ানরা তাদের ঘোড়ার খোরাক জোগাতে না পেরে ছেড়ে দিচ্ছে, বদলে নিয়েছে নিজেদের পেশা। দুল দুল তথা ঘোড়া? বেধে রেখে চোখের সামনে কি অনাহারে থাকা ঘোড়ার দিকে তাকানো যায়? তাইতো কচুয়ানরা তাদের আদরের ঘোড়ার বাধন খুলে দিতে শুরু করে। আর এরই মাঝে চোরাচালান চক্র চাতুরাতার সাথে বেওয়ারিশ ঘোড়া ধরে বাংলাদেশে পাচার করছে। বিনিময়ে পাচ্ছে কড়কড়ে নোট। যে ঘোড়া এক সময় টম টম টানতো দুলে দুলে, সেই সুবাদে কচুয়ান যার নাম দেয় দুলদুল, সেই দুল দুল তখন চড়া দামের হলেও এখন সুধু সস্তাই নয়, পথে ঘাটে ঘুরছে বহু বেওয়ারিশ।

ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা তিনটি ঘোড়া দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর হয়ে গাজীপুরের পথে গাংনীতে ধরা পড়েছে। একই সাথে আটক করা হয়েছে পাচারকারী তিনজনকে। ঘোড়াসহ তিনজনকে আটকের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দুল দুল তথা ঘোড়ার  দুর্দশাগ্রস্থতার চিত্র আলোচনায় উঠে আসে। ঘোড়াসহ তিন পাচারকারী ধরাপড়ার খবর পেয়ে অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছ্নে, ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে কাপড়, মসলা, মাদক ও গরু আসার ঘটনা সবার জানা। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে এসব ভারতীয় পণ্য চোরাচালান নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। এবার ওই চোরাচালানের সাথে যুক্ত হয়েছে ঘোড়া। ঘোড়দৌঁড়ের ব্যবহারের জন্য এবার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আনা হয়েছে ৩টি ঘোড়া। গতকাল বুধবার সকালে মেহেরপুর গাংনী থেকে ট্রাকে ৩টি ঘোড়াসহ চোরাচালানী সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। চুয়াডাঙ্গার ভারতীয় সীমান্ত থেকে ট্রাকযোগে গাজীপুর নেয়ার পথে এগুলো উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

আটককৃতরা হচ্ছে ট্রাকচালক চুয়াডাঙ্গার সুমিরদিয়ার বজলুর রহমান (৩৫), ঘোড়া মালিকের প্রতিনিধি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের তোফাজ্জেল হোসেন (২০) ও কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আলম হোসেন (৪৫)। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, ভোরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার আকুবপুর থেকে একটি ট্রাক (যার নং দিনাজপুর-ট-১১-০০৬৮) গাজীপুরে যাওয়ার সময় ট্রাকসহ তিনটি ঘোড়া ও চালকসহ তিনজকে আটক করা হয়। থানায় তিনজকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘোড়া সংগ্রহ ও এর মালিক সম্পর্কে তথ্য দেয় আটকৃতরা।

আটককৃতরা জানায়, গাজীপুরের স্বপ্নরেখা বাগানবাড়ীর মালিক শাহরিয়ার আহম্মেদ ঘোড়ার প্রকৃত মালিক। সেখানে ঘোড়দৌঁড়ের জন্য ঘোড়া ৩টি নেয়া হচ্ছিলো। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্ত থেকে গত মঙ্গলবার বিকেলে ঘোড়া ৩টি কেনা হয়। পরে চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড়ের বাপ্পি মিয়ার ট্রাক ভাড়া করে তারা গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়।

এদিকে ঘোড়ার মালিক শাহরিয়ার আহম্মেদ মোবাইলফোনে ঘোড়া ক্রয়ের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বলে সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর ও দাবি করা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। তবে গতরাত ১০টার দিকে এ সংবাদ লেখার সময় পর্যন্ত কোনো কাগজপত্র প্রেরণ করেননি শাহরিয়ার আহম্মেদ। আটক তিন জন ও ট্রাকসহ ঘোড়া ৩টি গাংনী থানা হেফাজতে রয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যদি বৈধভাবে আমদানী করা হতো তাহলে ট্রাক চালকের কাছে কাগজপত্র পাওয়া যেত। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ হয়ে ঢাকার সহজ সড়ক বাদ দিয়ে প্রায় ৭০কিলোমিটার ঘুরে মেহেরপুর  জেলা হয়ে কেন গাজীপুরের উদ্দেশ্যে যাওয়া হচ্ছিল সে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি আটকৃতরা।

নিয়মানুয়ায়ী ঘোড়া ও উট কাস্টমস হয় না। ঘোড়া ও উট কোন দেশ থেকে কিনতে হলে বৈধ আমদানি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রয় করতে হয়। সেক্ষেত্রে যশোরের বেনাপোল ছাড়া এ অঞ্চলে কোন স্থল বন্দর নেই। কাজেই বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে আমদানী করা হয়ে ঘোড়ার ট্রাকটি যশোর থেকে যমুনা ঢাকার পথে যাওয়ার কথা। চুয়াডাঙ্গা ক্রয় করে মেহেরপুর হয়ে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার বিষয়টি ঘোড়া আমদানীর বৈধ কাগজপত্র নেই বলেও প্রতীয়মান হয়।