খালে বাঁধ : মুজিবনগরের রতনপুর এলাকাবাসীর ভয়াবহ দুর্ভোগ

বর্ষার বৃষ্টি : মিরপুরে মাটির ঘরের দেয়াল পড়ে শিশুর মৃত্যু

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: গ্রাম বাংলায় পানি নিষ্কাশনের পথে অবৈধ দখলদারি বা বাঁধের কারণে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বহু এলাকায় জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। একই সাথে জলমগ্ন হয়ে বহু বিঘা জমির আবাদ বিনষ্ট হচ্ছে। চলতি বর্ষায় বৃষ্টি হতে না হতেই এ দশা ফুটে উঠেছে। অপরদিকে কুষ্টিয়া মিরপুরের বালিয়াশিশা গ্রামে মাটির ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ভালাইপুর এলাকার ভাইমারা খালে বাঁধ দেয়ায় পানি নদীতে নামতে না পারার কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দামুড়হুদায় পায় নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিশাল এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কার্পাসডাঙ্গার কোমরপুরের চিত্রও গতকাল পত্রিকার পাতায় উঠে আসে। এসবের চেয়েও ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে মেহেরপুর মুজিবনগরের টুপলার খালে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করার কারণে তারানগরসহ পাশের গ্রামের বহু আবাদ, আবাস ডুবে গেছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকড করা হয়।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়ের রতনপুর এবং তারানগর গ্রামের মাঝা-মাঝিতে অবস্থিত টুপলার বিলের পানি নিষ্কাশন খালের ওপর অবৈধ বাঁধ দিয়েছে কয়েকজন সুবিধাবাদী। এতে তলিয়ে গেছে কয়েকশ বিঘা জমির ধান। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। রতনপুর গ্রামের কৃষক হাসিবুল জানান, বিলের পানি নিষ্কাসনের জন্য টুপলার বিল হতে রতনপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে ভৈরব নদী পর্যন্ত একটি খাল আছে। যাতে ভারী বর্ষণ হলেও কোনো আবাদি জমির ধান-পাট বা অন্য কোনো ফসলের ক্ষতি না হয়। ভারী বর্ষণে ফলে বিলের পানি বেড়ে গেলেও ওই খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে ভৈরব নদীতে গিয়ে পৌঁছায়। কিন্তু এখন বিল মালিকরা খালের ওপর অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে পানি বন্দি করে রেখেছে। এতে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তলিয়ে গেছে কয়েকশ বিঘা জমির ধান।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার মিরপুরে মাটির ঘরের দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে তানিয়া (৪) নামের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নিজ বাড়ির শয়নকক্ষের কাঁচা ঘরের দেয়াল ধসে পড়লে ওই শিশু চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিথলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন পিস্তুল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কয়েকদিন যাবত লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে ওই বাড়ির কাঁচা ঘরের দেয়াল ধসে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সে উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের বালিয়াশিশা গ্রামের জয়নাল শাহ’র মেয়ে বলে জানা গেছে।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ার খাপাড়ায় পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ২শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বর্ষা মরসুমে মহল্লাবাসীসহ খাপাড়া জামে মসজিদের মুসল্লিদের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বসতি এলাকা ও রাস্তা পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ায় নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোররা নোংরা আর্বজনাভরা দূষিত হাটু পানি ভেঙে যাতাযাত করছে। পানিবন্দি পাড়ার কাঁচাপাকা ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছে। যেকোন মুহূর্তে ঘরবাড়ি ধসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আংশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নোংরা ও দূষিত পানি আটকে থাকায় পরিবেশ দূষণের ফলে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে আন্দুলবাড়িয়া ইউপির ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, জনদুর্ভোগের কারণে গত কয়েক বছর ধরে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করে উপজেলা পরিষদে জমা দৈয়া হয়েছে। অজ্ঞাত কারণে অনুমোদন মেলেনি।