কামারুজ্জামানের ফাঁসি ঠেকাতে মরিয়া জামায়াত

 

স্টাফ রিপোর্টার: দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসি ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। দেশে উচ্চ পর্যায়ে নানামুখী তদবির ব্যর্থ হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছে তারা। নেতারা ছুটছে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখছেন তারা। এর মধ্যে ফলও পেতে শুরু করেছেন বলে দাবি করেছেন জামায়াত নেতারা। এর অংশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাঁসির রায় হওয়ার আগে থেকেই ইতিবাচক কিছু পাওয়ার আশায় বিভিন্ন পর্যায়ের দেনদরবার করেছে যুদ্ধাপরাধী নেতানির্ভর দল জামায়াত। ইতিহাসের সবচেয়ে অমানবিক ঘটনার পক্ষে অবস্থান নেয়ার মতো দেশের কাউকে তেমনভাবে তারা কাছে পায়নি। এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তদবিরের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়েছে তারা। দলের এক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক অনেক আগে থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেনদরবার করতে বিদেশে অবস্থান করছেন। এছাড়া মৃত্যুদ- সমর্থন করে না এমন মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে জামায়াত নেতারা যোগাযোগ করেছেন। এর ফল হিসেবে এসব সংগঠন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছে।
মৃত্যুদ- স্থগিত চাওয়া রাষ্ট্র ও সংগঠনের মধ্যে রয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (৩ নভেম্বর), ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস (আইসিজে), ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি মানবাধিকার সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভেবুরি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি মুখপাত্র, সুইডেনের পররাষ্ট্র-বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস ও রোমভিত্তিক নো পিস উইদাউট জাস্টিস, জাতিসংঘের সামারি এক্সিকিউশন-বিষয়ক বিশেষ দূত (স্পেশাল ৱ্যাপোর্টিয়ার) ক্রিস্টফ হেনস ও ইন্ডিপেন্ডেন্স অব জাজেস অ্যান্ড লইয়ার্স-বিষয়ক বিশেষ দূত গ্যাব্রিয়েলা নাউল, ব্রিটিশ হাউজ অব লর্ডসের সদস্য লর্ড কার্লাইল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং যুদ্ধাপরাধ-বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত স্টিফেন জে ৱ্যাপ।

জামায়াত সূত্রে বলা হয়েছে, প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংগঠনের অনুরোধের লিখিত বক্তব্যে ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও সার বিষয়বস্তু হচ্ছে, মৃত্যুদ- স্থগিতের আহ্বান। সূত্রমতে, আন্তর্জাতিক পর্যায় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করেছে জামায়াত। ক্ষমতাসীন দল ও সরকারী পর্যায়ে দেনদরবার করে তেমন কোনো ফল পায়নি তারা। তবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তাদের দাবি যৌক্তিক বলে ফাঁসি রুখতে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছে। তবে অনেক চেষ্টা করেও জামায়াত দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে ফাঁসির বিরুদ্ধে কোনো কথা বলাতে রাজি করতে পারেনি। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিংয়ের কারণে প্রধান মিত্র বিএনপির বিদেশের দুই-একটা শাখা থেকে এই রায় নিয়ে কথা বলতে শোনা গেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির প্রবাসী নেতাকর্মীদের এক সমাবেশ থেকে এই বিচার বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।

জামায়াতের প্রভাবশালী এক নেতা জানান, ফাঁসি ঠেকাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে যাবেন তারা। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া অন্য যত প্রক্রিয়া আছে সবই প্রয়োগ করা হবে। যেমনটি করা হয়েছিল কাদের মোল্লার ফাঁসির আগে। প্রথম পর্যায়ে একদিনের জন্য হলেও ফাঁসি ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল। তিনি জানান, জামায়াত একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংগঠন। বাংলাদেশ শাখার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতার ফাঁসি ঠেকানোর কার্যক্রম শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে না।
জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যে যেখানে হত্যার বদলে হত্যা আইন চালু আছে, তাদের কাছেও ফাঁসি ঠেকাতে ধরনা দিচ্ছেন জামায়াত নেতারা। ধর্মভিত্তিক সংগঠন হওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি সূত্রটির। তাদের আরো দাবি, মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাবশালী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, ফাঁসি হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশে। এজন্য শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য থেকেও ইতিবাচক ফল পাওয়ার আশায় আছে জামায়াত।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৩ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বছরের ২ অক্টোবর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ৪ জুন ট্রাইব্যুনাল-২ তার বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠন করে। গত বছরের ৯ মে ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিলে ৬ জুন তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করেন। গত ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। এরপরই সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয় রিভিউ আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। যে সুযোগ পাননি এর আগে মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাও। কিন্তু এরপরও কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনা করাতে রিভিউ আবেদন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার আইনজীবীরা। আইনের সব খুঁটিনাটি বিষয় দেখে সামনের দিকে অগ্রসর হতে চান তারা।